২০ দলীয় জোটের অন্য সব দল যাতে একই নাম দেয় সেই চেষ্টা করছে বিএনপি
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটির তরফ থেকে একত্রিশটি দলের কাছে নাম চাওয়া হয়েছে। এই নাম দেওয়া না দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসন স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান লন্ডনে থাকলেও সেখান থেকে দলের চেয়ারপারসনকে মতামত দিয়েছেন। নাগরিক সমাজের যারা সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন সোমবার বিকালে তাদের মাধ্যমে যাতে জাতির ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হয় সেটাই চাইছেন। তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান চাইছেন যে বারো জনকে সার্চ কমিটি ডেকেছে। এরমধ্যে যারা নিরপেক্ষ, তারা জনগণের পছন্দের নাম দিবেন। যারা কমিশনার হলে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবেন। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারবেন। রকিব মার্কা কমিশন হিসাবে কাজ করবে না এমন কমিশন চাইবেন। সব দলের অংশগ্রহণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারবেন তাদের নাম বলবেন। এই জন্য নাগরিক সমাজের ব্যক্তিরা সার্চ কমিটির কাছে কি বলেন এবং কি পরামর্শ দেন তাও দেখতে চাইছেন।
সূত্র জানায়, বিএনপির তরফ থেকে নাম দেওয়ার বিষয়ে অনাগ্রহ রয়েছে। এই কারণে তারা যে বারো জন সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তাদের মধ্যে যারা নিরপেক্ষ ও বিএনপি ঘরণা তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় বিএনপি। তাদের মাধ্যমেই যাতে বিএনপির, বিশ দলীয় জোটের ও দেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয় সেই চেষ্টা করবে। এই জন্য বিএনপি তাদের অনেকের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলবেন। এছাড়াও সার্চ কমিটির সঙ্গে তাদের বৈঠকের পর বিএনপি এনিয়ে বৈঠকও করতে পারে। এই সব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বিএনপি আজকের দিনটি সময় নিতে চাইছে। মঙ্গলবার বেলা এগারোটার আগেই খালেদা জিয়া তার সিদ্ধান্ত নিবেন।
বিএনপির সূত্র জানায়, যদিও সব দলের কাছে নাম চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও খালেদা জিয়া সিদ্ধান্তটা জোটগতভাবে নিতে চান। বিএনপি নাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে জোটের সদস্য সব দল নাম দিবে এবং একই নাম দিবে। কিন্তু বিএনপি নাম না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে, জোটের অন্য দল যদি নাম দেয় তাহলে একই নাম দিবেন। আর না হলে সবাই একযোগে নাম দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। তবে এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে আজ।
সার্চ কমিটি একত্রিশটি দলের কাছে সম্ভাব্য নির্বাচন কমিশনার হিসাবে ৫ জন করে নাম চেয়েছে। এরমধ্যে বিএনপিও একটি দল। বিএনপির কাছেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়া হয়। রোববার সকল দলের কাছে ওই চিঠি পাঠানো শুরু হয়। বিএনপির চিঠি পাঠানো হয়েছে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল ওয়াদুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে হাতে সময় মাত্র একদিন। মঙ্গলবার বেলা এগারোটার মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে ৫টি নাম পৌঁছে দিতে হবে।
বিএনপির তরফ থেকে নাম না দেওয়ার ব্যাপারেই ভাবছে নীতি নির্ধারকরা। কারণ তারা মনে করছেন নাম দেওয়া হলে দলীয়ভাবে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে করা সার্চ কমিটিকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। আর এতে করে তারা এতোদিন যে কথা বলছিল সার্চ কমিটির ব্যাপারে সেটার সঙ্গেও বিরোধিতা হয়ে যাবে। আবার দলের একাধিক নেতা মনে করছেন, নাম দেওয়া যেতে পারে। এই অবস্থায় খালেদা জিয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকেন। রোববার রাত নয়টা বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে নাম দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করে তিনি দলের নেতাদের মতামত নেন। বেশিরভাগ নেতা নাম দেওয়ার পক্ষে মত দিলে বিষয়টি নিয়ে খালেদা জিয়া ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠক করবেন জোট নেতাদের সঙ্গে। জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার পর তারা যে মত দিবেন এর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন। জোটের বৈঠক সোমবার হতে পারে।
বিএনপির সূত্র জানায়, বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির যে কজন সদস্য জীবিত রয়েছেন ও দেশে অবস্থান করছেন তারা সবাই অংশ নেন। তারেক রহমান বিদেশে থাকায় বৈঠকে অংশ নিতে না পারলেও তিনি তার মতামত দলের চেয়ারপারসনকে জানিয়ে দিয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ একজন নেতা বলেন, বিএনপি এখন খুব সতর্কভাবে পথ চলছে। কোনো ধরনের ভুল করতে চাইছে না। সরকার ও আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ফাঁদে ফেলতে নানা উপায় বের করছে ও পথ তৈরি করছে। এই অবস্থায় বিএনপি এগুলো এড়িয়ে জনগণকে পাশে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাইছে। বিএনপি চায় শান্তিপূর্ণ সমাধান। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম