নাম প্রস্তাব দিবেন সুপারিশ করবেন অনলাইনে জনমত নেওয়ার অনেক আশা নিয়ে আজ বিশিষ্ট নাগরিকরা যাচ্ছেন সার্চ কমিটির বৈঠকে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: সার্চ কমিটির কাছে অনেক আশা নিয়ে আজ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বৈঠক করতে যাচ্ছেন। বৈঠকে ১২জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সবাই যাচ্ছেন কিনা এই বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মনে করছে, যাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তারা সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে আসবেন এবং বৈঠকে অংশ নিয়ে সুচিন্তিত মতামত দিবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিশিষ্ট ১২ নাগরিককে ফোন করে তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয় শনিবার। পরে রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্র জানায়, আমন্ত্রিতদের শনিবারই ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হয়। বিশিষ্টজনদের সঙ্গে হুদা কমিশনের তিনজন কমিশনারকেই ডাকা হয়েছে। ওই তিনজনের কমিশনের আমলে যেসব নির্বাচন হয়েছে সেই সব নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো বিতর্ক নেই। তবে বিএনপির অভিযোগ ওই কমিশন ওয়ান ইলেভেনের সময়ের ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিনদের সঙ্গে যোগসাজশ করেই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে। এটা বেগম খালেদা জিয়া নিজেও বলেছেন। বলেছেন আমার সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেছে কিন্তু রাজি হইনি।
সূত্র জানায়, ওই কমিশনকে ডাকা হয়েছে কারণ তারা নির্বাচন কমিশনের কাজ করা, কমিশনের সীমাবদ্ধতা, কেমন কমিশন হওয়া উচিত, সদস্য সংখ্যা পাঁচ হলে কি সুবিধা আর তাদের সময়ে তিন হওয়ায় কি সুবিধা ও অসুবিধা ছিল সেগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত বলেন, আমি এর আগেও বলেছিলাম রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন ও কমিশন গঠন করার জন্য অভিজ্ঞ ও বিশিষ্টজনদের মতামত নিতে পারেন। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠনের সময়ে বসেননি। কিন্তু সার্চ কমিটি এখন বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বসছেন। সেই সঙ্গে আমাদের কমিশনের সঙ্গে বসছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের মধ্যে আমাদের কমিশনটি এযাবত কালের সবচেয়ে সফল ও বিতর্কমুক্ত কমিশন। সেই হিসেবে তারা আমাদের ডেকেছেন। আমরা আমাদের মতামত দেব।
তিনি বলেন, আমি মনে করি কমিশন পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট না করাই ঠিক হবে। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিশন করলে তা বর্তমান কমিশনের মতোই হবে। কিন্তু বর্তমান কমিশনের কর্মকা- বিচার করলে ও ভূমিকা বিচার করলে এটা বলা যায় তাদের তেমন কোনো সাফল্য নেই। তারা ৫ জানুয়ারির মতো একটি নির্বাচন করেছে। তাদের বেশিরভাগ নির্বাচনই বিতর্কিত। এই কারণে তিনজনের কমিশন করার জন্য আমার প্রস্তাব থাকবে।
আরও একজন অতিথি বলেন, যদি চায় সার্চ কমিটি জনমত যাচাই করতে পারে। এই জন্য অনলাইনে ভোট নেওয়া যেতে পারে। তাতে বোঝা যাবে জনগণ কি চায়। এটা করা হলে বিরোধী রাজনৈতিকদলগুলোও তখন কিছু করতে পারতো না। বিশিষ্ট নাগরিকরা তার কাছে মত দিবেন সেই মত গ্রহণ করে যদি সার্চ কমিটি কাজ করে তাহলে ভালো। তা না করে যদি তারা মনে করেন এটা কেবল বসার জন্য বসছেন তাহলে ঠিক হবে না। কারণ বিষয়টি যাতে লোক দেখানো না হয়। লোক দেখানো হলে সেটি হবে খুব দুঃখজনক।
জানা গেছে, বিশিষ্ট নাগরিকদের কেউ কেউ প্রস্তাব দিতে পারেন যেসব নাম রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে আসবে, বিশিষ্ট নাগরিকদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে এবং সার্চ কমিটি যেসব নাম আলোচনা করবেন সেই সব নাম কেন প্রস্তাব করা হয়েছে, কোন বিবেচনায় তাদেরকে কমিশনার করা দরকার এছাড়াও যেসব নাম পাওয়া যাবে ওই সব নামের তালিকা প্রকাশ করার প্রস্তাব দিতে পারেন। ওই নাম প্রকাশ করার পর সেই সব নামের উপর অনলাইন ভোটিংয়ের মাধ্যমে জনমত নেওয়া যেতে পারে।
যারা আজকে বৈঠকে যাবেন এরমধ্যে রয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যামিরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, একই বিভাগের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)- এর নির্বাহী পরিচালক বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমদ।
এই নয়জন ছাড়াও গত নির্বাচন কমিশনের তিনজনকে ডাকা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সার্চ কমিটি তাদের মতো করে কাজ করছেন। তারা নাম চেয়েছে, বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই অবস্থায় তারা বিভিন্ন দলের কাছ থেকে নাম নিয়ে বিশিষ্ট জনদের সঙ্গে কথা বলে তারা তাদের মতো করে নাম দিবেন। রাষ্ট্রপতির কাছে দশটি নাম দেওয়ার পর এরমধ্যে থেকে পাঁচজনকে নিয়োগ করা হবে। কমিশন ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে গঠন করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমান কমিশন ৯ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নিয়েছিল। সেই হিসাবে ৮ ফেব্রুয়ারি তাদের চারজনের মেয়াদ পূর্তি হচ্ছে। একজনের পূর্তি হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসাবে ৮ ফেব্রুয়ারি নতুন কমিশনকে দায়িত্ব দিতেই হবে এবং তারা দায়িত্ব নিবেন এমন বাধ্যবাধকতা নেই। আগে নাম পেলে আগেই নিয়োগ দেওয়া হবে। সেই হিসাবে ৮ ফেব্রুয়ারি চারজন দায়িত্ব নিতে পারবেন। আর পরে একজন নিবেন। আর যদি কমিশন করতে সময় লাগে তাহলে ৮ ফেব্রুয়ারির পরে দায়িত্ব নিবেন। এতে কোনো সমস্যা হবে না। সম্পাদনা: শাহানুজ্জামান টিটু