ইসমাঈল হুসাইন ইমু: চিকন লাঠির মাথায় কাগজ গুজে দিয়ে গ্রিলের শিকের মধ্যে ঢোকানো হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আবার ওই লাঠি ফিরে আসছে বার্তা নিয়ে। কখনো টাকা দরকার আবার কখনো টাকা গুজে দেয়া হচ্ছে ভিতর থেকেই। বাইরে অপেক্ষমান লোকরা তার কাক্সিক্ষত লোকের সঙ্গে এভাবেই কথাবার্তা ও টাকা আদান প্রদান করছেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে দর্শনার্থীদের কক্ষের এ দৃশ্য প্রতিদিনের।
গতকাল উত্তরা থেকে মামুন ও তার পরিবারের সদস্যরা, মিরপুর থেকে সাজ্জাদ ও তার ভাইবোন, নারায়ণগঞ্জ থেকে বাহাদুর মল্লিক, পুরান ঢাকার বাসিন্দা সালমা বেগমসহ আরও বেশকজন বন্দির সাক্ষাৎ প্রত্যাশীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা দর্শনার্থী কক্ষে ভালভাবে কথা বলতে পারেন না অন্য লোকজনের চিৎকার চেচামেচির কারণে। তাই নতুন এই পদ্ধতি শিখিয়েছে বন্দিরাই। বিশেষ করে কাক্সিক্ষত বন্দির নাম ঠিকানা ভিতরে পাঠানো হলে কোনো না কোনো রাইটার (কয়েদি) ওই বন্দিকে তার ওয়ার্ড থেকে ডেকে আনেন। পরে তার স্বজনের সঙ্গে
সাক্ষাতের সুযোগ করিয়ে দেন।
ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে তেঘরিয়া এলাকায় কারাগারের দিকে এগোতেই বেশকজন মধ্যবয়সী লোক এগিয়ে আসলেন। তারা বলেন, কি ভাই দেখা করবেন,ভিতরে মাল পাঠাইবেন না ভিআইপি সাক্ষাৎ করবেন? এমন হাজারো প্রশ্নের জবাব দিতে হবে তাদের। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে স্থানীয় লোক বলে পরিচয় দেন। তবে কারারক্ষীরাও সাদা পোশাকে এ কা-ে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে গতকাল কোনো কারারক্ষীকে এমনভাবে কোনো বন্দির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়নি।
দর্শনার্থী কক্ষে কথা হয় ফরিদ নামের এক যুবকের সঙ্গে। তিনি কদিন আগে একটি মামলায় জামিনে বেরিয়েছেন। গতকাল তিনি অন্য বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। তিনি জানান, ভিতরে কোনো সমস্যা নেই। পুরান ঢাকায় কারাগারে সাধারণত: ওয়ার্ডে কাউকে দিলে প্রভাবশালী বা টাকা পয়সা খরচ করে ভাল ওয়ার্ডে থাকা বা খাওয়া দাওয়ার সুবিধা পাওয়া যেত। আর যারা এসব খরচ না করতে পারতো তারা খুবই কষ্টে থাকতো। এখানে রাইটারদের ম্যানেজ করে কোনো সিট ভাড়া নেয়া লাগে না। স্বাভাবিকভাবে যে ওয়ার্ড বরাদ্দ হয় তাতেই খুশি বন্দিরা।
ওই যুবক জানান, ভিতরে কারাগারের দেয়া খাবারের পাশাপাশি অনেকেই তাদের পছন্দের খাবার ভিতরে নিতে পারেন কারারক্ষীদের ম্যানেজ করে। এক্ষেত্রে রাইটাররা মধ্যস্থতা করে থাকেন। তবে ভিতরে খাবারের মূল্য অনেক বেশি। নতুন এই কারাগারের কাছাকাছি কোনো ক্যান্টিন বা হোটেল না থাকায় কারা ফটকের সামনের একটি দোকান থেকে বেশি মূল্যে খাবার কিনতে হয় দর্শনার্থীদের। তাছাড়া পিসির মাধ্যমে ভিতরের খাবারও বেশি মূল্যে কিনতে হয় বন্দিদেরও। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু