রামপাল প্রকল্প সুন্দরবনসহ উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনবে : প্রধানমন্ত্রীকে আনু মুহম্মদ
ডেস্ক রিপোর্ট: রামপাল প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিবৃতি দিয়েছে জাতীয় কমিটি। রোববার বিকালে জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহম্মদ তার ফেসবুক পেজে দেওয়া বিবৃতিতে বলেন, আমরা বহুবার রামপাল গেছি, যাওয়ার কারণেই আমরা আরও নিশ্চিত হয়েছি যে, রামপাল প্রকল্প সুন্দরবনসহ উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনবে।
তিনি বলেন, ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের রামপাল ঘুরে আসতে যাতে আমরা সুন্দরবন থেকে এই প্রকল্পের দূরত্ব বুঝতে পারি। প্রধানমন্ত্রীর অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, বর্তমান ডিজিটাল যুগে দূরত্ব জানার জন্য এলাকায় গিয়ে ফিতা দিয়ে মাপার দরকার হয় না, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসে এই দূরত্ব বের করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী যে দূরত্ব বলেছেন আমরা তা স্বীকার করি, এই দূরত্ব যে নিরাপদ নয়, তা বহুবার তথ্য-প্রমাণসহ আমরা উপস্থাপন করেছি। সরকারের আমন্ত্রণে এবং সরকারি আতিথ্যে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ দল এবং ইউনেস্কো টিম সুন্দরবন রামপাল এলাকা সফর করেছেন। কিন্তু এই সফর করে তাদের মত বদলায়নি, তারা সকলেই এই বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের কথাই বলেছেন। আমরা বহুবার রামপাল গেছি, যাওয়ার কারণেই আমরা আরও নিশ্চিত হয়েছি যে, রামপাল প্রকল্প সুন্দরবনসহ উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের রামপাল থেকে সুন্দরবন পদযাত্রা করতে পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা এই পরামর্শ গ্রহণ করলাম। আশা করি পুলিশ ও সরকারি দলের মাস্তান বাহিনী অন্যান্যবারের মতো এ যাত্রায় বাধা সৃষ্টি করবে না।
আনু মুহম্মদ জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা মানুষ নয় বাঘের কথা চিন্তা করছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বাঘ সম্মেলনে তিনিই বলেছিলেন, ‘বাঘ বাঁচলে সুন্দরবন বাঁচবে, সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে’। বাঘসহ অসংখ্য প্রাণের আধার হিসেবে সুন্দরবন অসাধারণ প্রাণশক্তি ধারণ করে। বন বেঁচে থাকা দরকার, জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা করা দরকার মানুষের জন্যই। ৩৫-৪৫ লাখ মানুষের জীবিকা, ৫ কোটি মানুষের জীবন নিরাপত্তা এই সুন্দরবনের উপরই নির্ভর করে।
আনু মুহম্মদ আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তির কথা বলেছেন। এ বিষয়েও আমরাসহ দেশ-বিদেশের বহু বিশেষজ্ঞ বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত দিয়ে দেখিয়েছেন কীভাবে এই প্রযুক্তি সুন্দরবন বাঁচাতে পারবে না। এর সীমাবদ্ধতার কারণেই এর চাইতে বেশি দূরত্বেও এনটিপিসি ভারতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করবার অনুমতি পায়নি। চীন-ভারতসহ বহু দেশ এসব কেন্দ্র বাতিল করছে। তিনি সম্প্রতি কয়লা ভরা জাহাজ ডুবির কথা বলেছেন। গত তিন বছরে বহু জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটেছে, সর্বশেষ ১ হাজার টন কয়লা নিয়ে জাহাজ ডুবেছে। এর যে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি তা নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা দেখা যায়নি, এগুলো উদ্ধার, ক্ষতি হ্রাস, এ ধরনের পরিবহণ বন্ধ করার বিষয়ে সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। রামপাল প্রকল্প হলে এই পথেই প্রতিদিন ১৩ হাজার টন কয়লার জাহাজ যাবে, আমাদের উদ্বেগ সে কারণেই আরও বেশি। সম্পাদনা: হাসিবুল ফারুক চৌধুরী