আজকালের মধ্যেই প্রকাশক দীপন হত্যার চার্জশিট
আজাদ হোসেন সুমন: আজকালের মধ্যে প্রকাশক দীপন হত্যা মামলার চার্জশিট যাচ্ছে আদালতে। দীপন হত্যার ঘটনায় ১৫ মাস পর চার্জশিট দিতে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আজকালের মধ্যে চার্জশিট আদালতে দাখিল করবেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দীপন হত্যা মিশনে অন্তত সাতজন সরাসরি অংশ নেয়। এদের মধ্যে পুরস্কার ঘোষিত দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত আরও তিন-চারজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাদের শিগগির গ্রেফতার করা হবে। ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, দীপন হত্যাকা-ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিম জড়িত। মেজর জিয়াকে হত্যাকা-ের প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও একই দিনে মোহাম্মদপুরে শুদ্ধস্বর প্রকাশনীতে হামলার ঘটনা ঘটেছিল। জঙ্গিরা সেখানে তিনজনকে কুপিয়ে আহত করে। দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাত আসামিদের মধ্যে প্রায় সবাইকেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এদের মধ্যে আবদুস সবুর ওরফে সামাদ ওরফে স্বাদ ওরফে সিফাত ও মইনুল হাসান ওরফে ইমরানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ইমরানকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুলিশের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এর আগে এই হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী মুকুল রানা গত বছরের ১৯ জুন টঙ্গির চেরাগ আলী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। বাকি আসামিদের গ্রেফতার করা সম্ভব না হলেও ইতোমধ্যে তাদের শনাক্ত করা গেছে।
এদিকে দীপন হত্যা মামলার চার্জশিট তৈরি সম্পর্কে আরেফিন দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, চার্জশিট কমপ্লিট হয়েছে শুনেছি। কবে দিবে সে সম্পর্কে কিছু জানেন না মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন আমার ছেলের হত্যাকারী যেই হোক ছেলের হত্যাকারীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা হোক। তিনি আরও বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তারা এক-দেড় মাস আগে মামলা সম্পর্কে জানতে আসে। ওই সময় দুজনকে গ্রেফতারের বিষয়টিও জানায়। সম্প্রতি অন্য মাধ্যমে চার্জশিট চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, দীপন হত্যার প্রায় সব আসামিকেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করার পর তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ওই জবানবন্দিতে দীপন হত্যার পুরো কাহিনী বের হয়ে এসেছে। চলতি সপ্তাহেই চার্জশিট আদালতে দাখিল করার কথা আছে।
২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের ১৩১ নম্বর কক্ষে জাগৃতি প্রকাশনীর অফিসে দুর্বৃত্তরা দীপনকে গলাকেটে হত্যা করে। ওই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি থানা পুলিশ অধিকতর তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক পরিদর্শক জানান, ২০১৫ সালে সারাদেশের বিভিন্নস্থানে মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। তারই ধারাবাহিকতায় শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে প্রকাশক দীপনকে ঘাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে জঙ্গিরা। পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে ওই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত আনসারুল্লাহ বাংলাটিম। ওই হত্যাকা-ে সরাসরি অংশ নিয়েছিল সবুর ওরফে ইমরান ওরফে সিফাত। সিফাতের বাড়ি সিলেটের বিয়ানিবাজার এলাকায়। সিফাত আগে জেএমবির সদস্য ছিল। সে মাওলানা সাইদুর রহমানের অনুসারী ছিল। জেএমবি দ্বিধাবিভক্ত হওয়ার পর সে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। পরে মাওলানা সাইদুর রহমানের গ্রুপের অন্য এক জঙ্গি আসিফের মাধ্যমে সিফাত আনসারুল্লাহ বাংলাটিমে যোগ দেয়। সিফাত এর আগেও একাধিক ব্লগার হত্যাকা-ে সরাসরি জড়িত ছিলো।
সিফাতের জবানবন্দি অনুযায়ী, দীপন হত্যাকা-ে হত্যাকারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল সিফাত। এ ছাড়াও ওই হত্যাকা-ের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেছে বলে ডিবি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজন জঙ্গির নাম বলেছে সে। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী গোয়েন্দারা অনুসন্ধান করছে এবং বাকি আসামিদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে বলেও গোয়েন্দা সূত্র দাবি করেছে। সূত্রের দাবি প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যার চার্জশিট মোটামুটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাক না হলে চলতি সপ্তাহেই আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করা হবে। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম