প্রধান বিচারপতির উদ্যোগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন ৫ কিশোর বিনা বিচারে আটক ১৪ জনের মুক্তি
আজাদ হোসেন সুমন: প্রধান বিচারপতির উদ্যোগে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন গাজিপুর কিশোর সংশোধনাগারে থাকা ৫ কিশোর, বিনাবিচারে আটক থাকা ১৪ জন পেয়েছেন মুক্তি। গাজিপুর কিশোরী সংশোধনাগার পরিদর্শন করে মামলার নথিপত্র তলব করেছেন।
জানা গেছে সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার উদ্যোগে জামিন পেয়েছেন পাঁচ এসএসসি পরীক্ষার্থী। এদের সকলেই টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের নিবাসী। চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও কুমিল্লার আদালত এই পাঁচ কিশোরের জামিন মঞ্জুর করে। হাইকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. সাব্বির ফয়েজ বলেন, কিশোরদের অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রধান বিচারপতি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশনার প্রেক্ষিতে মামলার নথি পর্যালোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে বন্দি থাকা কিশোররা এখন মুক্তি পেয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।
গত ২৫ জানুয়ারি গাজীপুরে কিশোরী এবং টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র আকস্মিক পরিদর্শন করেন প্রধান বিচারপতি। কিশোর-কিশোরীরা প্রধান বিচারপতিকে কাছে পেয়ে তাদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। অপরাধ না করেও বিভিন্ন মামলায় কাউকে কাউকে আসামি করা হয়েছে বলেও প্রধান বিচারপতিকে জানান উন্নয়ন কেন্দ্রের নিবাসী কিশোরীরা। এরপরই প্রধান বিচারপতি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরিদর্শনকালে প্রধান বিচারপতি ওই কেন্দ্রের নিবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি নিবাসীদের এ কেন্দ্রে আসার কারণ ও মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। পরে তিনি নিবাসীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও তাদের থাকার স্থান পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে প্রধান বিচারপতি কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিবেশ দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ককে সকল নিবাসীদের মামলার যাবতীয় তথ্য তার দফতরে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেন। কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আবুল ফজল মো. আমান উল্লাহ জানান, এ কেন্দ্রে ১৫০ জন নিবাসীর আসন রয়েছে। বর্তমানে ১০৯ জন নিবাসী রয়েছে। এর মধ্যে বিচারাধীন হত্যা মামলায় একজন, চুরি মামলায় একজন, মানব পাচার মামলায় দুজন, মাদকদ্রব্য আইনে একজন, সাজাপ্রাপ্ত একজন, ভিকটিম ৫২ জন এবং নিরাপদ হেফাজতি ৫১ জন। ইতোমধ্যে ৫ বছরের অধিক সময় ধরে বিনাবিচারে কারাবন্দি ১৪ জনকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে উচ্চ আদালত। সূত্র জানায়, প্রধান বিচারপতির নির্দেশে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের প্রতিটি কারাগারের প্রধানের কাছে বিনাবিচারে আটকদের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায়। কারা কর্তৃপক্ষের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে অতি সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে ১৪ জন কারা বন্দিকে জামিনে মুক্তি দেয় উচ্চ আদালত।
শ্যামপুরের একটি হত্যামামলায় বিনাবিচারে ১৭ বছর কারাগারে ছিলেন চান মিয়া সম্প্রতি প্রধান বিচারপতির উদ্যোগে সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এ প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে চান মিয়া বলেন, আমাকে অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরিয়ে এনেছেন প্রধান বিচারপতি। যতদিন বেঁচে থাকবো। তার জন্য দোয়া করবো। তিনি বলেন, এভাবে আর কোনো চান মিয়াকে যেন বিনা বিচারে কারান্তরীণ না থাকতে হয় সেদিকেও সুদৃষ্টি দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি নিবেদন জানান তিনি। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম