ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে : এনবিআর চেয়ারম্যান
হাসান আরিফ: নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তার পরিবার ও তার প্রতিষ্ঠিত ক্ষুদ্র ঋণ সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের আয়কর ফাঁকির বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল থেকে এই সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান, তদন্তসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে একজন পরিচালক ও একজন উপপরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গতকাল এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান এই কথা জানিয়েছেন। ইউনূস, তার পরিবার এবং গ্রামীণ ব্যাংকের যেকোনো অ্যাকাউন্ট, ঋণ এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য চেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
ড. ইউনূসের আর্থিক সংক্রান্ত ব্যাপারে এনবিআর এর আগ্রহ এটাই প্রথম নয়। গত ২০১৫ সালে এনবিআর ইউনূসের বিরুদ্ধে ট্যাক্স পরিশোধ না করার অভিযোগ তুলে আদালতে মামলা করেছিল। যদিও পরবর্তীকালে হাইকোর্টের নির্দেশে মামলাটি স্থগিত রয়েছে।
আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা ২(২৫ এএ) ক্ষমতাবলে গ্রামীণ ব্যাংকের তথ্য অনুসন্ধান, তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা এবং তথ্য সংগ্রহ এবং ব্যাংকসহ যেকোনো প্রতিষ্ঠানে একক বা যৌথ নামে পরিচালিত লেনদেন সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এজন্য গ্রামীণ ব্যাংকের সব তথ্য অনুসন্ধান ও যাচাইয়ের জন্য সেন্টাল ইন্টেলিজেন্স সেলের পরিচালক আলমগীর হোসেন এবং উপপরিচালক বেগম ফেরদৌসী হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এর আগে এনবিআরের সঙ্গে আয়কর নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পরে গ্রামীণ ব্যাংক। পরে অবশ্য তা নিষ্পত্তি হয়।
জানা গেছে, গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের ৩৩ ধারা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে সব ধরনের কর অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে আসছিল। প্রতিষ্ঠানটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন বছর পর পর এ সুবিধার মেয়াদ নবায়ন করা হয়। কিন্তু ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাস গ্রামীণ ব্যাংকের আবেদনের সিদ্ধান্তটি ঝুলে থাকে। অর্থাৎ এনবিআর সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় করের আওতায় পড়ে গ্রামীণ ব্যাংক। এতে গ্রামীণ ব্যাংককে ১০ কোটি টাকা অগ্রিম কর দিতে হয়। পরে এনবিআর ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিকে কর অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই অবস্থায় গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান খন্দকার মোজাম্মেল হক গত ছয় মাসের কর অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন।
সূত্র জানায়, গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কর অব্যাহতির সুযোগ চাওয়া হলেও ভূতাপেক্ষ কর (অতীতে কর্তিত কর) ফেরত দেওয়া হয় না এমন যুক্তিতে এনবিআর ওই ছয় মাসের কর অব্যাহতি সুবিধা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। আর করের দায় স্বীকার করেই গ্রামীণ ব্যাংক ১০ কোটি টাকা অগ্রিম পরিশোধ করে। পরবর্তী সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকের দাবি মেনে নেয় এনবিআর। ফলে এনবিআরের দাবিনামা নিষ্পত্তি হয়।
জানা গেছে, ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক সর্বপ্রথম ১৯৮৮ সালের ১ অক্টোবর পাঁচ বছরের জন্য কর অব্যাহতি সুবিধা পায়। তার পর যথাক্রমে ১৯৯৩ সালের অক্টোবর থেকে তিন বছর, ১৯৯৬ সালের অক্টোবর থেকে ওই বছরের ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০০০ সাল, ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর, ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৮ সালের জুন, ২০০৮ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর, ২০১১ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর শেষ দিন পর্যন্ত কর অব্যাহতি সুবিধা লাভ করে গ্রামীণ ব্যাংক। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি সুবিধায় রয়েছে নোবেলজয়ী গ্রামীণ ব্যাংক।
গ্রামীণ ব্যাংকের জিএম বাবুল সাহা বলেন, বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংক ২ হাজার ৫৬৮টি শাখার মাধ্যমে প্রায় ৮৭ লাখেরও বেশি সদস্যের মধ্যে এ ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। গ্রামীণ ব্যাংক বছরে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করছে। এ ঋণের আদায়ের হার ৯৯ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, আমাদের ২০২০ সাল পর্যন্ত আয়কর সুবিধায় রয়েছে।