সময় নিয়ে আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠনের সুপারিশ বিশিষ্টজনদের দলবাজদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন নয়
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী ও ইসমাঈল হুসাইন ইমু: অরাজনৈতিক, সৎ ও গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ, বিতর্কমুক্ত, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সক্ষম ব্যক্তিদের নিয়ে আগামী নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য সুপারিশ করেছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং কর্মজীবনে দায়িত্ব পালনকালে কখনো রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন এমন ব্যক্তিদের যেন নিয়োগ না করা হয় সেই পরামর্শ তাদের। বিশিষ্টজনরা বলেছেন, তাড়াহুড়ো করে নয় বরং দুই মাস সময় নিয়ে নির্বাচন কমিশন আইন করে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা ভালো।
গতকাল সোমবার বিকাল সাড়ে চারটায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পর বিশিষ্টজনরা এই কথা বলেন। সার্চ কমিটির আহ্বায়ক বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে সার্চ কমিটির বাকি ৫ সদস্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীন আখতার অংশ নেন।
বৈঠকে উপস্থিত বিশিষ্ট ১২ জন হলেন হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যামিরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর নির্বাহী পরিচালক বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমদ, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয় কাল আরও ৫ বিশিষ্টজনের মতামত নেওয়া হবে।
সুলতানা কামাল বলেন, সার্চ কমিটির একটি নিজস্ব কর্মপদ্ধতি আছে। কারা কমিশনে যাবেন না যাবেন, সব দায়িত্ব সার্চ কমিটির,আমাদের নয়। মানুষজন কোন ধরনের ব্যক্তিদের ইসিতে দেখতে চান, সে বিষয়ে আমাদের থেকে ধারণা নেওয়া সার্চ কমিটির উদ্দেশ্য। এটি বিশেষভাবে গবেষণা করে বের করার বিষয় নয়, প্রত্যেকে জানি। আমরা নির্বাচন কমিশনে এমন ব্যক্তিদের দেখতে চাই, যারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারবেন।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, রাজনৈতিক দলের কাছে নাম চেয়েছেন তারা (সার্চ কমিটি)। আমাদের বক্তব্যও শুনেছেন। এখন কি মানদ-ের ভিত্তিতে লোক সিলেকশন করা হবে, তা তাদের জানানো উচিত। এছাড়া আমাদের বক্তব্যের কতটুকু নেওয়া হয়েছে, সেটিও জানানো উচিত। তবে বৈঠকে এমনও প্রস্তাব এসেছে কমিশন গঠনে এত তাড়াহুড়ার কিছু নেই। প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি সময় নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে পারেন।
এ টি এম শামসুল হুদা বলেছেন, তাদেরকে আমরা বলেছি এমন ব্যক্তিদের কমিশনে নিয়োগ দেওয়ার জন্য যাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। যারা কখনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে ছিলেন না। যারা কর্মজীবনেও কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থন করেননি ও সম্পৃক্ত ছিলেন না। অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে কমিশন করতে হবে।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, সার্চ কমিটিকে সুপারিশ করেছি, একটা ক্রাইটেরিয়ার মধ্যে তারা (সার্চ কমিটি) সিলেকশন করবেন। আরেকটি হচ্ছে, সিলেকশন যেটি করছেন, তার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখুন। তাতে মানুষের আস্থা বিশ্বাস বাড়বে। সিলেকশনের ক্ষেত্রে যোগ্যতার মাপকাঠিগুলো তারা বসে চিন্তা করবেন। আমরা কিছু চিন্তার খোরাক দিয়েছি।
এ কে আজাদ চৌধুরী বলেছেন, দক্ষ, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে কমিশন গঠন করতে হবে। তিনিও সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছেন বলে জানান।
এদিকে আলোচনার বিষয় সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, সার্চ কমিটির কাছে বিশিষ্টজনরা আগামী দিনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চান এবং দেশবাসীও তা চায় সেটাও বলেছেন। সার্চ কমিটিকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য ও সেভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। বৈঠক করার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব এই তথ্য জানান। মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, সার্চ কমিটির কাছে রাজনৈতিক দলগুলোর নাম জমা দেওয়ার সময়সীমা মঙ্গলবার ১১টা থেকে বাড়িয়ে বিকাল ৩টা পর্যন্ত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল সার্চ কমিটির কাছে কোনো নামের তালিকা জমা দেয়নি। তিনি বলেন, কীভাবে নির্বাচন কমিশন গঠিত হতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে মতামত দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তাদের মতামত রেকর্ড করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ১২ বিশিষ্ট নাগরিকের মূল্যবান পরামর্শ আমরা রেকর্ড করেছি। সম্পাদনা: উম্মুল ওয়ারা সুইটি