বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর-এর রিয়েল টাইম প্রতিবেদন শেয়ারিং চালু আমদানি-রপ্তানিতে অর্থপাচার রোধে নতুন যুগের সূচনা
জাফর আহমদ: বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে রিয়েল টাইম প্রতিবেদন শেয়ারিং চালু করেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছে, এর মাধ্যমে অর্থপাচার রোধের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। এখন ইচ্ছা করলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর সমন্বিতভাবে অর্থপাচার শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন জনবল, প্রশিক্ষণ এবং তা প্রয়োগের।
নতুন প্রক্রিয়া মোতাবেক বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি বা রপ্তানির জন্য এলসি খোলার সঙ্গে সঙ্গে তা অনলাইন প্রতিবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংক সঙ্গে সঙ্গে রাজস্ব বোর্ডের সার্ভারে শেয়ার করে দিচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চালু হওয়া শেয়ারিং সিস্টেমে ব্যাংকগুলো কি কি ঋণপত্র খুলছে তা রাজস্ব বোর্ড সর্বোচ্চ ৫ মিনিটের মধ্যেই দেখতে পাচ্ছে। একইভাবে রপ্তানির ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বন্দরে পণ্য পাঠানোর অনুমতি দিচ্ছে। আমদানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করে পণ্য দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে, তা সঙ্গে সঙ্গে রাজস্ব বোর্ডের নিজস্ব অনলাাইনে আপলোড করছে এবং প্রতি পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে প্রতিবেদন আকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনলাইন সিস্টেমের সাথে শেয়ার করে দেওয়া হচ্ছে। নতুন এই ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাজস্ব বোর্ড স্ব স্ব অবস্থান থেকে আমদানি-রপ্তানি সম্পর্কিত সকল তথ্য পর্যবেক্ষণ করছে। ফলে আমদানির ক্ষেত্রে পণ্যের প্রকৃত দামের চেয়ে বেশি দাম দেখিয়ে (ওভার ইনভয়েজ) টাকা পাচার বা রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যের প্রকৃত দামের চেয়ে কম দাম দেখিয়ে (আন্ডার ইনভয়েজ) বিদেশে টাকা পাচার ইচ্ছা করলেই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাজস্ব বোর্ডের প্রতিবেদন শেয়ারিং ব্যবস্থা মুদ্রা পাচার রোধে বড় ভূমিকা রাখবে। তবে এ জন্য প্রয়োজন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জনবল বৃদ্ধি ও এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া। পাশাপাশি রাজস্ব বোর্ডের সংশিষ্ট বিভাগে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সততার সাথে দায়িত্ব পালন। তাহলে আমদানি-রপ্তানিতে মুদ্রা পাচার রোধ করা সম্ভব হবে।
এ ধরনের প্রযুুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দুর্নীতি কমিয়ে আনার প্রত্যাশা রাজস্ব বোর্ডের খোদ চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের। তিনি সরকারের উন্নয়নের পথনকশা বাস্তবায়নে বাড়তি রাজস্ব আদায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের নিশ্চিত করতে চান। এ ব্যাপারে এনবিআর অনেক দূর এগিয়েও এনেছেন। বড় বড় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য ওয়েব সাইটে পাওয়া যায়। রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে এ সব মূল্য পেতে পারে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। এ ক্ষেত্রে কাস্টম ইচ্ছা করলে ওভার ইনভয়েজ ও আন্ডার ইনভয়েজ খুব সহজে রোধ করতে পারে। এ জন্য কাস্টমকে আরও কঠিন হওয়ার পরামর্শ এই রাজনীতিকের। রিয়েল টাইম প্রতিবেদন শেয়ারিং চালু হওয়ার ফলে এলসি খোলার সাথে সাথে কাস্টম তথ্য জেনে যাচ্ছে । ওভার ইনভয়েজ ও আন্ডার ইনভয়েজ সম্পর্কে তদন্ত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। সম্পাদনা: আনিসুর রহমান তপন