জানুয়ারিতে ২৬ শিশুহত্যা : ধর্ষণের শিকার ২৭ জন নারী উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে শিশুহত্যা
আজাদ হোসেন সুমন : রাজধানীসহ সারাদেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে শিশুহত্যা। ১ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে ২৬টি শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আত্মহত্যা করেছে ২৯ ও ২৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা জানিয়েছে চলতি মাসে দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন হয়নি।
সংস্থার জানুয়ারি মাসের মনিটরিং-এ পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায় জানুয়ারি মাসে ২৬ শিশুকে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে পিতা মাতার হাতে খুন হয় ৩ শিশু। কক্সবাজারে পারিবারিক তুচ্ছ ঘটনার জেরে আট বছরের এক শিশুকে কুপিয়ে হত্যা করে আপন ফুফা। পারিবারিক কলহের কারণে রাজধানীতে দুই শিশুকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করে এক মা। এছাড়াও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে আরো ২০ শিশুকে হত্যা করা হয়। আত্মহত্যাকারী ২৯ জনের মধ্যে ৫ জন পুরুষ ও ১৫ জন নারী ও ৯ জন শিশু। হঠাৎ করেই বেড়ে যাচ্ছে শিশুদের আত্মহত্যার প্রবণতা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানি, পরীক্ষায় খারাপ ফল, এমনকি পছন্দের পোশাক কিনতে না পারার কারণেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। লক্ষ্মীপুরে মায়ের সঙ্গে অভিমান করে নবম শ্রেণির এক ছাত্রী আত্মহত্যা করে এ মাসে।
এ মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৭ জন নারী ও শিশু। এদের মধ্যে শিশু ১৩ জন। ৮ জন নারী। ৬ জন নারী গণধর্ষণের শিকার হয়। কুমিল্লায় চিকিৎসাসেবা নিতে এসে ধর্ষণের শিকার হয় এক প্রতিবন্ধী নারী। তাছাড়া ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ৬ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করে এক যুবক। যৌতুকের কারণে প্রাণ দিতে হয়েছে ১০ জন নারীকে। নির্যাতনের শিকার হয় ৭ জন। রাজবাড়ীতে যৌতুকের দাবিতে অন্তঃসত্ত্ব¡া স্ত্রী বৃষ্টি আক্তার হ্যাপিকে পিটিয়ে ও বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেছে পাষ- স্বামী। চট্টগ্রামে যৌতুকের জন্য এক গৃহবধূকে হত্যা করে শ্বশুরবাড়ীর লোকজন। পারিবারিক কলহে জানুয়ারি মাসে নিহত হন ২৯ জন, এদের মধ্যে পুরুষ ১৩ জন ও নারী ১৬ জন। তাছাড়া বিভিন্ন কারণে এ মাসে স্বামীর হাতে নিহত হন ১৬ জন নারী। আর স্ত্রীর হাতে নিহত হন ৩ জন স্বামী। পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, রাগ, পরকীয়াসহ বিভিন্ন পারিবারিক কারণে এই সব মৃত্যু সংঘটিত হয় বলে জানা গেছে। ক্রসফায়ারে নিহত: জানুয়ারি মাসে ক্রসফায়ারে মৃত্যু হয় ১২ জনের, এর মধ্যে পুলিশের হাতে নিহত হয় ৯ জন এবং র্যাব কর্তৃক নিহত ৩ জন । তাছাড়া ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী কর্তৃক নিহত হয় ৩ জন। আহত হয় ৪ জন ও ৪ জন বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী। সামাজিক অসন্তোষ: সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে এই মাসে নিহত হয়েছেন ১১জন ! আহত হয়েছেন ৫৮১ জন। সামাজিক সহিংসতায় আহত ও নিহতের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাত্র ১০ টাকা বাস ভাড়াকে কেন্দ্র করে ব্রাক্ষ্মবাড়িয়াতে আহত হয় ৫০ জন। সুনামগঞ্জে পূর্ব বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হয় ২ জন। এছাড়াও চলতি মাসে দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত হন ৮৯ জন ।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ আসনের আওয়ামী লীগ এমপি মুঞ্জুরুল আলম লিটন দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। খুলনায় ঘরের মধ্যে হাত-পা বেঁধে মাথায় আঘাত করে এক কলেজ শিক্ষককে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। অন্যান্য সহিংসতার ঘটনা: জানুয়ারি মাসে ৩ জন এসিড নিক্ষেপের শিকার হয়। মাদকের প্রভাবে বিভিন্নভাবে নিহতের সংখ্যা ১০ জন, আহত হয় ৩ জন। সড়ক দূর্ঘটনায় এ মাসে নিহত ১৯৯ ও আহত ৩৮০ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবশত, বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে, বজ্রপাতে মৃত্যুবরণ করেছে ৫৮ জন। গণপিটুনিতে নিহত হয় ২, আহত হয় ১৫ জন। বোমা বিস্ফোরণে আহত ৮ জন, নিহত হয় ২ জন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ৭ জনের। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমন অভিযানের নামে গণগ্রেফতার করা হয় ৩৭৮ জনকে। এ মাসে নিখোঁজ হয় ২০ জন।