নির্বাচন কমিশন গঠনে ২০ নামের তালিকা সার্চ কমিটির ১২৫ নাম থেকে ২০ নাম বাছাই হয়েছে
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী ও শাহানুজ্জামান টিটু: রাজনৈতিক দল থেকে প্রাপ্ত ১২৫টি নামের মধ্য থেকে ২০টি নাম বাছাই করেছে সার্চ কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে সার্চ কমিটি বৈঠক করে এই নামের তালিকা করে। মন্ত্রিপরিষদের সচিব মো. শফিউল আলম ও মন্ত্রিপরিষদের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল ওয়াদুদ রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে পাওয়া নাম ও চিঠি নিয়ে মঙ্গলবার সার্চ কমিটির কাছে যান বিকাল চারটায়। পরে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তবে গতকাল পর্যন্ত সার্চ কমিটি ২০ জনের নাম প্রকাশ করেনি।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনে পাঁচজন কমিশনার নিয়োগ করার জন্য এক একটি পদে দুটি করে দশটি নাম চূড়ান্ত করার জন্য তিন তালিকা বিবেচনা করছে সার্চ কমিটি। তিনটি তালিকার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে প্রাপ্ত তালিকা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তালিকা ও সুপ্রিম কোর্টের নিবন্ধকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তালিকা। এই তিন তালিকার মধ্যে যাদেরকে নিয়োগ করা যেতে পারে এর সংক্ষিপ্ত তালিকা করার কাজ চলছে। এখন তারা অন্য দুটি তালিকা থেকে নাম নিয়ে মোট দশজনের নাম চূড়ান্ত করবে। এদিকে সার্চ কমিটি আজ বিকালে আবারও বৈঠকে বসবে। বিশিষ্ট ছয় জনের সঙ্গে বৈঠক করবে। কেমন নির্বাচন কমিশন হওয়া দরকার ও তারা কি চান সেই বিষয়ে মতবিনিময় করবেন। বিকালে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে ২৮টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে পাওয়া ১২০-২৫টি নামের মধ্য থেকে ২০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছে সার্চ কমিটি। বিশিষ্ট নাগরিকদের কাছ থেকে চাওয়া পরামর্শ অনুযায়ী সততা, যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতেই এই তালিকা করা হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে তৃতীয় দিনের মতো সার্চ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন। তবে সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে পাওয়া নামের বাইরেও প্রয়োজন মনে করলে কারও নাম প্রস্তাব করতে পারবে বলেও জানান তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিবিভাগ সচিব বলেন, নামগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে আমানত। এজন্য নাম প্রকাশ করা যাবে না। মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ৩১টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি রাজনৈতিক দল নাম প্রস্তাব করেছে। বাকি চারটি দল কোনো নাম দেয়নি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া নামে ভালো ভালো কিছু নাম এসেছে। এজন্য নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি আশাবাদী।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া ৩১টি দলের মধ্যে ২৫টি রাজনৈতিক দল সার্চ কমিটির কাছে নাম দিয়েছে। দুটি দল নাম দেয়নি তবে মন্ত্রিপরিষদ নাম চেয়ে যে চিঠি দিয়েছিল ওই চিঠির জবাব দিয়েছে।
এর সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছ থেকে সার্চ কমিটি অবসরপ্রাপ্ত সকল মুখ্য সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সচিব, যুগ্ম সচিবদের নামের তালিকা নিয়েছে। ওই তালিকার পাশাপাশি সাবেক জেলা জজদের নামেরও তালিকা সংগ্রহ করেছে। সার্চ কমিটি প্রাপ্ত সকল নামের তালিকা থেকে মোট দশটি নাম চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাদের সুপারিশ করা নামের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ পাঁচজনকে নিয়োগ করবেন। এরমধ্যে একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন।
সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে পাওয়া নাম থেকেই পাঁচজন চূড়ান্ত করা হবে নাকি এর বাইরে সার্চ কমিটি তাদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এ নিয়ে এখনো সার্চ কমিটি চূড়ান্ত করেনি। তবে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রাপ্ত নামের তালিকা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। যেসব নাম একাধিক দল দিয়েছে তার একটি নাম হিসাবেই ধরা হয়েছে। আরও বৈঠক করার পর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সময়ে সার্চ কমিটির সব দলের কাছে নাম চেয়েছিল। কিন্তু ওই সময়ে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি নাম দেয়নি। পরে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব করা নাম থেকে ওইভাবে নাম নেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল না। তবে নিয়োগ পাওয়া কয়েকটি নাম কমন ছিল।
এদিকে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। এবার বিএনপিকে নির্বাচনে আনা, সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করানো এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেই হিসাবে সার্চ কমিটি বিভিন্ন দিক বিবেচনা করেই নাম চূড়ান্ত করছে। গতবার সব দল নাম না দেওয়ায় তাদের নাম থেকে কমিশনার করার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও এবার রয়েছে। সেই হিসেবে রাজনৈতিক দলের নামের ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন বলে একটি সূত্র আভাস দিয়েছে।
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা যেতে পারে এমন পদ মর্যাদার বেশ কয়েকটি নাম এসেছে রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে। সাবেক সচিবদের কাউকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হবে নাকি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের কাউকে করা হবে সার্চ কমিটি এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা ওই ভাবে নাম প্রস্তাব করবেন।
বিশিষ্ট নাগরিকরা গতকালের বৈঠকে বলেছেন, যে নামগুলো আসবে সেগুলো যেন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিটির সদস্যরা এ বিষয়ে একমত হননি। কারণ এটা দলের পক্ষ থেকে একটা আমানত। আমরা সেই আমানত রক্ষা করছি। দলগুলো আমাদের কাছে নামগুলো গোপন ভাবে দিয়েছেন।
সার্চ কমিটি যদি কোনো নাম দিতে চায় সেক্ষেত্রে কোনো বাধা আছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওনারা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও ধারণা থেকে যদি নাম দিতে চান সেটা ওনাদের এখতিয়ার আছে। যে পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাদের মধ্যে মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট একটি আদেশ বহাল রেখেছে সেক্ষেত্রে তাকে বৈঠকে ডাকা হবে কিনা। জবাবে তিনি বলেন, এটা আমরা দেখবো। শর্ট লিস্ট কিসের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে জানতে চাইলে শফিউল আলম বলেন, মূলত আগের আলোচনায় যেসব কথাগুলো আসছে বিশেষ করে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড, তাদের কতটা কর্মদক্ষতা আছে এগুলো বিবেচনায় নিয়ে করা হয়েছে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কোনো মতামত নেবেন কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন না, এ ধরনের কোনো নির্দেশ আমাদের ওপরে নেই এবং কমিটির পক্ষ থেকে তেমন কিছু বলাও হয়নি।
সার্চ কমিটি শেষ পর্যন্ত নিরপেক্ষ থাকবে না সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করবে এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিবিভাগ সচিব বলেন, ওনাদের অর্পিত দায়িত্ব ওনারা নিজ যোগ্যতা বলে পালন করবেন। আমরা আশা করি ভালো ফল পাবো। ওনারা সবাই সম্মানিত সৎজন ব্যক্তি এবং যোগ্যতা সম্পন্ন বলেই মহামান্য রাষ্ট্রপতি ওনাদের নিয়োগ দিয়েছেন। আমরা আশাবাদী ওনারা ওনাদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারবেন।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আপনারা কত সময় নেবেন এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের হাতে বেশি সময় নেই। আমাদেরকে ৮ তারিখের মধ্যেই শেষ করতে হবে। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত