নিজ স্বার্থেই মনোযোগী ভারত
নূসরাত জাহান: মুসলিম শরণার্থী ও অভিবাসী ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তাতে বিশ্বজুড়েই সমালোচনা চলছে। নিজ দেশেও সমালোচনা ও বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন তিনি। এরই মধ্যে আদালত তার নির্বাহী আদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছেন। তবে এসব বিতর্কের কোনোটাতেই এখন পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। অনেক বিশ্বনেতাই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। কিন্তু মোদি আপাতত নিজেদের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। চাইছেন ট্রাম্পের সঙ্গে সখ্য রেখে যদি ভারতকে তার তোপের হাত থেকে বাঁচানো যায়। ট্রাম্পের জঙ্গিবিরোধী অবস্থান থেকে ভারত যথাসম্ভব কূটনৈতিক লাভ তুলতে চায়। ট্রাম্পের শাসনামলের শুরু থেকেই তাই সেই চেষ্টা শুরু করতে চাইছে দিল্লি। ট্রাম্পের মুসলিমবিরোধিতা গোটা বিশ্বে যে সমালোচনা চলছে তার দিকে সতর্ক নজর রাখছে ভারত। কিন্তু নিজেদের অবস্থান খোলাসা করেনি। পাছে ট্রাম্প যদি হাতছাড়া হয়। তাই স্পর্শকাতর বিষয়ে আপাতত নীরবতাই পালন করছেন মোদি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারত কিছুটা নিরপেক্ষই থাকতে চাইছে। তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ট্রাম্প এরই মধ্যে আইএস বিরোধী লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছেন। এ নির্দেশে এমনিতেই চাপে আছে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট লস্কর-ই-তৈয়বা, জয়শ-ই-মোহাম্মদের মতো জঙ্গি দলগুলো। পাকিস্তানের চাপে ফেলার এটাই উপযুক্ত সময় ভারতের। তাইতো তারা আগ বাড়িয়ে কোনো মন্তব্য করবে না আপাতত। শুধু নজর রাখবেÑ কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়। এরপর ঝোপ বুঝে কোপ দেবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ট্রাম্পের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার আগেই ভারত জঙ্গিবাদে তাদের সংশ্লিষ্ট সব নথিপত্র যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিতে চায়। এর ফলে পাকিস্তানকে চাপে রাখতে বিশেষ সুবিধা হবে ভারতের। পাকিস্তানকে বাগে আনতে ‘ট্রাম্প’কে বিশেষ অস্ত্র বানানোর কথা ভাবছে ভারত। একই সঙ্গে জাপান ও চীনের সঙ্গেও সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে পাকিস্তানকে বাগে আনতে ভারত যদি ‘ট্রাম্প’কে কার্ড হিসেবে ব্যবহার করে তাহলে তার মূল্যও দিল্লিকে দিতে হতে পারে। তা নিয়েও ভারতীয়দের মনে সংশয় রয়েছে। এ বিষয়টিও মোদি সরকারকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশগুলোর তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত কাজ সস্তায় করিয়ে নেয় ভারতীয় সংস্থা প্রযুক্তিবিদদের দিয়ে। এ কারণেই গত ২৫ বছরে ভারতীয় তথ্য-প্রযুক্তি শিল্প ১৪ হাজার কোটি ডলারের এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর এখনও পর্যন্ত যে আভাস দিয়েছে তাতে ভারতীয় নাগরিকদেরও চাকরি হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাইতো দেখে-শুনে ও বুঝে পা ফেলতে চায় ভারত। কারণ তাদের সামনেও ঝুলছে নানা আশঙ্কা। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস। এফএ। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী