বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া ফুটপাত হকারমুক্ত পুনর্বাসনের বিষয়টিও ভাবতে হবে
আজাদ হোসেন সুমন : হকারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। নগরীর ফুটপাত এখন হকার মুক্ত। কিন্তু প্রশ্ন হকাররা যাবে কোথায়? তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ তাবৎ সংসারের ব্যয়ভার বহন করবে কে? এ প্রশ্ন হকারদের। বিশিষ্টজনেরাও পুনর্বাসনের বিষয়টিও ভেবে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। পুনর্সবাসন নীতিমালা না করা পর্যন্ত হকারদের উচ্ছেদ অভিযান বন্ধের দাবি জানিয়েছে হকার্স সমন্বয় পরিষদ। উচ্ছেদ অভিযানের পর বেশকিছু এলাকায় সন্ধ্যার আগে হকার দেখা না গেলেও গুলিস্তানে এখনো অনেক হকার ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে বসার চেষ্টা করে। তবে সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত বা স্বেচ্ছসেবকরা তাদের দেখলে সঙ্গে সঙ্গে আবারও সরিয়ে দেয়। এ বিষয়ে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছেন, ফুটপাত দখলে যত বড় জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রভাশালী ব্যক্তি হোক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সার্বিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। জনগণের পথচলা নির্বিঘœ করতেই আমাদের এ প্রচেষ্টা। এ ব্যাপারে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অবস্থান পরিষ্কার, স্পষ্ট ও কঠোর। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের বিষয়ে কাউকে একবিন্দু ছাড় দেওয়া হবে না। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কারও সঙ্গে আপস করবে না। রাজধানীর সড়ক ও ফুটপাতের মালিক নগরবাসী। এতে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাজধানীতে যানজটের অনেক কারণের মধ্যে হকার অন্যতম। ওই সব এলাকা জমজমাট থাকে। এখান থেকে সারাদেশের মানুষজন যাতায়াত করে। এখানে গভীর রাত পর্যন্ত বেচাকেনা হয়। যারা বলছে এখানে সন্ধ্যার পর বেচাকেনা হয় না, তারা মিথ্যা বলছে। ফুটপাত জনগণের সম্পদ। এটি উদ্ধারে উচ্চ আদালত এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলাসহ আশপাশের এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে দিনের বেলা হকারের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকজন। যারা বসে তারা সবাই ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে বসে। বাণিজ্যিক এলাকা দিলকুশার ভিতরে হকার ও ফুটপাতে অস্থায়ী দোকানগুলো নেই। কিছু চা, পান ও সিগারেটের দোকানদার ভ্রাম্যমাণভাবে তাদের ব্যবসা করে। এতে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছেন পথচারীরা। গুলিস্তানে উচ্ছেদ করার পরও কিছু হকার বারবার ফিরে আসছে। পল্টন এলাকায় ফুটপাতে বেশকিছু হকার ও অস্থায়ী দোকান লক্ষ্য করা যায়। তবে অনুমতি থাকায় সন্ধ্যার পর মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম, গুলিস্তান, পল্টন এলাকায় হকারদের ফুটপাত দখল করে বসতে দেখা যায়। ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত রাখতে ৫২ জন স্বেছাসেবক নিয়োগ দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। চলতি মাসের ২২ তারিখ সকাল থেকে এসব স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। সবার গায়ে ইউনিফর্ম ও হাতে একটি প্লাস্টিকের লাঠি দেওয়া হয়েছে। এসব স্বেচ্ছাসেবক মতিঝিল, গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, বায়তুল মোকাররম ও দিলকুশাসহ আশপাশের এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। বিভিন্ন সময় সুযোগ বুঝে ফুটপাতে বসে পড়ছে হকাররা। তাই ফুটপাত পাহারায় সার্বক্ষণিক পুলিশ ফোর্স না পেয়ে এবার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিয়েছে সিটি করপোরেশন। ওই সব এলাকায় ১০ জন করে মোট ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। সম্পত্তি বিভাগের চারজন সার্ভেয়ার চারটি টিমে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে দু’জন করে চেইনম্যান সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন। ফলে নির্দেশ অমান্য করে আগের মতো যত্রতত্র ফুটপাত দখল করে হকারদের পসরা সাজিয়ে বসার উপায় নেই বর্তমানে। এতে পথচারীদের মনে স্বস্তি ফিরেছে। তবে দুশ্চিন্তÍায় ভুগছে হকাররা। কারণ, এতে করে তাদের রুটি-রুজি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা বলেন, ফুটপাত হকারমুক্ত করা নিয়ে আমার কোনো প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন হচ্ছে এই লোকগুলো যুগ যুগ ধরে করে খাচ্ছিল তারা এখন যাবে কোথায়? তাদের পুনর্বাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করাটা কি সরকারেরই দায়িত্ব নয়। সাবেক আইজিপি ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী বলেন, হকারমুক্ত নগরী হলে ভাল। তবে দীর্ঘদিনের প্র্যাকটিস। হাজার-হাজার হকার। সবমিলিয়ে লাখো লোকের ট্রানজেকশন। এদের পুনর্বাসনের বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিত। তিনি আরো বলেন, অবশ্য সন্ধ্যার পর উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। হকাররা অবাধে বসতে পারবে। এটা একটা ভাল দিক। কারণ সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা অবধি লোক সমাগম থাকে নগরীতে।