ফারুক আলম: খোলা বাজারে ন্যায্যমূল্যে (ওএমএস) চাল-গম নিম্নমানের ও দুর্গন্ধ হওয়ায় তা এখন নিম্ন আয়ের মানুষ খেতে চায় না। দিনদিন খোলা বাজারের এই চালের প্রতি আগ্রহ অনেকটাই তলানিতে এসেছে। দেশের অনেক স্থানে অভিযোগ বেশির ভাগই দেখা যায় গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগির খাবার হিসেবে এগুলো এখন ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন খোলা বাজার থেকে চাল কেনা স্বল্প আয়ের মানুষ।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বস্তায় ভরে গুদামে আবদ্ধ জায়গায় চালগুলো রাখা হয়। এ রকম গুমোট পরিবেশে থাকায় কিছুদিনের মধ্যেই চালগুলো দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়ে। পরে যখন বাজারে ছাড়া হয় তখন আর মানুষ এই চাল খেতে পারে না। এর ফলে দেশে সরকারি গুদামগুলোতে খাদ্য মজুদ নিয়ে মাঝে মাঝে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে মজুদ করার খাদ্য কম দামে বিক্রি করা হয়। এতে হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে সরকারকে। আবার দ্রুত সময়ের মধ্যে চাল ও গম বিক্রি প্রক্রিয়া করতে না পারলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি গুদামগুলোতে মজুদকৃত চাল ও গমের অবস্থা এতটাই খারাপ যে গ্রামের গরিব জনগোষ্ঠীও এ চাল নিতে চায় না। কারণ খোলা বাজারে বিক্রির জন্য সরকারি গুদাম থেকে যে চাল সরবরাহ করা হয় তা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭ টাকায় আর গমের আটা বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। চালগুলো অপেক্ষাকৃত মোটা। অথচ বাজারে যে চাল পাওয়া যায় তার দাম একটু বেশি হলেও সাধারণ মানুষ ফ্রেশ এবং কিছুটা সরু চাল কিনছে। ফলে ক্রেতারা ওএমএসের চাল কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
এ বিষয়ে আধুনিক সংরক্ষণাগারের প্রকল্প পরিচালক যুগ্ম সচিব গাজী-উর রহমান আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, সরকার ৩৫ টাকা কেজি চাল কিনে গুদামে সংগ্রহ করে। চাল ড্যামেজ হওয়ার আগেই ১০ টাকা কেজি দরে চাল বাজারে ছাড়ে। এতে প্রত্যেক বছর কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে সরকারকে।
সূত্রে জানা গেছে, সরকার ৩৫ টাকা কেজি চাল কিনে ১০ টাকা কেজি চাল বিক্রি করায় সরকারের হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। চাল গন্ধ করে। ড্যামেজ চাল কিংবা গম বিক্রি করলে সেটা বিভিন্ন হাত হয়ে সাধারণ মানুষের পেটে যায়। মানুষ এগুলো কিনে খেতে চায় না। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ড্যামেজ চাল কিনে ভালো চালের সঙ্গে মেশায়। সার এবং লবণ দিয়ে দুর্গন্ধ দূর করে এবং বাজারে বিক্রি করে। আবার ফিড মিলের মালিকরা ১০ টাকা কেজি চাল ক্রয় করে মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করে।
ড্যামেজ বা ফাঙ্গাস ধরা চাল মানুষ খেলে কোনো সমস্যা হবে কিনা এ বিষয়ে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান (খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগ) শামসুন্নাহার নাহিদ আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, খাদ্যশস্যে ফাঙ্গাস দেখা দিলে তা মানুষকে খাওনো যাবে না। তবে প্রাণী (হাঁস, মুরগি, গরু) খেলে সমস্যা নেই। কারণ প্রাণী ও মানুষে পার্থক্য রয়েছে। কিছু খাদ্য মানুষ খেয়ে হজম করতে পারে না কিন্তু প্রাণী খেয়ে হজম করে। অর্থাৎ প্রাণীর জন্য ওই শস্য উপযোগী। সম্পাদনা: এনামুল হক