শিক্ষার্থীদের উপর দিয়ে হেঁটে গেলেন হাইমচরের উপজেলা চেয়ারম্যান
মিজান লিটন, চাঁদপুর: চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গায়ের উপর দিয়ে জুতা পায়ে হাঁটলেন। এ ঘটনায় স্থানীয় এবং জাতীয়ভাবে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায়, উপজেলার নীলকমল ওছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ডিসপ্লেতে মানব সেতু তৈরি করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নূর হোসেন পাটওয়ারী জুতা পায়ে ওই মানব সেতুর (শিক্ষার্থীদের) উপর দিয়ে হেঁটে গেলেন। এই দৃশ্য দেখে অনেকেই আনন্দ উপভোগ করেন এবং আবার অনেকেই ব্যথিত হন। বিষয়টি সম্পর্কে সরেজমিন হাইমচর নীল কমল উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে কথা হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোশাররফ হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, ১৯২৮ সালে এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৬ সাল থেকে বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিদ্যালয়ের ছাত্ররা দুই পাশে দাঁড়িয়ে এবং মাঝখানে কয়েকজন ছাত্রকে শোয়া অবস্থায় রেখে মানব সেতু তৈরি করে ডিসপ্লে প্রদর্শন করেন। আর এই মানব সেতুর (ছাত্রদের শরীরের) উপর দিয়ে প্রধান অতিথি পায়ে হেঁটে পার হন। এই ধরনের ডিসপ্লে এ বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য।
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি এ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। তখন থেকেই বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা এ ডিসপ্লে প্রদর্শন করে আসছে এবং যে তখন প্রধান অতিথি থাকে সে এভাবেই মানব সেতু পার হয়েছে। এটা কারও কাছে আনন্দ দায়ক, মজা করা আবার কারও কাছে বেদনাদায়ক। শিক্ষার্থীদের অনুরোধে প্রধান অতিথি এ মানব সেতু পার হতে হয়।
এই বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক প্রশান্ত কুমার দাস। তিনিই শিক্ষার্থীদের এ ধরনের মানব সেতু তৈরি করার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি এবং তার ফোন নম্বর দিতে কেউ রাজি হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মো. ইমরান হোসেন জানান, ২০০৬ সালে আমি এই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। আমার জানা মতে নিয়মিত না হলেও ১৯৮৬ সাল থেকে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এই ধরনের আয়োজন ছিল। পূর্বে বিষয়টি জানাজানি না হলেও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে। মূলত বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই এই ধরনের আয়োজন করেন।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র শোয়রাব হোসেন ও নবম শ্রেণীর ছাত্র সাইফুল ইসলাম জানান, সোমবার ওই মানব সেতুর উপর দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পায়ে হেঁটে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীদেরকে ৫ হাজার টাকা পুরস্কারও দিয়েছেন। তারা এই বিষয়টিকে প্রতিযোগিতার অংশই মনে করেন এবং আনন্দ উপভোগ করেন।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মাহবুব আলম বাশার জানান, পূর্বে এই বিদ্যালয়ে এই ধরনের প্রচলন থাকলেও এখন আর প্রয়োজন নেই। মানব সেতু তৈরি করে যে বিষয়টি শিক্ষার্থীরা অতিথিদের সামনে তুলে ধরতেন, সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন এই উপজেলার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট অনেক তৈরি হয়েছে। এই ধরনের আয়োজনকে নিন্দা জানাই।
হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী জানান, আমি বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হওয়ার পর আমাকে অন্যান্য অতিথি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অনেকটা জোর এবং চাপ প্রয়োগ করে মানব সেতুর উপর দিয়ে হেঁটে যেতে বাধ্য করেছে। আমার বিবেকে বাধা দিলেও বিদ্যালয়ের নিয়ম রক্ষায় নিষেধ করতে পারিনি। সম্পাদনা: এনামুল হক