রাজধানীতে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল নির্মাণ শ্রমিক পরিচয়ে বাসা ভাড়া নেয় ৪ জঙ্গি
আজাদ হোসেন সুমন: রাজধানীতে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। কিন্তু সেটা বাস্তবায়নের আগেই র্যাবের পাতা ফাঁদে ধরা পড়ে গেছে এই জঙ্গিরা। গ্রেফতার হওয়া নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এর সারোয়ার-তামীম গ্রুপের আইটি শাখার প্রধান মো. আশফাক-ই-আজম আপেল, মাহবুবুর রহমান, শাহিনুজ্জামান ও আশরাফুল ইসলাম নামে চারজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতারকৃত জঙ্গিরা ছদ্মবেশ ধারণ করে। তারা নিজেদের নির্মাণ শ্রমিক পরিচয় দিয়ে যাত্রাবাড়ী থানার দনিয়ার ধোলাইপাড়ের বাসাটি গত ২৩ জানুয়ারি ভাড়া নিয়ে ‘জঙ্গি আস্তানা’ গড়ে তুলেছিল জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। বাড়ির মালিক ভোটার আইডি কার্ড চাইলে ১ ফেব্রুয়ারি দেবেন বলে তারা জানিয়েছিলেন। সে কারণে গত এক সপ্তাহে খুব বেশি খোঁজ-খবর নেননি মালিকও। র্যাব সদর দপ্তর সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর দনিয়ার একটি বাসা ঘিরে ফেলে র্যাব। এরপর ভোর রাতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় দুটি নাইন এমএম পিস্তল, ২১ রাউন্ড গুলি, দুটি চাপাতি, দুটি ছুরি, গান পাউডার ও বোমা তৈরির বিভিন্ন উপকরণসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক জব্দ করা হয়। র্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, তাদের নাশকতা ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল। সে কারণে হয়তো ভোটার আইডি কার্ড ও ছবি দেওয়ার ক্ষেত্রে কৌশলী হয়েছিল তারা। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি বিষয়ে পড়ালেখা করার পর বছর পাঁচেক আগে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন আশফাক। আর তার সঙ্গে আটক হওয়া শাহিনুজ্জামান অস্ত্র চালনায় দক্ষ। তিনি বলেন, এরা আইটি বিষয় এবং বোমা তৈরিতে পারদর্শী। রাজধানীতে নাশকতামূলক কর্মকা- পরিচালনার লক্ষ্যে তারা এ আস্তানাটি গড়ে তোলে। অভিযান শেষে ঘটনাস্থলে আজ র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, সারওয়ার জাহান ও তামীম চৌধুরী নিহতের পর আশফাকের নাম জানতে পারি। এরপর র্যাব আশফাকের সন্ধানে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। মুফতি মাহমুদ খান জানায়, অভিযানে গ্রেফতার সবাই জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সদস্য। এদের মধ্যে আশফাক-ই-আজম ওই দলের আইটি এক্সপার্ট। জঙ্গিদের বিভিন্ন ওয়েবসাইট পরিচালনা ও ‘টেকনিক্যাল সাপোর্ট’ দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তার উপর। গুলশান হামলায় তামিমকে আইটি সংক্রান্ত সহযোগিতা করেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, কবিরাজবাগের পাঁচতলা ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় দুই কক্ষের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে জঙ্গিরা সেখানে আস্তানা গড়ে তুলেছিল। নির্মাণ শ্রমিক পরিচয় দিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি তারা ওই বাসা ভাড়া নেয়। বাড়ির মালিক একজন নারী। বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় তাকে তারা বলেছিল, আগে গুলশানের একটি নির্মাণ সাইটে কাজ করত তারা। ওই কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় যাত্রাবাড়ীতে আরেকটি সাইটে কাজ নিয়েছে। ভোটার আইডি আর ছবি ১ ফেব্রুয়ারি দেবে বলে জানিয়েছিল জঙ্গিরা। স্থানীয় বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান বলেন, ভাগ্যিস সময় মতো র্যাব সদস্যরা এদের আস্তানার সন্ধান পেয়েছে। নইলে এদের হামলার ঝরতে পারত প্রাণ। ধ্বসে যেতে পারত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সম্পাদনা: এনামুল হক