কে হচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার? ১০ নামের তালিকা করতে আজ আবার বৈঠকে বসছে সার্চ কমিটি
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: কে হচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এনিয়ে এখন সারাদেশে চলছে জল্পনা-কল্পনা। কি করেন সার্চ কমিটি তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে দেশবাসী। রাষ্ট্রপতির কাছেও যাচ্ছে দশ নাম। কাকে নিয়োগ দিবেন তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে। কারাই বা নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন কমিশনার হিসেবে। এ নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনীতি বোদ্ধাদের।
বিএনপি তাদের দেওয়া তের দফা প্রস্তাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার কেমন হওয়া উচিত, কারা হওয়া উচিত তা বলেছে এবং কেন হওয়া উচিত তাও বলেছে। তারা যে সার্চ কমিটির কাছে নামের তালিকা দিয়েছে সেখানেও সেভাবেই নাম দিয়েছে। এই কারণে তারা সাবেক প্রধান বিচারপতি ও সচিবের নাম রেখেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে। আওয়ামী লীগের তালিকায় সাবেক সচিব আছেন চারজন। তারা তাদের তালিকা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার চাইলেও শেষ পর্যন্ত সার্চ কমিটি বিতর্ক এড়াতে দুই দলের কারও নাম না নিয়ে সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাম প্রস্তাব দিতে পারে। আর জোট থেকে যে নাম এসেছে তাও উল্লেখ করে দিবে। যাতে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আর কমিশনার পদে দুই জোটের তরফ থেকে দুই-চারজন করে কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রস্তাব দিতে পারে। এছাড়া এমনও হতে পারে কমিশনার পদে সার্চ কমিটি তিনটি নাম প্রস্তাব করবে আর দুই জোট থেকে দুটি নাম নিয়োগের জন্য প্রস্তাব করবে। এছাড়া কোন দল কি কি নাম দিয়েছে সেটাও রাষ্ট্রপতিকে জানানো হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে কমিটি ৫জন করে দশজনের দুটি তালিকা করে পাঠাতে পারে।
বিশেষ একটি সূত্র জানায়, বিএনপি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দেখতে চান সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীনকে। তাকে না দিলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. সা’দত হুসাইনকেও দেখতে চান। এছাড়া শরিকদলগুলোও বিএনপির মতোই নাম দিয়েছে। তাদের চিন্তা রাষ্ট্রপতি যদি বিচারপতি না দিয়ে সচিবদের থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করেন এই জন্য সম্ভাব্য নামের তালিকায় রেখেছেন সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও সাবেক সচিব আসাফুদ্দৌলাকে।
এদিকে আওয়ামী লীগ পাঁচজনের নাম দিয়েছে। সেখান থেকে তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কাকে দেখতে চান ওই ভাবে সুনির্দিষ্ট করে না দিলেও তাদের দেওয়া নাম থেকে সাবেক সচিব আব্দুল করিম, সাবেক সচিব ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন এবং সাবেক সচিব ও আইজিপি নূর মোহম্মদ-এর নাম রয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হওয়ার আলোচনায়। তাদের তিনজনের একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হতে পারে এমনও শোনা যাচ্ছে। যদিও এখনো পর্যন্ত সার্চ কমিটি দশজনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করেনি। তারা আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি নামের তালিকা চূড়ান্ত করে দশজনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারে। এ ব্যাপারে দাফতরিক কাজে সহায়তা করছে মন্ত্রিপরিষদ। সার্চ কমিটি ৭ ফেব্রুয়ারির আগেই কাজ শেষ করতে পারবে বলে মনে করছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল ওয়াদুদ জানান, আজ আবারও বৈঠকে বসছে সার্চ কমিটি। বিকাল চারটায় এই বৈঠক করে এরপর সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে আরও দশটি নাম বাদ দিবে। পরে দশটি নাম বাছাই করা হবে।
বিএনপির সূত্র জানায়, বিএনপি ও বিএনপি জোটের শরিকদলগুলো এখন চিন্তায় রয়েছে। তারা প্রত্যাশা করছে তাদের দেওয়া নামের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হবে। আর কমপক্ষে দুজন কমিশনার করা হবে। বিএনপি এর কম হলে কি করবে তা এখনো ঠিক করেনি। তবে আওয়ামী লীগ নাম দিলেও তাদের নামের মধ্য থেকেই নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করতে হবে এমন নীতিতে বা অবস্থানে নেই। তারা মনে করছেন সার্চ কমিটি যাদেরকে বাছাই করবে ও রাষ্ট্রপতি যাদেরকে নিয়োগ দিবেন তাদেরকেই তারা মেনে নিবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রাষ্ট্রপতি যাকে উপযুক্ত মনে করবেন এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিবেন, আওয়ামী লীগ তাকেই মেনে নিবে এবং সাদরে গ্রহণ করবে। আওয়ামী লীগ শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য ৫ জনের নাম পাঠিয়েছে সার্চ কমিটির কাছে। ওইসব নাম থেকে যদি কাউকে কমিশনে নিয়োগ নাও দেওয়া হয় তাও আমরা প্রতিবাদ করবো না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি যে পাঁচটি নাম দিয়েছে এরমধ্যে তারা হিসাব করেই দিয়েছে এমনভাবে যাতে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নিয়োগ করতে পারেন। বিএনপির শরিকদলগুলোও ওইসব নামের কাছাকাছি নাম দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে একই নাম দিয়েছে। বিএনপি, এলডিপি, বিজেপি, বাংলাদেশ ন্যাপ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম অনুসন্ধান কমিটির কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কাকে দেখতে চান সেটা বলেছেন। তারা পাঁচটি দল থেকে একটি নাম দিয়েছে। যে নাম সবচেয়ে বেশি দলের কাছে থেকে যাবে সেই নাম নেওয়া হবে সার্চ কমিটি যদি এমন সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে তাদের নামই যেন বিবেচিত হয় সেই জন্য এটা তাদের কৌশল ছিল। বিএনপি জোটের সাতটি শরিক দল মোট ৩৫টি নাম দিয়েছে। তা দিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তারা একজনকেই দিয়েছেন। সবমিলিয়ে বিএনপি জোট থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বিএনপি জোটের নামের মধ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. সা’দত হুসাইন, আলী ইমাম মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও সাবেক সচিব আসাফুদ্দৌলার নাম। তারা এই পাঁচজনের কেউ হলেই মেনে নিবেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে অভিন্ন নাম আসার পাশাপাশি অন্যান্য যে সব নাম তারা দিয়েছেন সেখানেও নামের মিল রয়েছে। তারা সাবেক প্রধান বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, শিক্ষক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সাবেক সচিবদের নাম দিয়েছেন। বিএনপির নামের তালিকায় এখনো পর্যন্ত একাধিক নামের কথা শোনা যাচ্ছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন, সুজন’র সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক ড. দিলারা জামান ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ এর নাম রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছে বি. জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমান, ড. তানসীম রহমান, ড. তাসনীম সিদ্দিকীর নাম রয়েছে।
কয়েকটি নাম বেশি শোনা গেলেও জানা গেছে, বিএনপি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীনের নাম প্রস্তাব করেছে। এদিকে বিএনপি জোটের খেলাফত মজলিসও যেসব নাম প্রস্তাব করেছে এরমধ্যে বিএনপির নামের প্রাধান্য রয়েছে। এছাড়া মাদ্রাসার একজন শিক্ষকের নাম তারা দিয়েছে। তাদের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে সেখানে সাবেক সচিব আসাফুদ্দৌলা, সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার, মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা মাহমুদুল হাসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাসনিম সিদ্দিকীর নাম। তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার করার জন্য বলেছে সাবেক সচিব আসাফুদ্দৌলাকে।
বাংলাদেশ ন্যাপের তরফ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সাবেক সচিব আসাফুদ্দৌলার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বাইরেও তারা কমিশনার হিসেবে নাম প্রস্তাব করেছে, সাবেক সচিব আসাফুদ্দৌলা, ড. তোফায়েল আহমেদ, সাবেক সচিব আলাউদ্দিন সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ জে ফজলুর রহমান।
সূত্র জানায়, কমিটি নাম যাচাই-বাছাই শেষে ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রিপোর্ট দিবে। রাষ্ট্রপতি ওই দশটি নাম থেকে পাঁচজনকে নিয়োগ করবেন। এরমধ্যে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার করবেন। তবে একটি সূত্র জানায়, যে ২০টি নাম রাজনৈতিক দলের নামের তালিকা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে এই তালিকার পাশে সার্চ কমিটি তাদের নিজেদের বিচারে যোগ্যদের নামও প্রস্তাব করতে পারে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে পাওয়া নামের মধ্য থেকে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। ওই সব নামের বাইরে সার্চ কমিটিও নাম প্রস্তাব করতে পারে। তিনি বলেন, প্রাপ্ত নামগুলো থেকে যে নামগুলো বাছাই করা হবে তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি খোঁজ খবরও করা হবে। এরপর নাম ফাইনাল করা হবে। সম্পাদনা: এনামুল হক