সিএনএন এর বিশ্লেষণ মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে ২২০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য যুক্তরাষ্ট্রের
এম রবিউল্লাহ: প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে সাত মুসলিম দেশের অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞার নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন। এই দেশগুলো নিষেধের কারণে মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মধ্যে উদ্বেগ ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ওয়াশিংটন ও লন্ডনের মতো বড় বড় শহরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়েছে।
দ্য অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) কয়েক ডজন মুসলিম দেশের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা। মুসলিম দেশের প্রতিনিধিত্বকারী এ সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম দেশের অভিবাসী ও শরণার্থীদের প্রবেশের কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আরব লীগও যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, এটি অবিবেচক সিদ্ধান্ত।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার তালিকার মধ্যে থাকা দেশ ইরাক যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ বৃহত্তম তেল আমদানির উৎস। ইরাকের সঙ্গে আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে আমেরিকার বড় স্বার্থ নষ্ট হবে। সারাবিশ্বে প্রায় ৪৭টি সন্ত্রাসী সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র রয়েছে। যে দেশগুলো আঞ্চলিক ক্ষেত্রে মুসলিম দেশের শাসনের অধীনে রয়েছে। দ্য ইউএস সেনসাস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, মুসলিম এই দেশগুলোর সঙ্গে ২০১৫ সালে আমেরিকার বাণিজ্য হয়েছে ২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের।
২০১৬ সালের ১১ মাসে বাণিজ্য হয়েছে ১৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৬ ভাগ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সঙ্গে হয়েছে। প্রায় ৯৪ ভাগ পণ্য বাণিজ্য হয়েছে মুসলিম ১৫টি দেশের সঙ্গে। এই তালিকায় রয়েছে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও ইরাক। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ও অন্যতম বাণিজ্যিক পার্টনার হচ্ছে মুসলিম বিশ্ব।
মালয়েশিয়া: মালয়েশিয়ার সঙ্গে ২২.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাণিজ্য হয়েছে আমেরিকার। আমেরিকান তেল কোম্পানি এক্সন মবিল, শেভরন, কোকো ফিলিপস, মারফি অয়েল ও ডউ ক্যামিকেল বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে মালয়েশিয়ায়। স্থানীয় কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে এ বিনিয়োগ করেছে আমেরিকান কোম্পানিগুলো। আমেরিকার ব্যুরো অব ইকোনোমিকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে আমেরিকান কোম্পানিগুলো প্রায় ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগ করেছে।
সৌদি আরব: সৌদি আরবের সঙ্গে ২০১৬ সালের ১১ মাস ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে আমেরিকা। আমেরিকার বিভিন্ন কোম্পানি সৌদি আরবে গাড়ি, বাণিজ্যিক যন্ত্রপাতি, নির্মাণ সামগ্রী, বেসামরিক অস্ত্র, প্রতিরক্ষার সরঞ্জামাদি, আইটি ও স্বাস্থ্য জাতীয় বহু পণ্য রপ্তানি করেছে। আমেরিকার জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে আমেরিকা সৌদি আরব থেকে ৩৮৬ ব্যারল তেল আমদানি করেছে। সৌদি আরব হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল আমদানি নির্ভর দেশ।
মার্কিন বিএনএর সমীক্ষা অনুযায়ী, আমেরিকার কোম্পানিগুলো ২০১৬ সালে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে আমেরিকার জেনারেল ইলেকট্রিক এককভাবেই ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে সৌদি আরবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত: ২০১৬ সালের ১১ মাসে আরব আমিরাতের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্যিক লেনদেন হয়েছে ২৩.৩ বিলিয়ন ডলারের। আমিরাত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে আমেরিকার একক বাণিজ্যিক দেশ। আমেরিকার বিভিন্ন কোম্পানি দেশটিতে ১৫.৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। আমেরিকার প্রায় ১ হাজার কোম্পানি আমিরাতে কার্যক্রম পরিচালনা করে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজধানী ধরা হয় আমিরাতের দুবাইকে। লুকহিড মার্টিন, জেনারেল ইলেকট্রনিক্স ও এক্সন মবিল দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবসায়ী কার্যক্রম চালাচ্ছে আমিরাতে।
ইন্দোনেশিয়া: ইন্দোনেশিয়া হচ্ছে বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাষ্ট্র। ২০১৬ সালের ১১ মাসে আমেরিকা ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে পণ্য বাণিজ্য করেছে ২৩ বিলিয়ন ডলারের। জি-২০ সদস্য রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায় ১৩.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বিভিন্ন কোম্পানি। ইন্দোনেশিয়ায় অধিকাংশ মার্কিন কোম্পানিই বিনিয়োগ করেছে খনিজ শিল্পে। রাজধানী জাকার্তায় জেনারেল মটরসের শিল্প রয়েছে। এছাড়া মার্কিন কোম্পানি কার্গিলও ইন্দোনেশিয়ার অধিকাংশ অংশ দখল করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
তুরস্ক: তুরস্ক ও আমেরিকার মধ্যে ২০১৫ সালে ১৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। ২০০৯ সালে এ মুসলিম দেশের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ছিল ১০.৮ বিলিয়ন ডলারের। তুরস্কের উৎপাদন ও ব্যাংকিং খাতে আমেরিকা বিভিন্ন কোম্পানি ৩.৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। আমেরিকার ফোর্ড, জেনারেল ইলেকট্রিক ও ইউনিলিভার দেদারসে তুরস্কে ব্যবসায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে বাণিজ্য করছে। তুরস্কের অটো মোবাইল শিল্পে ফর্ড বিশাল অবস্থান দখল করে নিয়েছে। এই কোম্পানির প্রায় ১০ হাজার ৬শ’ শ্রমিক কাজ করছে তুরস্কে। সিএনএন