আমাদের অর্থনীতিকে শাহবাগ থানার ওসি আবুবকর সিদ্দিক বাংলা একাডেমি দেখবে বই পুলিশ দেখবে আইনশৃঙ্খলা
রিকু আমির: কোন বই মেলার স্টলে ঠাঁই পাবে, না পাবে সেটার দায়িত্ব পুলিশের নয়, বাংলা একাডেমির। পুলিশের কাজ শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা বলে দৈনিক আমাদের অর্থনীতিকে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ওসি আবুবকর সিদ্দিক।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয় বইমেলার স্টলগুলোতে বই তোলা না তোলা নিয়ে পুলিশকে জড়িয়ে যেসব লেখালেখি হচ্ছেÑ তা নিয়ে দৈনিক আমাদের অর্থনীতি আবুবকর সিদ্দিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এ উত্তর পাওয়া যায়।
বুধবার দুপুরে বইমেলায় স্থাপিত পুলিশ কন্ট্রোল রুমের বসে এ প্রতিবেদক কথা বলেন শাহবাগ থানার ওসির সঙ্গে। তিনি বলেন, মেলায় কোন বই উঠবে, কোন বই উঠবে নাÑ তা দেখার দায়িত্ব বাংলা একাডেমির। পুলিশ কেন এ কাজ করবে, এটা পুলিশের কাজ নয়। পুলিশ দেখবে, যদি কোনো বইয়ের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়, সেটা।
আবুবকর সিদ্দিক বলেন, পুলিশ কখনোই মেলার স্টলে বই তুলতে বাধা দেবে না, পুুলিশ বইয়ের পাতা ঘেঁটে দেখবে না। যদি কোনো বইয়ের কারণে পরিবেশ-পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়, তবেই পুলিশ হস্তক্ষেপ করবে। তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ, মামলা করবে, প্রয়োজনবোধে দায়ীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এটা করতে যদি বাংলা একাডেমি নাও চায়, তারপরও করা হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রাখবে পুলিশ সবকিছু করার জন্য প্রস্তুত।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আপনি মুক্তমনা, আপনি বই লেখে মেলার কোনো স্টলে তুলেছেন, সেই বই সংগ্রহ করল আপনার অনুসারীরা। সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার বিপক্ষের কেউ এই বই নিয়ে মেলায় যদি কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে, অশান্তি সৃষ্টি করে, সেটা তো হতে দেওয়া হবে না। গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে বইমেলা ও স্টলে বই তোলা না তোলা নিয়ে পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনামূলক, ব্যাঙ্গাত্মক লেখা হচ্ছে।
৩০ জানুয়ারি ৬টা ২০ মিনিটে এটিএন নিউজের অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ ও লেখক প্রভাষ আমিন নিজ ফেসবুক ওয়ালে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে বেশিরভাগ প্রকাশনীতেই পেশাদার সম্পাদক নেই। লেখক যা লেখেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাই ছাপা হয়, মাঝে থাকেন শুধু প্রুফ রিডার। এবার এই সমস্যার দারুণ একটা সমাধান মিলল। পুলিশ সব বই পড়ে দেবে। বাহ। পুলিশ ভাইয়া, পুলিশ ভাইয়া আমার দুইটা বই বেরোবে, একটু মনোযোগ দিয়ে দেখে দিও কিন্তু। প্লিজ’।
৩১ জানুয়ারি রাত ১১টা ০৫ মিনিটে রাজীব নন্দী নামের একজন তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘পুলিশ যদি আমার নিষিদ্ধ দ্বিপদী পড়ে তবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত পাবে কিনা সেটা পরের আলোচনা কিন্তু পুলিশানুভূতিতে দারুণভাবে আঘাত পাবে। যে লেখা পাঠককে আঘাত করতে পারে না সে লেখা কেন পড়বে পাঠক? হোক সেটা সুখের কিংবা দুঃখের আঘাত। যে বই ভিতরে আলোড়ন তুলতে না পারে সে বই পড়া আর হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার মধ্যে তো তবে কোনো পার্থক্যই রইল না’।
৩১ জানুয়ারি রাত ৯টা ০৩ মিনিটে নিজ ফেসবুক একাউন্টে একটি পোস্টে এবারের বইমেলায় নিষিদ্ধ হওয়া শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবিন আহসান লিখেছেন, ‘একটা বই জন্মের আগেই সেই বইয়ের মৃত্যুর জন্য রাষ্ট্র তার কালো হাত বাড়িয়ে দেবে! একটা বই প্রকাশের পর পাঠক পড়বে, সমাজে সেই বইয়ের প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। বইয়ের পক্ষে-বিপক্ষে জনমত তৈরি হবে তারপর সেই বই নিষদ্ধ করার মতো হলে নিষিদ্ধ করবে আদালত। আদালত আবার সেই বইয়ের ছাড়ও দিতে পারলে তাও দিবে। কিন্তু একটি বইয়ের জন্মের আগেই বৈধ-অবৈধ-বাজে-অশ্লীল-অনুভূতিতে নাড়া দেবে এসব দুনিয়ার কোনো সভ্যদেশের পুলিশ দেখে? অসভ্যতামির চূড়ান্ত জায়গায় চলে যাচ্ছে আমার-আপনার বাংলাদেশ…’।