ওমর শাহ
শুরু হলো বাঙালির প্রাণের বইমেলা। বইপ্রেমীদের পদচারণায় মুখরিত মেলাপ্রাঙ্গন। পাঠককে জ্ঞান চর্চায় উদ্বুধ্য করতে বাংলা একাডেমির এ মেলার আয়োজন। শিক্ষা, গল্প, উপন্যাস, কবিতা, গবেষণা, ইতিহাস ও ধর্মবিষয়ক লক্ষ বইয়ের সমাহার আমাদের একুশে বইমেলায়। বই মানুষের প্রাণকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে। বই পাঠে মনে আসে সজীবতা। ইসলামেও বইপাঠ ও জ্ঞান চর্চার গুরুত্ব সর্বাগ্রে। ইসলামে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব অনেক বেশি। এমনকি বলতে দ্বিধা নেই যে, ইসলাম ধর্মে পড়া ও শেখার প্রতি যতটুকু গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, অন্য কোনো ধর্মেই এর উদাহরণ নেই। আদিমানব হজরত আদম (আ.) পড়ে-শেখেই নিজের মর্যাদা ফেরেশতাদের চেয়েও ঊর্ধে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। পবিত্র কোরআনের সর্বপ্রথম বাণীই হলো, ‘পড়’। আর এ পড়ার আদেশ বাস্তবায়ন করতেই মানবতার মুক্তিদূত বিশ্বনবী (সা.) গড়ে তুলেছেন একটি সুশিক্ষিত জাতি।
যে জাতির জীবনকালকে আজো মানুষ অকপটে সোনালি যুগ বলে স্বীকৃত দিতে বাধ্য হচ্ছে। এ থেকে একটি বিষয় প্রমাণ হয় যে, আল্লাহ, নবী ও পরকালে বিশ্বাসীদের বেশি বেশি জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক। জ্ঞানের রাজ্যে থাকা প্রয়োজন তাদের অবাধ বিচরণ। তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা পেতে হলে প্রয়োজন সময়ের চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জ্ঞানের ঝুলিকে টইটম্বুর করা। আর এর সবচেয়ে উত্তম সঙ্গী বই।জ্ঞান অর্জনের অর্থবহ শব্দও ‘বই’। দুই অক্ষরের এই শব্দটি এসেছে আরবি ‘ওহি’ শব্দ থেকে। আরবি ‘ওয়াও’ হরফের বাংলা উচ্চারণ হয় ‘ব’। ‘ওহি’র বাংলা উচ্চারণ হয় ‘বহি’। ধীরে ধীরে ভাষার পরিবর্তনে ‘বহি’টি ‘বই’ রূপ ধারণ করেছে। এভাবে বইয়ের সঙ্গে ঐশী জ্ঞানের একটা সম্পর্ক রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন বিষয়ে মতান্তরে অসংখ্য আয়াত নাযিল করেছেন। সূরা আলাকের সেই আয়াতগুলোর অর্থ হচ্ছে, ‘পড়–ন আপনার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত থেকে। আর আপনার প্রভু অনেক সম্মানিত ও দানশীল। যিনি মানুষকে কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে এমনসব বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানত না।’ আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরানের অন্তত ৯২ জায়গায় জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার প্রসঙ্গ এনেছেন।
‘আল-কোরআন’ শব্দটির একটি অর্থও হলো ‘অধ্যয়ন’। পাঠের প্রতি উৎসাহ দিয়ে আল্লাহ তাআলা কুরআনের আরেক জায়গায় বলেন, ‘যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য।’ (ইবনে মাজাহ)।