মেলায় ইসলামি বই ও পাঠকের চাহিদা
জহির উদ্দিন বাবর
শুরু হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব একুশে বইমেলা। শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্যানুরাগীরা সারা বছর এ মেলার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। মেলায় সাধারণত সৃজনশীল বই বেশি প্রকাশ হয়ে থাকে। বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলায় কয়েকশ’ স্টল থাকলেও ইসলামি প্রকাশনার সংখ্যা হাতেগোনা দুই-চারটি। ইসলামি ধারার মানসম্পন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো মেলায় স্থান না পাওয়ার কারণে এই অঙ্গনের বইপত্র সম্পর্কে সাধারণ মানুষ তেমন কিছু জানতে পারে না। ইসলামকে জানার জন্য এখন যথেষ্ট বইপত্র রয়েছে। ইসলামি প্রকাশনা শিল্প এখন বেশ সমৃদ্ধ। বাংলাবাজারে বহুতল মার্কেট ইসলামি টাওয়ারের পুরোটাই ইসলামি বইয়ে ঠাসা। প্রতি মাসে ইসলামি ধারার কয়েকশ বই প্রকাশ হচ্ছে। সাধারণ বইপত্র যেমন শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে মেলাকেন্দ্রিক বিক্রি হয় ইসলামি বই তেমনটা না। সারা বছরই এসব বইপত্র বের হয়। সারা দেশে বছরের সবসময়ই এই বইগুলো বিক্রি হয়। মানসম্পন্ন শতাধিক প্রকাশনী নিয়মিত ইসলামি বইপত্র প্রকাশ করছে। বায়তুল মোকাররমে বছরে দুইবার ইসলামি বইয়ের মেলা হলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে তা সামান্য সাড়াও ফেলতে পারে না। ইসলামি ধারার প্রকাশকদের আক্ষেপ হলো তারা বাংলা একাডেমির বইমেলায় স্থান পান না। নিজস্ব প্রকাশনীর বই ছাড়া বিক্রির অনুমতি না থাকায় তাদের বইগুলো মেলায় বিক্রির কোনো সুযোগও নেই। এজন্য ইসলামি ধারার মানসম্পন্ন বইগুলো সাধারণ ধারার বিপুলসংখ্যক পাঠকের অজান্তেই থেকে যায়। অনেকের জানাই নেই ইসলামকে বিষয় হিসেবে ধারণ করে বাংলাদেশে এতো লেখালেখি হচ্ছে। এক সময় ইসলামি ধারার লেখালেখি মানের বিচারে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও এখন এক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। ইসলামি ধারার প্রকাশনা শিল্প এখন রুচি-বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। বাংলা একাডেমি বইমেলায় স্থান পাওয়া কোনো কোনো প্রকাশক ইসলামি বইপুস্তক বের করে থাকেন। তবে এগুলো মানের বিচারে মোটেই উত্তীর্ণ নয়। দু’চারটি প্রকাশনী ছাড়া অন্য প্রকাশনীগুলোর ধর্মীয় বইপত্রে কোরআন-হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। মেলায় আগত পাঠকদের যারা ধর্মীয় বিষয়াদি জানতে চান তারা এই নি¤œমান এবং ভুলভ্রান্তিতে ভরপুর বইগুলোই চড়া দামে কিনে নিচ্ছেন। এতে একদিকে তারা ঠকছেন অন্যদিকে ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সব শ্রেণির পাঠকের কাছে ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা সম্বলিত বইপত্র তুলে দেয়ার স্বার্থেই একুশে বইমেলায় ইসলামি প্রকাশনীগুলোর অংশগ্রহণ জরুরি। বিশ্বজুড়ে মানুষের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ বাড়ছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। সেই প্রেক্ষাপটে সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি মুসলিম দেশের সার্বজনীন এই মেলায় ইসলামি বইপত্র স্থান না পাওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। যারা ব্যক্তিজীবনে তেমন ধর্মকর্ম করেন না তারাও বইপত্র পড়ে ইসলাম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। যারা ইসলামি জীবনবোধে দীক্ষা নিতে চান তাদের জন্য বইপত্র একটি বড় অবলম্বন। এক্ষেত্রে তারা কী বইয়ের সহযোগিতায় দীন শিখছেন সেটা দেখতে হবে। যেসব বইয়ে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে ইসলামের সৌন্দর্যগুলো সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি সেই বইগুলো পড়ে কেউ প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারবে না। প্রকৃত দীন না জানলেই জন্ম নেয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার, চরমপন্থা আর প্রান্তিকতা। ইসলামপরিপন্থী এসব বিষয় থেকেই এক সময় সৃষ্টি হয় জঙ্গিবাদের। এজন্য সঠিক ইসলাম সম্পর্কে জানার মতো বইপত্র পাঠকের হাতে তুলে দেয়ার ব্যবস্থা মেলা কর্তৃপক্ষকে করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচিত ইসলামি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থান পাওয়া সময়ের দাবি।