আবু নাঈম
ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী রা. একবার তার অতি প্রিয় বর্ম হারিয়ে ফেললেন। কিছুদিন পর জনৈক ইহুদির হাতে সেটি দেখেই চিনে ফেললেন। লোকটি কুফার বাজারে সেটি বিক্রয় করতে এনেছিল। হজরত আলী তাকে বললেন, ‘এতো আমার বর্ম। আমার একটি উটের পিঠ থেকে এটি অমুক রাত্রে অমুক জায়গায় পড়ে গিয়েছিল।’ ইহুদি বললো, ‘আমিরুল মুমিনীন! ওটা আমার বর্ম এবং আমার দখলেই রয়েছে।’ হজরত আলী রা. পুনরায় বললেন, ‘এটি আমারই বর্ম। আমি এটা কাউকে দানও করিনি, কারো কাছে বিক্রয়ও করিনি। এটি তোমার হাতে কিভাবে গেল?’
ইহুদি বললো, ‘চলুন, কাজীর দরবারে যাওয়া যাক।’ হজরত আলী রা. বললেন, ‘বেশ, তাই হোক। চলো।’ তারা উভয়ে গেলেন বিচারপতি শুরাইহের দরবারে। বিচারপতি শুরাইহ উভয়ের বক্তব্য জানতে চাইলে উভয়ে বর্মটি নিজের বলে যথারীতি দাবি করেন। বিচারপতি খলিফাকে সম্বোধন করে বললেন, ‘আমিরুল মুমিনীন! আপনাকে দু’জন সাক্ষী উপস্থিত করতে হবে। হজরত আলী বললেন, ‘আমার ভৃত্য কিম্বার এবং ছেলে হাসান সাক্ষী আছে।’ শুরাইহ বললেন, ‘আপনার ভৃত্যের সাক্ষ্য নিতে পারি। কিন্তু ছেলের সাক্ষ্য নিতে পারবো না। কেননা বাপের জন্য ছেলের সাক্ষ্য শরিয়তের আইনে অচল।’ হজরত আলী বললেন, ‘বলেন কি আপনি? একজন বেহেশতবাসীর সাক্ষ্য চলবে না? আপনি কি শোনেননি, রাসুল সা. বলেছেন, হাসান ও হোসাইন বেহেশতের যুবকদের নেতা?’ শুরাইহ বললেন, ‘শুনেছি আমিরুল মুমিনীন! তবু আমি বাপের জন্য ছেলের সাক্ষ্য গ্রহণ করবো না।’ অনন্যোপায় হজরত আলী রা. ইহুদিকে বললেন, ‘ঠিক আছে। বর্মটা তুমিই নিয়ে নাও। আমার কাছে এই দু’জন ছাড়া আর কোনো সাক্ষী নেই।’ ইহুদি তৎক্ষণাৎ বললো, ‘আমিরুল মুমিনীন!
আমি স্বয়ং সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, ওটা আপনারই বর্ম। কি আশ্চর্য! মুসলমানদের খলিফা আমাকে কাজীর দরবারে হাজির করে আর সেই কাজী খলিফার বিরুদ্ধে রায় দেয়। এমন সত্য ও ন্যায়ের ব্যবস্থা যে ধর্মে রয়েছে আমি সেই ইসলামকে গ্রহণ করেছি। ‘আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু।’ অতঃপর বিচারপতি শুরাইহকে সে ইহদি জানালো যে, ‘খলিফা সিফফীন যুদ্ধে যাওয়ার সময় আমি তার পিছু পিছু যাচ্ছিলাম। হঠাৎ তার উটের পিঠ থেকে এই বর্মটি পড়ে গেলে আমি তা তুলে নিই।’ হজরত আলী রা. বলেন, ‘বেশ! তুমি যখন ইসলাম গ্রহণ করেছ, তখন আমি ওটা তোমাকে উপহার দিলাম।’ এই লোকটি পরবর্তীকালে নাহরাওয়ানে হজরত আলীর নেতৃত্বে খারেজিদের সাথে যুদ্ধ করার সময় শহীদ হন।