বিএনপির নামের বেশিরভাগই সরকার ও আওয়ামী লীগের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি নন
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: বিএনপির তরফ থেকে খোঁজ কমিটির কাছে যে সব নাম এসেছে বলে আলোচনায় এসেছে এর মধ্যে একাধিক ব্যক্তি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নন বলে সরকার ও আওয়ামী লীগ মনে করছে। সরকারের নীতিনির্ধারক একজন মন্ত্রী এবং খোঁজ কমিটির গঠনের প্রস্তাবক একজন মন্ত্রী বলেন, বিএনপি খোঁজ কমিটির কাছে যে সব নাম দিয়েছে ওই সব নাম তারা গোপন রেখেছে। প্রকাশ করেনি। এই কারণে তাদের তালিকায় কারা কারা আছেন সেটা চূড়ান্ত করে বলা যাবে না। কিন্তু যেভাবে বিভিন্ন মিডিয়াতে তাদের তরফ থেকে দেওয়া ব্যক্তিদের নাম নির্বাচন কমিশনের কমিশনার করার জন্য দেওয়া হয়েছে এ ব্যাপারে পর্যালোচনা করা হয়েছে। বিএনপির তালিকায় যাদের নাম আলোচিত হচ্ছে এরমধ্যে দুজন আওয়ামী লীগ ও সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
এ ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, তারা বিচারপতি মাহমুদুল আমীনের নাম দিয়েছেন। তাকে তো আওয়ামী মেনে নিবে না। কারণ তিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নন। তাছাড়াও তার ব্যাপারে আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি। সবটা বলতে চাই না। সালাউদ্দিন আহমেদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের তেমন কোনো আপত্তি নেই। শাহদীন মালিককে তারা কমিশনার হিসাবে মেনে নিবেন না। কারণ শাহদীন মালিক নির্বাচন কমিশনের কমিশনার হিসাবের দায়িত্ব সফলভাবে পালন করতে পারবেন না মনে করছেন। তার সেই যোগ্যতাও নেই বলে মনে করছেন।
তাসনীম সিদ্দিকীর ব্যাপারে বলেন, এই নাম যদি প্রস্তাব করে থাকে বিএনপি তাহলে বলতে হবে তিনি কে, তাকে কি যোগ্যতায় প্রস্তাব করা হয়েছে। তাকে কি আদৌ তার গ-ি কিংবা পরিম-লের বাইরে ভালো করে জানে। সেখানে দেশবাসী কেমন করে চিনবে। শিক্ষক হিসাবে আছেন কিন্তু কখনো কি তার সরকারি কর্মকা- পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে?
বদিউল আলম মজুমদারের ব্যাপারে ওই মন্ত্রী বলেন, তিনি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে কাজ করেন। সেটা ঠিক আছে কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন তা কি আছে? কারণ নির্বাচন কমিশনে যাকেই দায়িত্ব দেওয়া হোক না কেন তাকে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারি কর্মকা- পরিচালনা করারও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদেরে ব্যাপারে ওই মন্ত্রী বলেন, তিনি স্থানীয় সরকার বিষয় নিয়ে কাজ করেন। নির্বাচন সংক্রান্ত কথাবার্তা বলেন। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব কি নিতে পারবেন?
ওই মন্ত্রী বলেন, আসলে বিএনপি যে বিবেচনা করে নামগুলো দেওয়া দরকার ছিল সেটা ঠিক ওইভাবে বিবেচনা করেনি। তাদের চিন্তা চেতনা থেকে তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের বসানোর চেষ্টা করেছে। এই জন্য ওই ধরনের নাম প্রস্তাব করেছে। যদি তারা এটাও বিবেচনা করতো তাদের দেওয়া নামগুলো আওয়ামী লীগ ও চৌদ্দদলীয় জোটের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা এবং দায়িত্ব দিলে দক্ষতার সঙ্গে বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে একটা নির্বাচন করতে পারবে কিনা সেটা দেখতে হবে। কিন্তু তা দেখা হয়েছে বলে মনে হয় না।
তিনি আরও দাবি করেন, আওয়ামী লীগ যে নাম দিয়েছে সেই নামের দিকে তাকিয়ে দেখলে এবং বিএনপি পর্যালোচনা করতে পারবে কেমন ব্যক্তিদের নাম দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির তালিকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন, সুজন’র সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক ড. দিলারা জামান ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ-এর নাম রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছে ব্রি. জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমান, ড. তানসীম রহমান, ড. তাসনীম সিদ্দিকীর নাম রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে বিএনপি জোটের নামের মধ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. সা’দত হুসাইন, আলী ইমাম মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও সাবেক সচিব আসাফুদ্দৌলার নাম। তারা এই পাঁচজনের কেউ হলেই মেনে নিবেন।
সূত্র জানায়, বিএনপির নামের তালিকার বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের কাছে গ্রহণযোগ্য ও নির্বাচন পরিচালনার জন্য দক্ষ নন বলে মনে করছেন। মন্ত্রী বলেন, এরপরও বলবো খোঁজ কমিটি তাদের যোগ্যতা অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য সব দিক বিচার করুক এরপর সব দলের নামের তালিকা বিবেচনা করে নাম দিক। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক দলের তালিকা থেকে তারা যদি মনে করেন সুষ্ঠু নির্বাচন ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার মতো ব্যক্তি তারা বাছাই করতে পারছেন না তাহলে খোঁজ কমিটি তাদের বিচারে যাদেরকে যোগ্য মনে করবেন তাদেরকে নেওয়ার জন্য সুপারিশ করবেন। রাজনৈতিক দলের তালিকা থেকেই কমিশনার নিয়োগ করতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। তাদেরও নাম দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সম্পাদনা: সুমন ইসলাম