পরিবারকে জ্বরের কথা বলেছেন অ্যাসিড দগ্ধ পুলিশ কনস্টেবল দায়িত্ব পালনকালে হামলার শিকার হয়েছেন দুইবার
সুজন কৈরী: পুরান ঢাকার বংশালের মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে দুর্বৃত্তদের অ্যাসিডে দগ্ধ কনস্টেবল রফিকুল ইসলাম পরিবারকে জ্বর হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এছাড়া দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত দুইবার হামলার শিকার হয়েছেন তিনি।
ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের দুই নম্বর বিছানায় শুয়ে কাতর স্বরে গতকাল সকালে দগ্ধ রফিকুল বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা থানায়। আমার এক ছেলে ও দুই মেয়ে আছে। পরিবারের কেউ জানে না, আমি অ্যাসিড দগ্ধ। সবাই জানে, আমার জ্বর হয়েছে। তাই ছুটি নিয়ে বাসায় আছি। কারণ, আমার বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান যদি কেউ জানে, তবে তারা আমার থেকে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বে। আমার বাড়ি অজপাড়া গ্রামে। সেখানকার মানুষ তেমন পত্রিকা, টিভির খবর দেখে না। তাই এখন পর্যন্ত কেউ-ই আসল ঘটনার বিষয়ে জানতে পারেনি।’
উল্লেখ্য, গত ৩১ জানুয়ারি রাতে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে দায়িত্বরত অবস্থায় সন্দেহভাজন দুর্বৃত্তদের আটকের সময় অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হন কনেস্টবল রফিকুল ইসলাম। এছাড়া একই ঘটনায় আহত হন এএসআই নুরুজ্জামান। কনস্টেবল রফিকুল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আর নুরুজ্জামান মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রফিকুল ইসলাম জানান, ৩১ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে তিন সহকর্মীসহ তিনি মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে পুলিশের নিয়মিত তল্লাশি চৌকি বসিয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন। রাত ১২টার দিকে একটি মোটরসাইকেলে করে তিনজন ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের প্রত্যেকের মুখে কাপড় বাঁধা ছিল এবং হাতে ছিল টর্চলাইট। এছাড়া নম্বর প্লেটও ছিল কাপড়ে বাঁধা। সে কারণে সন্দেহ হলে মোটরসাইকেল আরোহীদের থামার জন্য সংকেত দেওয়া হয়। কিন্তু তারা না থেমে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে ধাওয়া করলে বাবুবাজারের কাছে গিয়ে মোটরসাইকেলটি পড়ে যায়। মোটরসাইকেলের চালকসহ তিনজনকে জাপটে ধরার চেষ্টা করেন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় চালক তার কাছে থাকা একটি ব্যাগ দিয়ে এএসআই নুরুজ্জামান ও কনস্টেবল রফিকুল আলমের মাথায় আঘাত করে। এতে দুজনই আহত হন। ওই ব্যাগের ভিতরে অ্যাসিড ভর্তি একটি বোতল ভেঙে গিয়ে তাদের শরীরের কিছু অংশ ঝলসে যায়। শেষ পর্যন্ত মোটরসাইকেল চালক জুবায়েরের পায়ে গুলি করে তাকে আটকে ফেলে পুলিশ। তবে পালিয়ে যায় অন্য দুই আরোহী। জুবায়ের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্য। রফিকুল বলেন, ‘আঘাত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুধু মুখ জ্বলছিল আর মনে হচ্ছিল যেন কোনো বোমা বা ককটেল মারা হয়েছে আমার ওপর। মুখে হাত দিয়ে আমি চিৎকার করছিলাম। অনেক সময় পর বুঝতে পারলাম আমাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে’।
পুলিশের এ কনেস্টবল জানান, ১৯৯১ সালে তিনি পুলিশবাহিনীতে যোগ দেন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত দুইবার হামলার শিকার হয়েছেন তিনি। ২০০৯ সালে মোহাম্মদপুর থানায় থাকাকালে এক আসামি ধরতে গিয়ে ধস্তাধস্তির সময় তার ডান হাত ভেঙে গিয়েছিল। আর পরেরটি হলেন অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার। তবে ঘটনার পর থেকেই পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা নিয়মিত তার খোঁজখবর নিচ্ছেন।
রফিকুলের চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শঙ্কর পাল বলেন, দগ্ধ পুলিশ সদস্য রফিকুল ইসলাম এখন সুস্থ রয়েছেন। তার শরীরের ৪ শতাংশ অংশ পুড়ে গেছে। দু-একদিনের মধ্যেই তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হবে। সম্পাদনা: শাহানুজ্জামান টিট