সড়ক সংস্কারের সময় গাছের প্রতি অবহেলা নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ
জাফর আহমদ: সিটি করপোরশেনের সমন্বয়হীনতায় মারা যাচ্ছে গাছ। গুলশান সড়কের পরিবেশ ও শোভা বর্ধনের কার্যক্রমের আওতায় লাগানো প্রায় দুই শতাধিক গাছ এরই মধ্যে মারা গেছে। পরিবেশের উন্নয়নে ও শোভা বর্ধনে এসব গাছ লাগানো হলেও পরিকল্পনাহীন সংস্কার কার্যক্রমের কারণে এসব গাছ মারা যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, গুলশান-১ ও ২ নম্বর সেকশনের মাঝে প্রায় শতাধিক গাছ মারা গেছে। এসব গাছের উচ্চতা ৩৪ থেকে ১৮/২০ ফুট পর্যন্ত। সড়ক ডিভাইডারের মাঝে কংক্রিটের রিং করে এর মধ্যে মাটি ভরাট করে এসব গাছ লাগানো ছিল। এসব গাছের বয়স ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বলে জানান স্থানীয়রা। ২০১৬ সালের শেষের দিকে গুলশানের সড়কের সংস্কার কাজ করার সময় এসব কংক্রিটের রিং ভেঙে নিচে থেকে মাটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্ষেত্রে বিশেষে গাছে শিকড়ও কেটে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে প্রায় শতাধিক গাছ মারা গেছে। মৃত গাছের পাশাপাশি রয়েছে জীবিত কয়েকশ গাছ।
অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন পরিবেশ রক্ষা ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সড়কের মাঝে এসব গাছ লাগিয়েছিল। বর্তমান ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনও পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষসৃজন করে চলেছে। ঢাকার সড়কের সৌন্দর্য রক্ষায় এসব গাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিল। ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির সময় কয়েকশ গাছ কেটে ফেলা হলে রাজধানীর শোভা বর্ধণকারী গাছ আলোচনায় আসে। এ ব্যাপারে পানি বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, রাজধানী ঢাকার পরিবেশ ও সৌন্দর্য রক্ষায় এসব গাছ লাগানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এসব গাছ লাগানো ও পরিচর্যায় সংশ্লিষ্ট বনবিভাগ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। যাতে টেকসই হয়।
এ বিষয়ে জানাতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রধান প্রকৌশলি বি.জে. মো. সাঈদ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সড়কের উন্নয়ন কাজ চলছে। গাছগুলোকে রক্ষার জন্য আমরা চেষ্টা করেছি। যেগুলো রক্ষা পাওয়ার কথা সেগুলো রক্ষা পেয়েছে। তিনি জানান, গুলশান-১ ও ২ এর মাঝে সড়ক ডিভাইডারের নিচে ড্রেন ছিল। সামান্য বৃষ্টির পানিতেই সড়কে পানি জমে যেত। এখন আমরা পানি নিচে নামিয়ে দিতে ডিভাইডারের সংস্কারের কাজ করছি। এখন যে গাছগুলো মারা যাচ্ছে সেগুলো পানি পাচ্ছে না। যেগুলো বেঁচে আছে সেগুলো পানি পাচ্ছে। সংস্কারের কাজ শেষ হলে প্রয়োজনে আউট সোর্সিং বা অন্য কোনো ব্যবস্থায় আমরা মরে যাওয়া স্থানে গাছ লাগাব।
এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে ঢাকার সামাজিক বন বিভাগীয় কর্মকর্তা হোসাইন মুহাম্মদ নিশাদ বলেন, গুলশানের রোড ডিভাইডারের মধ্যে অবস্থিত গাছের ব্যাপারে আমাদের কাছে থেকে ঢাকা উত্তর করপোরেশন থেকে কোনো পরামর্শ চায়নি। কোনো পরামর্শ বা কারিগরি সহায়তা চাইলে আমরা গাছ রক্ষা করে কিভাবে সড়কের সংস্কার কাজ করা যায় সে ব্যাপারে পরামর্শ দিতাম। সিটি করপোরেশন বা অন্য কোনো সংস্থা গাছ লাগানো, আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করতে হলে বনবিভাগ থেকে পরামর্শ নেওয়ার নির্দেশনা আছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে এ ব্যাপারে কোনো পরামর্শ নেওয়া হয়নি। তবে সিটি করপোরেশন অন্যান্য ক্ষেত্রে গাছ লাগানো ও গাছ অপসারণের ব্যাপারে আমাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছে। আমরা গাইডলাইন তৈরি করছি।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ২৫ শতাংশ গাছ থাকার কথা থাকলেও ঢাকায় আছে ৭ শতাংশেরও কম। বেসরকারি পরিবেশ উন্নয়ন সংগঠন পবার মতে, ঢাকা সিটি করপোরেশনের আয়তন ৩৮০ কি.মি. হলেও গাছের সংখ্যা কত তার নেই কোনো সঠিক পরিসংখ্যান। তবে ধারণা করা হয়, ২ থেকে ৩ লাখ গাছ আছে রাজধানীতে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এজন্য অপরিকিল্পিত ভবন নির্মাণকে দায়ী করা হয়। সড়ক ডিভাইডার ও পার্কে গাছ লাগানোর মধ্যে গাছের ঘাড়িতে কমিয়ে আনা যায়। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে গাছ লাগানোর ফলে তা টেকসই হচ্ছে না বলে মনে করছে পরিবেশবিদরা। সম্পাদনা: এনামুল হক