
ইচ্ছার যোগ্যতায় খোঁজ কমিটির ৬ সদস্য যোগ্য রাষ্ট্রপতির ইচ্ছা ৪+ প্রধান বিচারপতির ২ = ৬
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: খোঁজ কমিটির সদস্যদের নির্বাচন করার কোনো সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি নেই। রাষ্ট্রপতি তার ইচ্ছায় যাদের যোগ্য মনে করেছেন তাদের খোঁজ কমিটির সদস্য করেছেন। তাদের কাজের জন্য টার্ম অব রেফারেন্স রয়েছে সেই হিসেবে তারা কর্ম পদ্ধতি ঠিক করেন। তাদেরকে কি কি করতে বলে সেটাও রাষ্ট্রপতি বলে দেন। এ নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্নও তুলতে পারবেন না। সেভাবেই খোঁজ কমিটির ৪ জনের নাম রাষ্ট্রপতি ঠিক করেছেন। আর বাকি দুজনের নাম তিনি ঠিক করেননি তবে পদবী বলে দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতির কথামতো প্রধানবিচারপতি ২টি নাম ঠিক করেন। এর আগেও এভাবে খোঁজ কমিটির সদস্যদের নিয়োগ করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করার জন্য তাদের কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে, কারা হতে পারবেন কোন বিচারে তাদেরকে নিয়োগ করা হবে এমন কোনো সুনির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া নেই। নেই কোনো আইনও। তবে খোঁজ কমিটি সৎ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য নিজেরাই বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে কাজ করছেন। এসব ব্যক্তিদের নিয়োগ করার জন্য তারা তাদের মতো করে সব ঠিক করবেন। রাষ্ট্রপতির দফতর থেকে কেমন হবে ওই ব্যক্তিরা সেটা বলা হয়েছে। সে হিসেবে কাজ করছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে খোঁজ কমিটির সদস্যদের নিয়োগের ব্যাপারে কি নীতিমালা অনুসরণ করা হয় এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদের অতিরিক্ত সচিব বলেন, আলাদা করে কোনো নিয়ম নেই। যোগ্যতার মাপকাঠিও নেই। তবে রাষ্ট্রপতি তার এখতিয়ার বলেই খোঁজ কমিটির সদস্যদের নাম ঠিক করেন ও নিয়োগ করেন। এবারের কমিটিতেও রাষ্ট্রপতি তার কাছে যাদেরকে যোগ্য মনে হয়েছে তিনি তাদেরকে নিয়োগ করার জন্য বলেছেন। সে হিসেবে আমরা কাজ করি।
মন্ত্রিপরিষদের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা বঙ্গভবন থেকে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে চারটি নাম পেয়েছি। আর দুটি নাম প্রধান বিচারপতি দিবেন সেটা বলে দেওয়া হয়েছে। যে চারটি নাম পেয়েছিলাম এরমধ্যে অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম আর শিক্ষক শিরীন আখতারের নাম উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছিল। পিএসসির চেয়ারম্যান এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের নাম বলা ছিল না। পদবী বলা ছিল। এই চারজন রাষ্ট্রপতি নাম দিয়েছেন। এখানে নাম ঠিক করার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদের কোনো হাত নেই। বাকি দুটি নামের ব্যাপারে বলা হয়েছিল প্রধান বিচারপতি দিবেন। এদের একজন হবেন আপিল বিভাগের আর একজন দিবেন হাইকোর্ট বিভাগের। সেটাও প্রধান বিচারপতি দিয়েছেন। ওই দুজন বিচারপতিকে খোঁজ কমিটিতে রাখার জন্য তারা কোন আদালতের বিচারপতি হবেন এর বাইরে আর কোনো কিছুই বলা নেই। তাই বলা যায়, এই দুজনের নিয়োগের জন্য আলাদা করে কোনো ক্রাইটেরিয়া নেই। প্রধান বিচারপতি যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দিতে পারবেন। সেভাবেই নাম পাওয়া গেছে ও খোঁজ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য,খোঁজ কমিটি ও নির্বাচন কমিশনার যারা নিয়োগ পান তাদের দু-একজন ব্যতিক্রম ছাড়া সব সময় নির্বাচিত হন ঢাকা শহর থেকে। দেশের ঢাকার মানুষই কেবল সৎ, যোগ্য, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ? কেবল ঢাকা শহরেরই সবাই সৎ, যোগ্য, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ কিনা বা এমন কোনো কিছু আছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্র জানায়, ঢাকা শহরের হতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু এটা ওনারা যাদেরকে মনে করেন তাদেরকেই দেন। এবার তো ঢাকার বাইরে থেকে চট্টগ্রামের একজনকে খোঁজ কমিটিতে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সূত্র জানায়, এই ব্যাপারে নিয়ম নেই। তবে ঢাকা থেকেই দেওয়া হয় এজন্য সাংবিধানিক পদের প্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকাতে। সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্টও ঢাকাতেই। তাই ওইসব পদের সবাই ঢাকায়। শিক্ষকদের মধ্যে ঢাকার বাইরে থেকে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এবার নেওয়া হয়েছে একজনকে।
খোঁজ কমিটির সদস্যদের কোন কোন যোগ্যতার ভিতিত্তে বাছাই করা হয় ও যোগ্যতা বিচার করা হয় এবং নিয়োগ দেওয়া হয় এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি কি নিয়ম অনুসরণ করেন জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, খোঁজ কমিটির সদস্য কাদেরকে করতে হবে এই জন্য কোনো আইন যেমন নেই। তেমনটি যোগ্যতা মাপার জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়মও নেই। আর শিক্ষাগত যোগ্যতা কত হবে, অভিজ্ঞতা কত বছরের হবে এগুলো ওইভাবে বলা না থাকলেও দেশের বিভিন্ন সেক্টরের চাকরিতে সর্বোচ্চ পদে আসীন আছেন সেটাকেই যোগ্যতার প্রথম মাপকাঠি ধরা হয়। এছাড়াও বিচার করা হয় যাদের সাংবিধানিক পদে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে ও যাদের শিক্ষা খাতে অবদান রয়েছে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করছেন। সে হিসেবে এবারের কমিটি করা হয়েছে। এছাড়াও গতবার যে খোঁজ কমিটি করা হয়েছিল সেটাও দেখা হয়েছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কাদেরকে কমিটিতে রাখবেন সে ব্যাপারে। সেই হিসেবে নির্দেশনা দিয়েছেন। খোঁজ কমিটির সদস্যদের বাছাই ও নিয়োগের জন্য সুনির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া থাকার প্রয়োজনীয়তা রাষ্ট্রপতি অনুভব করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা তো করেছেন। এই জন্য তিনি নির্বাচন কমিশন আইন করার জন্য বলেছেন। সরকার এ ব্যাপারে আইন করলে তখন সেই আইনে সব কিছু বলা থাকবে। কারা কারা খোঁজ কমিটির সদস্য হবেন তাও বলা হবে যদি বিধান করা হয় যে খোঁজ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হবে। সরকার আইন প্রণয়ন করবেন। এটাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকেও বলা হয়েছে। তারাও আগামীর জন্য আইন করার কথা বলেছেন।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা খোঁজ কমিটির কাছে বলেছি কেমন ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দেখতে চাই। মানুষ কি চায় সেটাও বলেছি। যারা তাদেরকে নিয়োগ করবেন তাদের যোগ্যতা কি হবে সেটাও এখন নেই। তবে আমি মনে করি নির্বাচন আইন করলে এসব সমস্যাগুলো থাকবে না। এগুলোর সমাধান হয়ে যাবে। সেখানে নিয়ম বলা থাকবে সেই হিসেবেই তাদের নিয়োগ করা হবে। তিনি বলেন, আমার প্রস্তাব এই কমিশন নিয়োগের আগেই সরকার আইন করে ধীরে সুস্থে কমিশন গঠন করতে পারে। কমিশন গঠনে মতামত নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি যদি খোঁজ কমিটি গঠনে বিশিষ্টজনদের মত নিতেন তাহলে ভালো হতো।
সুজনের বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা কি হবে এটা দেখে খোঁজ কমিটি। আর খোঁজ কমিটির যোগ্যতা দেখেন রাষ্ট্রপতি। এই দুটির জন্য কোনো আইন নেই তাই ওইভাবে মাপকাঠিও নেই। আমি মনে করি এসব মাপকাঠি থাকা দরকার। খোঁজ কমিটির সদস্য যাদেরকে নিয়োগ করা হয় তারা বিভিন্ন দায়িত্বে থাকলেও তারা ক্লিন কিনা, গ্রহণযোগ্য কিনা, নিরপেক্ষ কিনা এবং তাদের বিতর্কিত ভূমিকা রয়েছে কিনা, দক্ষতা কেমন, কতটা নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন কমিশনারদের নাম বাছাই করতে পারবেন সেগুলো দেখতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছি কিনা তাও দেখতে হবে। প্রয়োজনে তার যে অবৈধ ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ নেই সেই জন্য সম্পদেরও বিবরণী নেওয়া যেতে পারে।
