তরিকুল ইসলাম সুমন: দেশে ছোটবড় মিলিয়ে ৪ লাখের উপরে নৌযান চলাচল করলেও শুধুমাত্র ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে বেশি নৌযানে কিছু নিবন্ধন করতে পারলেও অধিকাংশই থেকে যাচ্ছে অনিবন্ধিত। ফলে নানা দুর্ঘটনা ঘটছে যার দায় নিতে হচ্ছে সরকারকে। এ কারণে দেশর সকল নৌযানকে নিবন্ধনের আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে নৌপরিবহণ অধিদফতর।
অনিবন্ধিত নৌযানের পাশপাশি অপ্রচলিত নৌযান নিবন্ধনে নৌ সুমারি কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে এ অধিদফতর। এ জন্য ‘জাতীয় নৌযান ও যন্ত্রচালিত বোটের ডাটাবেইজড তৈরিকরণ ও নৌ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক ৪৪ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে অপ্রচলিত নৌযানের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখের উপরে। কিছু রয়েছে কাঠের বা স্টিলের আর কিছু নৌযানে সংযোজন করা হয়েছে যন্ত্র বা মটর। এসব নৌযানের দৈর্ঘ্য ৪০ মিটারের কম। যা সাধারণত যাত্রী পারাপার, মালামাল বহন, গৃহস্থালি পণ্য পরিবহন, বালি পরিবহণ, মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ এসব নৌযান কোনো রেজিস্টার্ড শিপইয়ার্ডে তৈরি হয় না। নিয়মনীতিরও তোয়াক্কা করে না। এদের অধিকাংশই নদীর তীরে স্থানীয় প্রযুক্তি ও বাড়ির উঠানে তৈরি হয়ে থাকে।
সকল নৌযান নিবন্ধিত না হওয়া, শিপইয়ার্ডে তৈরি না করায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আরোপিত মুসক ১১ কার্যকর করতে পারছে না নৌপরিবহণ অধিদফতর। নিবন্ধনের আগেই এসব রাজস্ব দেওয়ার বিধান থাকলেও তা পরিশোধ করতে না পারার কারণে মামলাসহ নানা হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে নৌযান মালিকসহ সংশ্লিষ্ট নৌযান সার্ভেয়ারদের।
নৌপরিবহণ অধিদফতর প্রধান প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক একেএম ফখরুল ইসলাম জানান, দেশের বিভিন্ন নদীতে চলাচলকারী সকল ধরনের নৌকা এবং জাহাজের তালিকা করা হবে। এজন্য দেশের প্রতিটি জেলায় আলাদা করে জরিপ করা হবে। এতে খেয়া পারাপার, মাছধরা (ছোট-বড় নৌকা কাঠের ও যন্ত্রচালিত, পণ্য পরিবহণে নিয়োজিত, যাত্রী পরিবহণে নিয়োজিতদের তালিকা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, নৌযান মালিকদের দায়বদ্ধতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশে মোট নৌযানের সংখ্যা নিরুপণ করা সম্ভব হবে। ফলে সরকার প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। এ প্রকল্পটি চলতি মাসের যেকোনো সময়ে একনেকে অনুমোদন দেওয়া হবে।
এনবিআর সূত্র জানায়, সমস্যা সমাধানের জন্য সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একটি কমিটি গঠন করেছ। এ কমিটি প্রয়োজনীয় আইন তৈরির পাশপাশি রাজস্ব আদায়ে নিয়মনীতি তৈরির কাজ করছে।
নৌপরিবহণ অধিদফতর সূত্র জানায়, নতুন কোনো নৌযান নিবন্ধনের জন্য সরকারকে ৫ প্রকারের রাজস্ব দিতে হয়। এগুলো হলো- সার্ভে ফিস (৯টি ক্যাটাগরিতে নেওয়া হয়), রেজিস্ট্রেশন ফি ৭টি ক্যাটাগরিতে নেওয়া হয়, অনুমিত আয়কর, ভ্যাট এবং কঞ্জারভেন্সি টাকা নেওয়ার বিধান রয়েছে। নৌপরিবহণ অধিদফতর সূত্র আরও জানায়, ২০০০ সাল থেকে নৌযানের নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম বাড়তে থাকে। ২০০০ সালে নৌযান নিবন্ধনে সংখ্যা ১০৪টি থেকে বর্তমানে প্রায় ১১ হাজার নৌযানে উন্নীত হয়েছে। সম্পাদনা: এনামুল হক