বিপ্লব বিশ্বাস : রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে বহুকাল ধরে বয়ে চলা বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, ধলেশ্বরী, বংশী ও বালু নদী অতিদূষণে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। এই নদীগুলোর পানি দেখে মনে হয় যেনো আলকাতরার স্রোতধারা বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে বুড়িগঙ্গার অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ।
আইডিইবির তথ্যানুসারে, ধলেশ্বরী ও বংশী নদী বাদে অন্য চারটি নদীতে প্রতিদিন মিশে যাচ্ছে ১ হাজার ৯৩টি শিল্প কারখানার বর্জ্য। এর মধ্যে ট্যানারি শিল্প ৩শটি, পোশাক শিল্প ৫শটি, ওষুধশিল্প ১২৫টি ও অন্যান্য শিল্প রয়েছে ১৬৮টি। শুষ্ক মৌসুমে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় বিষাক্ত তরল বর্জ্যরে আধারে পরিণত হয়েছে নদীগুলো। যা বিষিয়ে তুলছে আশপাশের পরিবেশকে। নদী বাঁচাতে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিলেও সংশ্লিষ্ট টাস্কফোর্স এগুচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায়।
নৌবাহিনীর এক প্রতিবেদনে বলছে, ঢাকার চারপাশের নদীতে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য ফেলা হয়। মোট বর্জ্যরে ৬০ শতাংশই ট্যানারিসহ অন্যান্য শিল্পখাতের। বাকি ৪০ শতাংশের মধ্যে ইট, কাঠ, প্লাস্টিক ও ধাতবপদার্থসহ বিভিন্ন কঠিন বর্জ্য ১৫ শতাংশ, ঘর-গৃহস্থালিসহ অন্যান্য বর্জ্য ১৫ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ রয়েছে নৌযান বর্জ্য। অক্সিজেন শূন্যতায় শুষ্ক মৌসুমে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগের কিছু অংশ অনেকটাই মাছশূন্য হয়ে পড়ছে। একই কারণে অন্য নদীগুলোও এই ভয়াবহ পরিণতিকে আলিঙ্গন করছে ধীরে ধীরে। দূষণ ও দখল রোধে নৌ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০০৯ সালে গঠিত টাস্কফোর্স কিছু অভিযান পরিচালনা ও কর্মকৌশল নির্ধারণ করলেও এখনো শুরু করতে পারেনি চূড়ান্ত কাজ। নদী রক্ষায় সরকারকে আরো বেশি তৎপর হওয়ার তাগিদ দিচ্ছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘নদী দূষণ রোধ করার ক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার কম। সরকার উন্নয়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে সব সময় শিল্প প্রতিষ্ঠানের পক্ষই নিয়ে নেয়। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ বুড়িগঙ্গা রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা। তাদের মতে, নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা গেলে ফিরবে ঢাকার নদীগুলোর পুরনো রূপ। সম্পাদনা: এনামুল হক