এক ডজন বান্ধবী, ১১০টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট!
ডেস্ক রিপোর্ট: উদয়নের বান্ধবীদের জেরা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তদন্তকারীরা। গতকাল রাত থেকে কয়েক দফা জেরার পর উদয়নের এক ডজন বান্ধবীর কথা জানা গেছে। এরমধ্যে ভোপালের রিনা ও পূজা নামে দুই বান্ধবীর কথা জানিয়েছে উদয়ন। ওই দুজনের বাড়িতে অবাধ যাতায়াত ছিল উদয়নের। সে আকাক্সক্ষার মতো অন্য কাউকেও খুন করেছে কি না তা জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা। আকাক্সক্ষা খুনের পিছনে কী মোটিভ ছিল, তা জানার চেষ্টা করতেই উদয়নের একাধিক মহিলা আসক্তির কথা জানা যায়। তার ১১০টি ভুয়ো ফেসবুক প্রোফাইল রয়েছে। এই ফেসবুক প্রোফাইলগুলো চালু রাখতে সে একটি ডায়রি ব্যবহার করত। সেই ডায়রিতে প্রতিটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড লেখা থাকত। আজকাল
গতকাল রাতে বাঁকুড়া থানার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা উদয়নকে জেরা করেন। এরপর ১০ জন পুলিশ অফিসারের একটি বিশেষ দল উদয়নকে বিকেল ৫ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত ম্যারাথন জেরা করে। তাকে এখন বাঁকুড়া থানার পৃথক একটি লকআপে রাখা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত আকাক্সক্ষা খুনের মোটিভ জানা যায়নি উদয়নের কাছ থেকে।
জেরাকালে গতকাল বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তরই হিন্দিতে দেয় উদয়ন। বেশিরভাগ সময়ই উদয়ন ছিল নির্লিপ্ত ও ভাবলেশহীন। উদয়ন যেখানে থাকত, সেখানে তল্লাশি করে ‘ডেভিলস নট’ নামে একটি সিনেমার ডিভিডি পাওয়া গেছে। এটি একটি বায়োগ্রাফিকাল ক্রাইম থ্রিলার। উদয়নের ব্যাঙ্কনথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উদয়ন বাঁকুড়া কোর্টে জানিয়েছে, তার পূর্বপুরুষদের বাড়ি ছিল হাওড়া সালকিয়ায়। সেখানে এখনো তাদের আসবাবের পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। দোকানের নাম দাস ফার্নিচার। উদয়নের বাবারা দু’। বাবা বড়, কাকার নাম খোকন দাস। তিনি মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। এখন অবসরপ্রাপ্ত। সল্টলেক করুণাময়ী বাস টার্মিনাসের কাছে কাকার বাড়ি।
উদয়নের কাকা জানিয়েছেন, ভাইপোর কীর্তির জন্য তাঁর মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। তিনি ২০০৯ সালে একবার দাদার মোবাইলে ফোন করেছিলেন। সেই ফোন কেউ ধরে নি। তবে কিছুক্ষণ পরে এসএমএস এসেছিল, পার্টিতে আছি, বিরক্ত করবেন না। তারপরে আর দাদার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি খোকনবাবু। তাঁর অনুমান, ভাইপো উদয়নই বাবার মোবাইল থেকে মেসেজ পাঠিয়েছিল। উদয়ন ইংরেজি, হিন্দি ও বাংলা এই তিনটি ভাষাতেই কথা বলতে অভ্যস্ত। উদয়নের মায়ের বাড়ি ভোপালে। সেই সুবাদে সে ভোপালেই বড় হয়েছে। বাঁকুড়া আদালতে বিচারক সওয়াল জবাব শুনে উদয়নকে ৮ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারক তাঁর নির্দেশে আরও বলেন, হেফাজতে থাকার সময় আসামির ওপর কোনো রকম শারীরিক বা মানসিক চাপ সৃষ্টি করা যাবে না। প্রতি ২৪ ঘণ্টা অন্তর তার ডাক্তারি পরীক্ষাও করাতে হবে। আদালতে সওয়াল জবাবের পুরো সময়টাই কাঠগড়ায় ভাবলেশহীন মুখে দাঁড়িয়েছিল উদয়ন। কোনো দুশ্চিন্তা বা অনুশোচনার অভিব্যক্তি বিন্দুমাত্র দেখা যায়নি তার মুখে। সোমবার রাতে বাঁকুড়া থানায় নিয়ে আসার পর থেকেই উদয়নের হাবভাবে পুলিশ অফিসাররাই বিস্মিত। উদয়নকে আদালতে নিয়ে আসার সময় দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় মানুষজন। তাঁদের দাবি ছিল, নৃসংশ এই খুনিকে মৃত্যুদ- দেওয়া হোক। পুলিশ কোনো মতে আদালতে ঢোকায় উদয়নকে। কাঠগড়ায় তুলে দেওয়া হলে সে সেখানে চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল। উদয়নকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে তিন- তিনটি খুন করে মৃতদেহ লোপাট করেছে। ৫ ফুট কয়েক ইঞ্চি লম্বা ও শ্যামলা গাত্রবর্ণের অতি সাধারণ চেহারার যুবক উদয়নকে একবারের জন্য মাথা নিচু করতেও দেখা যায় নি। উদয়নকে জেরা করে পুলিশ এখনও অনেক কিছুরই উত্তর পাচ্ছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জেরার অভিমুখ ঘুরিয়ে দিচ্ছে উদয়ন। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরের বদলে পাল্টা প্রশ্ন করছে উদয়ন। এর ফলে জেরায় নতুন তথ্য উঠে আসার বদলে বিভ্রান্তি বাড়ছে।সম্পাদনা: মাসুম মুনাওয়ার