
বললেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমি বিএনপির মুখ বন্ধ করতে পারবো না
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, বিএনপি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে আমার সমালোচনা করছে। তারা হতাশ হয়েছে বলছে। আরও অনেক কিছুই বলছে, আমি এগুলো গণমাধ্যমে দেখছি। কিন্তু আমি তো আর কারো মুখ বন্ধ করতে পারবো না। কোন দল কিভাবে নিচ্ছে সেটাতো তাদের ব্যক্তিগত অভিমত। তবে আমি মনে করি শুধু শুধু অভিযোগ করা উচিত নয়। কমিশনের উপর আস্থা রাখা দরকার। তিনি বুধবার দুপুরে এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলছে, আপনি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেননি বলে ওএসডি করা হয়েছিল। আরও বলছেন যুগ্ম সচিব হিসাবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলেও এর পরে আর কাজের অভিজ্ঞতা নেই এই ব্যাপারে তিনি বলেন, বিএনপি দেশ পরিচালনা করেছে। তারা অনেক অভিজ্ঞ। তাই আমি বলবো তারা যদি সমালোচনা না করে সাজেশন দেন সেটা ভালো হয়। আমি তো মনে করি যতদিন দায়িত্ব পালন করেছি, ততদিন নিষ্ঠার সঙ্গে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি।
বিএনপির অভিযোগ চারদলীয় জোটের সময়ে আপনাকে চাকুরিচ্যুত করায় আপনি বিএনপির প্রতি বিরাগ আর আওয়ামী লীগের প্রতি অনুগত থাকতে পারেন এই ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা বিএনপি মনে করছে। কিন্তু আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি আমি জনতার মঞ্চে ছিলাম না। তাছাড়া আমি সব সময় আমার দায়িত্ব পালন করেছি নিষ্ঠার সঙ্গে। আমি চেষ্টা করেছি। নির্বাচন কমিশনেও আমি আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবো। তাছাড়া কোনো দলের উপর আমার অনুরাগ ও বিরাগ নেই। সেখানে এই ধরনের চিন্তা না করাই ভালো হবে।
বিএনপির এই সন্দেহ দূর করার জন্য কি করণীয় আছে বলে মনে করছেন তিনি এ ব্যাপারে বলেন, আমরা যখন কাজ শুরু করবো, কাজেই তারা দেখবেন। আমরা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেব।
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
শপথ এর ব্যাপারে আপনাকে কিছু জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। জানালে সেই বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
আপনি তো কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছিলেন ওই বৈঠক বাতিল হলো কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈঠক বাতিল করা হয়েছে সময়ের অভাবে। আসলে আমার এখন ভীষণ ব্যস্ততা। তাই বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। আর বৈঠক বাদ দেওয়া হলেও ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।
পরবর্তীতে কবে নাগাদ বৈঠক করতে পারেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই বৈঠক আর হবে না। তবে শপথ গ্রহণ করার পর এ ব্যাপারে কমিশনে গিয়েই দিন ঠিক করা হবে।
বিএনপি আপনার প্রতি অনাস্থা এনেছে। এটাকে কি প্রথম একটি ধাক্কা হিসাবে দেখছেন কিনা প্রশ্নের জবাবে বলেন, তারা আমার প্রতি অনাস্থা আনতে পারে এমন কোনো কাজই আমি করিনি। তাদের আস্থা রাখা উচিত।
এখন আপনার ব্যস্ততা কি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন অন্যান্য বেশকিছু কাজে ব্যস্ত আছি। একদম সময় পাচ্ছি না। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছি। অনেকের সঙ্গে কথা বলছি। সেই সঙ্গে আরও কিছু কাজ গুছাতে হচ্ছে।
কমিশনের বিষয়ে কি ভাবছেন? তিনি বলেন, এখনই কিছু করার কথা ভাবছি না।
বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য আপনার কি প্রচেষ্টা থাকবে, তিনি বলেন, আমি সব কমিশনারদের সঙ্গে বসেই সব দলের অংশগ্রহণের জন্য কাজ করবো।
আপনি কি জানেন কোন কোন রাজনৈতিক দল আপনার নাম প্রস্তাব করেছিল? তিনি বলেন, আমি জানি না কোন রাজনৈতিক দল আমার নাম প্রস্তাব করেছে। কারণ আমার নাম দেওয়ার আগে কোনো দল আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি, কথাও বলেনি। কোনো মতামতও নেয়নি। এই কারণে আমার বিষয়টি জানা নেই।
আপনার নাম বিএনপি ও আওয়ামী লীগ প্রস্তাব করেনি, বড় তিনদলের কেউ না হলেও করেছিল বাম ঘরানার দল। এই বিষয়টি কেমন করে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড়দলগুলো কেন প্রস্তাব করেনি সেটাতো আর আমি বলতে পারবো না। কারণ কোন দল কি চিন্তা করবে সেটা তাদের ব্যাপার। সেখানে প্রভাব খাটাতে পারি না।
আপনি কি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এই ব্যাপারে তিনি জানান, আমার কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা নেই। কোনো বড় দলের সঙ্গে কোনোদিন জড়িতও ছিলাম না। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে পড়াকালীন ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। সেখানে আমার ১৯৬৬-১৯৭২ সাল পর্যন্ত কেটেছে। ওই সময়ে সব ছাত্ররাই কোনো কোনো ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকতো। আমিও ছিলাম। আমি ফজলুল হক হল ইউনিয়নের ছাত্রলীগ থেকে নাট্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলাম।
হুদা কমিশন ছিল এই যাবতকালে অন্য সব কমিশনের চেয়ে বেশি সফল, তাদের সময়ে অনেক বড় বড় কাজ হয়েছে, আপনার সময়ে কি করবেন বলে ভাবছেন তিনি বলেন, এখনও তা বলতে পারছি না। আগে শপথ ও দায়িত্ব নেই তারপর ঠিক করবো।
বর্তমান কমিশন বিতর্কিত, সমালোচিত, এরপর আপনার কমিশনের দায়িত্ব নিচ্ছেন, সেই কমিশন কিভাবে সফল করবেন এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমান বিদায়ী কমিশন নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে আমাদের কমিশন আশা করি সব সময়ের চেয়ে ভালো কাজ করবে। আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি থাকবে না। পাঁচ বছরের মধ্যে যা যা করণীয় তাতো করবোই। সেই সঙ্গে আরও যে কাজ করার সুযোগ আছে সেগুলো করবো।
পুরো দেশবাসীর মনোভাব আপনাদেরকে বুঝতে হবে, তারা কি চায় সেটা কি এখনো বুঝতে পারছেন, তিনি বলেন, সেটাতো বুঝতে হবে। এখনো সেভাবে বোঝা যাচ্ছে না। তবে একটু সময় গেলেই বোঝা যাবে।
বর্তমান কমিশনের চারজনতো বিদায় নিয়েছেন, একজন আছেন, সেই ক্ষেত্রে আপনি কি মনে করেন আপনারা নিযুক্ত হওয়ার পর এখন কমিশন শূন্য থাকলেও শপথ গ্রহণ করতে না পারার কারণে দায়িত্ব নিতে পারছেন না, তা কি ঠিক আছে? তিনি বলেন, এটা আসলে নির্ভর করে প্রধান বিচারপতির উপর। তিনি শপথ পড়ালে ৯ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব হতো। তবে শপথ গ্রহণের বিষয়টি তার এখতিয়ার।
বিএনপির মহাসচিবের অভিযোগ, একজন বিতর্কিত সাবেক সরকারি কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত কোনো প্রতিষ্ঠান নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। কাজেই এই সিইসির নেতৃত্বে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে না। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরাগভাজন এই কর্মকর্তার সে সময় দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। যুগ্ম সচিব হিসেবে চাকরি জীবন শেষ করেন। অতিরিক্ত সচিব ও সচিব হয়েছেন শুধুই কাগজে। প্রকৃতপক্ষে তিনি একদিনের জন্যও অতিরিক্ত সচিব কিংবা সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নাই। এসব পদে দায়িত্ব পালনে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়া এমন হওয়ার কথা নয়। বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার বিষয়টি কমিশনের কাজ করার সময়ে প্রভাব ফেলতে পারে। তারা আরও মনে করছেন, সিইসির বিএনপির বিষয়ে মনে ক্ষোভ থাকতে পারে, আওয়ামী লীগ শাসনামলে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রতি অনুরাগ পোষণ করতে পারে। তিনি কতটুকু নিরপেক্ষতা অবলম্বন করবেন, সে ব্যাপারে প্রশ্ন রয়েছে। একটি নির্বাচন কমিশনের যাত্রার শুরুতে আস্থার সংকট ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যার জন্ম দিতে পারে।
বিএনপি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব দিয়ে বলেছিল, সরকারি চাকরি শেষে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিতদের ইসিতে অন্তর্ভুক্ত না করতে। কারণ সরকারের অনুগ্রহভাজনদেরই এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। কারও কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ কিংবা কারও প্রতি ক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি যেন নির্বাচন কমিশনের মতো নিরপেক্ষ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ না পান। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তাই হয়েছে। কমিশনারদের ব্যাপারে বলেছেন, জাতির সামনে আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়ে আসবে। সিইসি সম্পর্কে যদি এই অভিযোগ থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের কী অবস্থা দাঁড়াচ্ছে তা আমরা সকলে বুঝতে পারছি। সম্পাদনা: বিশ্বজিৎ দত্ত
