ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন ও পরকালীন পুণ্য
মুফতি আব্দুর রহমান আল মাদানী
প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে নিয়ত সংশোধন করে নেয়া উচিত। জ্ঞান অন্বেষণ হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর কাছে উত্তম বিনিময় পাওয়ার আশায়। জ্ঞান অন্বেষণকে কখনোই দুনিয়া অর্জন ও মানুষ থেকে বিনিময় গ্রহণের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতিত একমাত্র দুনিয়া অর্জনের আশায় ইলম (জ্ঞান) অন্বেষণ করলো, কিয়ামতের দিন সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। [ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, আহমাদ]
কিয়ামত দিবসে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জ্ঞানীকে তার জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন করে বলবেন ‘কি কারণে তুমি জ্ঞান অর্জন করেছে?’ এবং জ্ঞান অনুযায়ী আমলের উপর ভিত্তি করে আল্লাহ তাকে প্রতিদান দিবেন। জ্ঞানের মাধ্যমে অহংকার করা, নেতৃত্বের ইচ্ছা করা, ভক্তবৃন্দ বানানো, মানুষ থেকে সম্মানের আশা রাখা ও মাহফিলের মধ্যমণি হওয়ার আশা ব্যক্ত করা থেকে বিরত থাকা উচিত। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বিষয়গুলো থেকে সতর্ক করে বলেন, যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণ করে তার মাধ্যমে জ্ঞানীদের সঙ্গে অহংকার করা, নির্বোধদের সাথে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়া ও মানুষ থেকে সম্মান পাওয়ার আশায় আখেরাতে তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। [তিরমিজি]
জ্ঞান অর্জনকারীদের জন্য সর্বক্ষেত্রে ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ, সহনশীল, নমনীয় ও জীবনকে রাসুলের আদর্শ দ্বারা অলংকৃত করা উচিত। নিশ্চয় যে ব্যক্তি কথা ও কাজে রাসুলের আদর্শকে পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করবে তার মুখ দিয়ে হিকমতপূর্ণ ও উপকারী কথাই বের হবে।
নিজের সকল ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা, ভালবাসা-সাধনা ও চেষ্টা-মেহনত ইলম অর্জনকে কেন্দ্রে করে হওয়া উচিত। বিভিন্ন কাজে নিজেকে জড়ানো থেকে বিরত রাখা চাই। কেননা চিন্তা-ভাবনা যখন চতুর্দিকে ছড়িয়ে পরবে তখন জ্ঞানের গভীরতা ও সুক্ষ্মাদি-সুক্ষ্ম বিষয় অর্জন করা থেকে তুমি অক্ষম হয়ে পরবে। জ্ঞান অন্বেষণ কারীদের জন্য হালাল অল্প খাবর গ্রহণ করা উচিত। কেননা অধিক খাবার গ্রহণ অলসতা ও ঘুমকে বাড়িয়ে দেয় এবং অনূভুতি শক্তি ও মেধাকে দুর্বল করে দেয়। সর্বদা নিজেকে আল্লাহর জিকিরে লিপ্ত রাখা, সন্দেহপূর্ণ কাজ থেকে বিরত থাকা ও অপ্রয়োজনীয় কথা-বার্তা থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা অধিক কথা-বার্তা উলামা কেরামের গিবত ও মূর্খদের সাথে ঝগড়ার সূচনা করে। তবে কল্যাণমূলক কথা বলতে বাধা নেই। কেননা ভালো কথাও সাওয়াবের ক্ষেত্রে সদকার সমতুল্য। জ্ঞান অর্জনকারীদের জন্য অন্তরকে সকল পাপাচার, অপরাধ, গুনাহ, ধোকাবাজি, বাড়াবাড়ি ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে বিরত রাখা উচিত। যাতে করে জ্ঞান গ্রহণ, সংরক্ষণ ও সুক্ষ্ম বিষয়াবলী সম্পর্কে অবগত হতে পারে। কেননা ইলম হচ্ছে নুর। আর আল্লাহ এই নুর কোনো অপবিত্র অন্তরকে দিবেন না।
ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে সার্বজনীন ও কল্যাণমূলক ইলম নির্বাচন করা চাই। এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতে যে ইলমের প্রতি বেশি মুখাপেক্ষী তার মাধ্যমে শুরু করা। একজন আলেম, পরহেজগার ও খোদাভিরু ব্যক্তিকে শিক্ষাগুরু হিসেবে নির্বাচন করা উচিত। ইমাম মালেক রহ. বলেন, এই ইলমই হলো দ্বীনের মূল ভিত্তি। সুতরাং এই দ্বীন তোমরা কার থেকে গ্রহণ করছ ভালো করে বিবেচনা কর।