ডেস্ক রিপোর্ট: কটা মানুষ, অথচ মানুষ নয়। একটা ক্যানভাস, অথচ ক্যানভাস নয়। বলা ভাল, মানুষ-ক্যানভাস। নাম তাঁর টিম স্টেইনার। তাঁর পিঠ জুড়ে আঁকা বাহারি উল্কি বা ট্যাটু। দেখলেই চোখ ধাঁধিয়ে যায়। মানবদেহ ধারণ করে থাকলেও তাঁর পিঠ আদতে একটি ক্যানভাস। সেটি আবার বিক্রিও হয়ে গেছে! আজকাল
এই গল্পের গোড়াটা জানতে গেলে এক দশক পিছিয়ে যেতে হয়। স্টেইনারের বান্ধবীর সঙ্গে দেখা হয় বেলজিয়ামের এক শিল্পীর। তাঁর নাম উইম ডেলভয়। এই শিল্পী এক বিচিত্র কারণে বিতর্কিতও বটে। তিনি মূলত উল্কি নিয়ে কাজ করেন। তিনি উল্কি চর্চার জন্য বেছে নিয়েছিলেন শ্বেত শূকরকে। চার পায়ের এই প্রাণী কালো রঙের হলে যতটা শ্রীহীন লাগে তার উল্টোটা হয় গায়ের রঙ সাদা হলে। তাই শ্বেত শূকরের গায়ে উল্কি আঁকার চর্চা শুরু করায় তাঁর নাম বিতর্কে জড়িয়েছিল। স্টেইনারের বান্ধবীকে শিল্পী বলেন, বিতর্ক এড়াতেই তিনি মানুষ ক্যানভাসের খোঁজ করছেন। সেই ক্যানভাসে তিনি একটি নতুন কাজে হাত দিতে চান। এই প্রস্তাব বান্ধবী মারফত স্টেইনারের কাছে পৌঁছতেই তিনি রাজি হয়ে যান। এই সাক্ষাতের বছর দুয়েক পরের কথা। স্টেইনারের পিঠে উল্কি আঁকা শুরু করেন ডেলভয়। লাল নীল হলুদ কালো কত না রঙ! কঙ্কালের ছবি থেকে শুরু করে মাছ, শিশু, পদ্মফুল নানা বিষয়ে বিচিত্র সেই ক্যানভাসের রূপ। সেই উল্কি আঁকতে মোট ৪০ ঘণ্টা সময় লেগেছিল।
স্টেইনারের বক্তব্য, ‘এর থেকে বড় শিল্পকলা কিছু হতে পারে না। যাঁরা উল্কি আঁকেন তাঁদের এই সময়ের নামজাদা শিল্পীরা সে ভাবে স্বীকৃতি দিতেও চান না। তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই, ক্যানভাসে ছবি আঁকা এক জিনিস। আর মানুষের চামড়ায় সুঁচ দিয়ে ছবি আঁকা একেবারে অন্য ব্যাপার।’ ডেলভয়ের এই আজব সৃষ্টির কথা দ্রুত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এক জার্মান শিল্প সংগ্রাহক রিক্মানুষ-ক্যানভাসটি কিনে নেন এক লক্ষ ৩০ হাজার পাউন্ডে। ২০০৮ সালের এই লেনদেনে স্টেইনার মোট অংকের এক তৃতীয়াংশ পেয়েছিলেন। ঠিক হয়েছে স্টেইনার যতদিন জীবিত থাকবেন তাঁকে আর্ট গ্যালারিতে জামা খুলে পৃষ্ঠদেশ প্রদর্শনের জন্য বসে থাকতে হবে। তাঁর পিঠের মালিক এখন তিনি নন, অন্য কেউ! তাঁর অবর্তমানে পিঠের চামড়া খুলে নিয়ে ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখা হবে। স্টেইনার বলেন, ‘আমার পিঠ এখন ছবির ফ্রেমের কাজ করছে। এটার মালিক অবশ্যই রিনকিং।’ গ্যালারিতে তাঁকে দেখে অনেকেই মূর্তি ভেবে নেয় প্রথমে। অমন নিশ্চল অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টার বসে থেকে তিনি প্রায় মূর্তির মতোই হয়ে যান দর্শকদের কাছে। এরপর তাঁকে জীবন্ত আবিষ্কার করে দর্শকেরা স্বভাবতই অবাক হয়ে যান! এটা নিয়ে বিকর্তও কম হচ্ছে না। বিশেষ করে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এভাবে একটা মানুষকে ঠায় প্রদর্শনীতে বসিয়ে রাখা মানবাধিকার লঙ্ঘনেরই সামিল। এটাকে তাঁরা এক ধরনের দাসপ্রথা বলে মনে করছেন। তবে এ সব সমালোচনা যাঁর জন্য, তার কোনো খেয়াল নেই এ ব্যাপারে। বিশ্বের বিভিন্ন শহরে তাঁকে শো পিস হিসেবে হাজিরা দিতে হয়। ২০০৬ এর প্রথম প্রদর্শনীতে বসেন। তারপর এক দশক পার হয়ে গেলেও মানুষ-ক্যানভাসের ভূমিকায় মোটেই বিরক্ত নন স্টেইনার। সম্পাদনা: মাসুম মুনাওয়ার