ব্যাংকে টাকা রাখা কোটিপতিদের করের আওতায় আনতে হবে :ড. ফরাস উদ্দিন
জাফর আহমদ: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. ফরাস উদ্দিন বলেছেন, শুধু সরকারি কর্মচারীদের আয়কর রিটার্নের আওতায় আনলেই রাজস্ব বৃদ্ধি হবে না, রাজস্ব বৃদ্ধি করতে ব্যাংকে টাকা রাখা কোটিপতিদের করের আওতায় আনতে হবে। এ সব কোটিপতি ব্যাংকের টাকা থেকে প্রাপ্ত সুদের উপর ১৫ শতাংশ হারে কর দিলেও নাম পরিচয় জেনে যাওয়ার ভয়ে টিআইএন রেজিস্ট্রেশন নিয়ে ১০ শতাংশ হারে কর দিতে চায় না। এ সব লোককে খুঁজে করে করের আওতায় আনতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেইলী রোডের অফিসার্স ক্লাবে রাজস্ব বোর্ডের উপ-কর কমিশনার সম্মেলন-২০১৭ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এনবিআর এর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই এর সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ, হিসাববিদ হুমায়ুন কবীর, রাজস্ব বোর্ডের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সমালোচনা করে ড. ফরাস উদ্দিন বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং এর নামে যা হচ্ছে তা আসলে ব্যাংকিং নয়, মানি ট্রান্সফার। এটা একটা তামাসা। তিনি বলেন, ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে যেখানে এক শতাংশের নীচে খরচ রাখা হয়, সেখানে মোবাইলের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে খরচ লাগে তার তিনগুণ। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
কৃষি খাত ও খুচরা পর্যায়ের ওষুধ বিক্রি থেকে রাজস্ব আদায়ে রাজস্ব বোর্ডকে মনোনিবেশ করার জন্য পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গর্ভনর। তিনি বলেন, কৃষি প্রক্রিয়া করণে অনেকে ভাল ব্যবসা করছে। কোনো রাজস্ব না দিয়ে তারা অনেকদিন ধরে ব্যবসা করছে। এখন সময় এসেছে তাদের করের আওতায় আনার। মাঠপর্যায়ে ওষুধ বিক্রি সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে কি হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। কত টাকার ওষুধ কত টাকায় বিক্রি করছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। তাদের মূসকের আওতায় আনতে হবে। তাদেরও বিক্রি করার সময় হিসাব রাখতে হবে। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এডিআর এর ক্ষেত্রে আইনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।
ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা রাজস্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘অস্বচ্ছ’ হবে তাদের তালিকা প্রকাশ করার তাগিদ দেন এফবিসিসিআই এর সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ। তিনি বলেন, আমরা স্বচ্ছতার সাথে ব্যবসা বাণিজ্য করতে চাই। সরকারের উন্নয়নের কাজেও অংশগ্রহণ করতে চাই। কোন ব্যবসায়ী অস্বচ্ছ থাকতে চায়-তাদের তালিকা দেওয়া হোক তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো। রাজস্ব আদায়ে কোন ক্ষেত্রে কি ছাড় আছে তাও পরিষ্কার করার জন্য পরামর্শ দেন তিনি। মাতলুব আহমাদ বলেন, এ সম্পর্কে সচেতন না থাকার কারণে অনেকে রাজস্ব দিতে চায় না।
আঙ্গুল বাকা করে রাজস্ব আদায়ের মানসিকতা দূর করার আহ্বান জানান হিসাববিদ হুমায়ুুন কবীর। তিনি বলেন, কর আদায়ের বিষয়টি লোকাল বাসের ভাড়া আদায়ের মতো নয়, যে হুংকার দিয়ে জোর করে ভাড়া আদায় করতে হবে। রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি হলো মিউচ্যুয়াল বোঝা পড়ার বিষয়। সম্পাদনা: নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী