জিয়ার দৃষ্টিতে এরশাদ একজন প্রভুভক্ত জীবের মতো
জাফর আহমদ: জেনারেল এরশাদই ছিল জিয়াউর রহমানের দৃষ্টিতে তখন সব থেকে বেশি যোগ্য ব্যক্তি এবং একজন প্রভুভক্ত জীবের মতো। জিয়ার প্রতিটি নির্দেশ তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। তাই জে. জিয়া বলতেন, এরশাদ হচ্ছে তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও যোগ্য লোক, যাকে তিনি সেনাবাহিনীর প্রধানের আসনে বসিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা তার সদ্য প্রকাশিত গ্রন্থ ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’এর বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম’ প্রবন্ধে এ কথা তুলে ধরেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অধিকাংশকে নৃশংসভাবে হত্যা পরবর্তী পরিস্থিতির বর্ণনা করে শেখ হাসিনা লিখেন, মুশতাকের পর প্রধান বিচারপতি সায়েম সাহেব অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির পদে দায়িত্ব পেলেন। তাঁর উপর দায়িত্ব পড়লো একটা নির্বাচন করবার। কিন্তু একদিন জেনারেল জিয়া এরশাদ সাহেবকে ব্যবহার করলেন। মার্শাল ল’ বহাল রেখে অস্ত্র দেখিয়ে ক্ষমতা দখল করা কোন গণতন্ত্রান্ত্রিক বিধান-প্রশ্ন করেন শেখ হাসিনা। তিনি লিখেন, সামরিক শাসন জারি করে সংবিধান স্থগিত রেখে অস্ত্র হাতে নিয়ে উপস্থিত হয়ে বিচারপতি রাষ্ট্রপতিকে ভীতি প্রদর্শন করে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতির আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন জে. জিয়াউর রহমান। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ও অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা দখল করে জনগণের সব অধিকার হরণ করেছিলেন। কায়েম করেছিলেন এক অত্যচারের রাজত্ব। ক্ষমতার মসনদ রক্তে রঞ্জিত করেছিলেন, সে রক্ত কাদের রক্ত? ঐ সেনাবাহিনীর, বিমান বাহিনীর অফিসার ও জোয়ানদের রক্ত।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যতদিন ক্ষমতায় ছিলেন সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যকে তিনি ফাঁসির হুকুম দেননি। একটি প্রাণ সেখানে ঝরেনি। কোনো রক্ষপাত সেখানে তিনি ঘটাতে দেননি। কিন্তু উচ্চাভিলাষী জে. জিয়া তার ক্ষমতার গদি নিষ্কন্ঠক করবার জন্য একের পর এক অফিসার ও জোয়ানদের ফাঁসি দিয়েছেন। এমন কী যে কর্নেল তাহের তাকে ক্ষমতায় বসতে সহায়তা করেছেন তাকেও তিনি ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন-উল্লেখ করা হয় নির্বাচিত প্রবন্ধে।
শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে বলেন,যারা জিয়ার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাদের জিজ্ঞেস করি, স্বস্তি দেবে, নিরাপত্তা দেবে, সম্মান দেবে, শ্রদ্ধা করবে, স্নেহ ভালবাসা-আস্থা দেবে, সাদামাটা খাদ্য পরিবেশন করবে, তাদের গ্রহণ করবেন? নাকি ফাঁসি দেবে, হত্যা করবে, কথায় কথায় গুলি করবে, স্নেহ-ভালবাসা থাকবে, অহর্নিষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন অথচ রোজ পোলাও-কোরমা খাওয়াবে-কোনটা গ্রহণ করবেন? জে. জিয়া সেনাবাহিনীর কী অফিসার কী জোয়ান কাউকে মানুষ বলে গণ্য করেননি। নির্বিচারে তার ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা করে তার মসনদ এদেরই রক্ষা দিয়ে তৈরি করেছেন। যাদের তিনি ফাঁসি দিয়েছেন, সেই সব পরিবার কি অবস্থায় দিন যাপন করছে, তাদের পরিণতি কি হয়েছে, তাদের সন্তানেরা কে কোথায় আছে, তাদের বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন কোথায় কোন অবস্থায় আছে তার খবর কি কেউ রাখে-তিনি প্রশ্ন করেন। শেখ হাসিনা তার গ্রন্থে এমন একটি পরিবারের করুণ কাহিনী এ গ্রন্থে তুলে ধরেন।