সরকারি কাজেই নিশ্চিত হয়নি বাংলার ব্যবহার
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: ভাষার মাস এলেই আমরা হুমড়ি খেয়ে পড়ি। কিন্তু ভাষার প্রতি সঠিক বিচার বিবেচনা করছি না আমরা কেউই। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো সরকারি কাজেই এখনো বাংলা ব্যবহার নিশ্চিত হয়নি। এখনও সরকারি দফতর থেকে পাঠানো বাংলা চিঠিগুলোতে ব্যাকরণ ও বানানসহ বাক্যগঠনে অসঙ্গতি পাওয়া যায়।
সরকারি কাজে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, সর্বস্তরে বাংলাভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করলেই হবে না বাংলার ব্যবহার সঠিকভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কি না সেটি জরুরি। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু প্রথম সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর এটা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। কেউ বলেছেন, এতে ইংরেজি শিক্ষার প্রতি ছেলে মেয়েরা বিমুখ হবে। কিন্তু আসলে কথাটি ভুল। নিজের মাতৃভাষা যখন ছেলে মেয়েরা ভালো করে জানতে পারবে তখন তারা ইংরেজিসহ অনেক ভাষায়ই আয়ত্ত করতে পারবে। অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এ ব্যাপারে আরও বলেন, বাংলা ভাষার ব্যবহার সর্বস্তরে চালু করতে সরকারি উদ্যোগ জরুরি। এখানে সরকারকেই প্রথমত আইনের প্রতি অবিচল থাকতে হবে। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে নানা আদেশ ও নির্দেশনা জারি হয়েছে বাংলাদেশে। তারপরও সেসব আইন বা নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে দেশের সকল স্থানে নামফলক, সাইনবোর্ড, বক্তৃতা, উচ্চশিক্ষাসহ অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ কাজই চলছে অ-রাষ্ট্র ভাষায়। এমনকি আদেশদানকারী আদালতেও নেই বাংলার ব্যবহার।
ভাষা সৈনিক আহমদ রফিক বলেন, ‘উদাসীনতা ও অবহেলার কারণেই সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার আজও নিশ্চিত করা যায়নি। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও আদালতের নির্দেশসহ এতসব উদ্যোগ থাকার পরও বাংলা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমন অবনতি শুধুমাত্র আমাদের সদিচ্ছার অভাবে। সরকারি কাজে বাংলার সঠিক ব্যবহার প্রয়োজন। বিচার বিভাগকে সালাম জানাতেই হয়। কারণ প্রত্যক্ষ কাজ না হলেও বিচারকরা বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়ে ভেবেছেন, এটা কার্যকর করার নির্দেশও দিয়েছেন তারা।
১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলা একাডেমির এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ক্ষমতায় বসার পর দেশের সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালুর করবেন। এরপর স্বাধীন দেশে ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বরে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করে বাংলাকে দেশের সরকারি ভাষা ঘোষণা দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। অনেক ঘটনার পর ১৯৯৬ সালের ২৮ মে সচিব কমিটির সভার সিদ্ধান্তে আনুষ্ঠানিক দলিলাদির ক্ষেত্রে অফিস আদালতে সর্বত্র সাধু ভাষা ব্যবহার করা ব্যতিত অন্যান্য ক্ষেত্রে এর বাধ্যবাধকতা থাকবে না বলে জানানো হয়। ১৯৯৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বাংলায় একটি মামলার রায় দেয়।
২০১৩ সালে এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে বাংলার প্রচলন, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার গাড়ির নম্বর প্লেট, বিভিন্ন দফতরের নামফলক, গণমাধ্যমে ইংরেজি ভাষায় বিজ্ঞাপন ও মিশ্র ভাষার ব্যবহার বন্ধে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এরপর একই বছরের ১৪ মে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডগুলোকে সাইনবোর্ড ও নামফলক বাংলায় লেখা নিশ্চিত করতে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ২০১৪ সালে উচ্চ আদালতের রায় এবং ডজন খানেকেরও বেশি সরকারি আদেশ, পরিপত্র বা বিধিতে বাংলা ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবুও সরকারি কাজের সবক্ষেত্রে নিশ্চিত করা যায়নি রাষ্ট্রভাষা বাংলার ব্যবহার।