বাণিজ্যিক লড়াইয়ের মুখে চীন-যুক্তরাষ্ট্র!
নির্বাচনি প্রচারণার সময় থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বাক্যবাণের অন্যতম লক্ষ্যস্থল হিসেবে পছন্দ করে নিয়েছেন চীনকে। চীনের বিরুদ্ধে বৈদেশিক মুদ্রার অবমূল্যায়ন (কারেন্সি ম্যানিপুলেশন)ও বৈশ্বিক লেনদেন নীতিমালা অবজ্ঞার অভিযোগ তুলে চীনা পণ্য আমদানির উপর ৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। ক্ষমতায় আসার পর তার পদক্ষেপ এ ব্যাপারে কী হয় তাই এখন দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব।
তবে একসময় বৈদেশিক মুদ্রা তথা ডলার কিনে তা চীনা মুদ্রায় বিক্রি করার প্রবণতা এখন আর চীনের নেই। বরং উল্টো তারা এখন বৈদেশিক মুদ্রা জমায়। তাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে যে পথ পাওয়া যাবে না তা ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই ট্রাম্পকে অন্য পথ খুঁজে বের করতে হবে। তবে হুমকি এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করেই দৃঢ়তার সঙ্গে লেখা হয়েছে ‘বাণিজ্যিক হয়রানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নেবে’। এই প্রক্রিয়ার সমর্থনে ট্রাম্পের বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস বলেছেন, রপ্তানি আইন না মানলে যেকোনো দেশের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থায় যাবে তার মন্ত্রণালয়।
তবে চীনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আপসহীন মনোভাব ও কঠোর অবস্থান নতুন কোনো বিষয় নয়। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ও অন্তত ১৬ বার মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিরা চীনকে চ্যালেঞ্জ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্টিলের ওপর অবৈধ শুল্ক আরোপ, মার্কিন গাড়ি উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য করা, রপ্তানি কোটা নির্ধারণ নিয়ে মার্কিন ব্যবসায়ীদের চীনের বাজারে হিমশিম খেতে হয়েছে।
২০০৯ সালে চীন থেকে গাড়ির টায়ার আমদানি বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বাড়ায়। এর প্রতিক্রিয়ায় চীন যুুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থেকে পণ্য আমদানি বাড়িয়ে দেয়। সে রকম পরিস্থিতি আবার তৈরি হলে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন ও এয়ারক্রাফটের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ এই দুটি পণ্যের এক চতুর্থাংশই যায় চীনা বাজারে। নতুন বাজার খুঁজে নিতে চীনের কিছুটা বেগ পেতে হতে পারে। তবে মার্কিন কৃষকদের আশঙ্কা, চীনের বাজার হারালে চীনের বাজার হারালে তাদের সয়াবিনের দাম পানিতে পড়ে যাবে। আর চীন এয়ারক্রাফটের জন্য ইউরোপের ওপর ঝুঁকে পড়তে পারে বলে ধারণা মার্কিন উৎপাদকদের।
৬৪০ কর্মী নিয়ে হিমশিম খেতে থাকা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় দুই তরফ থেকেই অভিযোগ পড়া বেড়ে যাবে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। পিটারসন ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ইকনোমিকস এর গবেষক চ্যাড বৌন বলেন, ‘লিখিত হলেও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম-নীতিগুলো বেশি স্পষ্ট নয়। তাই এর মাধ্যমে কেনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া বলার চেয়ে করা কঠিন হতে পারে।’
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, যতক্ষণ পর্যন্ত চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম-নীতি মেনে চলবে ততক্ষণ পর্যন্ত ট্রাম্প তাদের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে নামবেন না বলেই মনে হচ্ছে। এফএ। সম্পাদনা: হাসিবুল ফারুর চৌধুরী