বাংলাদেশ শিক্ষাহীনতার অন্ধকারে নিমজ্জিত দ্বীপ হিসেবে বিরাজ করছে
জাফর আহমদ: চারদিকে দ্রুত উন্নয়শীল ও শিক্ষার আলোক উজ্জ্বল জাতিগুলোর পাশে বাংলাদেশ শিক্ষাহীনতার অন্ধকারে নিমজ্জিত দ্বীপ হিসেবে বিরাজ করছে। এই শুধু আমাদের লজ্জারই কারণ নয়, উদ্বেগের কারণ। আমাদের বলতে হচ্ছেÑ এদেশের সরকার এবং সামগ্রিক সমাজ কি আন্তরিকভাবে নিরক্ষর দূর করতে চেয়েছে? আমাদের বোঝার চেষ্টা করতে হবে, এশিয়ার অন্যান্য দেশ যা পেরেছে বাংলাদেশ তা পারেনি কেন? বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ‘নির্বাচিত প্রবন্ধে‘ গ্রন্থের ‘বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম’ প্রবন্ধে এ প্রশ্ন রাখেন। গ্রন্থটি চলতি মাসে প্রকাশিত হলেও উল্লেখিত প্রবন্ধটি রচিত হয়েছে ১৯৯৩ সালে। সে সময় লেখক সংসদে বিরোধী নেতা ছিলেন।
প্রবন্ধে জাতিসংঘের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তথ্য অনুযায়ী বর্তমান দেশে নিরক্ষর বয়ষ্ক নারী-পুরুষের সংখ্যা ৪ কোটি ২০ লাখ। কয়েকটি তুলনামূলক পরিসংখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই আজ আমরা কোথায় অবস্থান করছি। বাংলাদেশে বয়ষ্ক শিক্ষার হার ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু প্রতিবেশী ভারতে এই হার ৪৮ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছে গেছে। শ্রীলংকায় বয়ষ্ক শিক্ষিতের হার ৮৮ দশমিক ৪ শতাংশ, থাইল্যান্ড ৯৩ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় শতকরা ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মালয়েশিয়ায় ৭৮ দশমিক ৮ শতাংশ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত ভিয়েতনামে বয়ষ্ক শিক্ষিতের হার শতকরা ৮৭ দশমিক ভাগ।
তৎকালীন বিএনপি সরকারের শিক্ষা কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপি সরকার সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রচলন করেছে। যেখানে স্কুলের সংখ্যা বাড়েনি, শিক্ষকের সংখ্যা বাড়েনি, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি বা কোনো অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। সেখানে শুধুু সরকার প্রধানের ঘোষণার ফলেই কি সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা যাবে? এসব কি ভাওতাবাজি নয়? শুধু গালভরা বুলি দিয়ে তো দেশের মানুষ শিক্ষিত হয়ে যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন হলো সার্বজনীন শিক্ষার একটা ব্যাপক কার্যক্রম প্রণয়ন করা এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে বা বাস্তবায়ন করা। সার্বজনীন শিক্ষার একটা ব্যাপক কার্যক্রম প্রণয়ন করে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে তা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
সুুষ্ঠ পরিকল্পনার মাধ্যমে জাতির এই কলঙ্ক দূর করার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের লক্ষ্য আগামী দশ বছরের মধ্যেই দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করতে হবে। এ কাজ সরকারের নয়। শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন। বর্তমান সরকার (বিএনপির শাসনামল ১৯৯১-৯৬) ইতোমধ্যেই অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতো শিক্ষা বিষয়ে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বিএনপির লক্ষ্যহীন ও দুর্বল নেতৃত্বের হাতে এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়ে আমরা স্বস্তি পেতে পারি না। তাই আমার একান্ত আকাক্সক্ষা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধু শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েই বসে থাকবে না; বরং আমরা এখন থেকেই এ বিষয়ে সমগ্র জাতিকে উদ্বুদ্ধ করব, সংগঠিত করব এবং কর্মতৎপর করে তুলব।