বিবিসি এশিয়া নেটওয়ার্কের প্রতিবেদন হলোকাস্ট থেকে ইহুদি বাঁচানো মুসলিম
মোহাম্মদ আলী বোখারী টরন্টো থেকে
সেন্ট্রাল লন্ডনের ব্লুমসবারিতে ‘দ্য রাইচুয়াস মুসলিম এক্সিবিশন’ অর্থাৎ ন্যায়নিষ্ঠ মুসলিমদের একটি প্রদর্শনী আয়োজন করে ‘বোর্ড অব ডেপুটিজ অব ব্রিটিশ জিউয়িস’। এতে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধকালীন হলোকাস্টের কবল থেকে ইহুদিদের আশ্রয় দিয়েছেন তেমন ৭০ জন সাহসী মুসলিম ব্যক্তিত্বের ছবি সংবলিত কীর্তিগাঁথা প্রদর্শিত হয়। সেই খবরটিই ২০১৩ সালের ১৭ এপ্রিল বিবিসি এশিয়া নেটওয়ার্ক ‘দ্য মুসলিমস হু সেভড জিউয়িস ফ্রম দ্য হলোকাস্ট’ শিরোনামে তুলে ধরে। ওই প্রতিবেদনে প্রদর্শনীটির উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিবিসি বলেছেÑ ইহুদি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের পারস্পরিক গবেষণালব্ধ সহযোগিতা যেন আশাপ্রদ হয়। কেননা ইসরাইল রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক হলোকাস্ট স্মৃতি প্রতিষ্ঠান ‘ইয়াদ ভাষেম’ নাৎসি জার্মানির নৃশংসতা পরিচালনাকালীন ইহুদি বাঁচিয়েছে এমন ‘তথাকথিত’ ২৫ হাজার ‘রাইচুয়াস পার্সন’ বা ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিকে সম্মান জানিয়েছে। সম্প্রতি ৭০ জন মুসলিম সেই তালিকাভুক্ত হয়েছেন, যাদের কীর্তিগাঁথাই ছিল ওই প্রদর্শনীতে। প্রতিবেদনটি আরো বলেছেÑ ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে ব্রিটেনের ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে রয়েছেন ২০ লাখ ৭০ হাজার মুসলিম এবং ২ লাখ ৬৩ হাজার ইহুদি। তাতে প্রত্যাশা রেখে বলা হয়Ñ এই জনগোষ্ঠীর তরুণ প্রজন্ম যাতে তাদের পারস্পরিক সহমর্মিতা, একান্নবর্তীতা ও গর্বের ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালন করতে পারে।
এতে ‘ফেইথ ম্যাটার্স’ অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং ‘দ্য রোল অব দ্য রাইচুয়াস মুসলিম’ বুকলেটের সহযোগী রচয়িতা ফিয়াজ মুঘল বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ নানা জায়গায় ছড়িয়ে গেছে, তাতে বয়ো:জেষ্ঠ্যদের প্রয়াণে এই সব কীর্তিগাঁথা বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাবে। এটির প্রতিক্রিয়ায় প্রদর্শনীটির সমন্বয়ক ইহুদি ধর্মযাজক রাব্বি নাথান লেভি বলেন, এই আয়োজনটি দুই সম্প্রদায়ের সেতুবন্ধন ঘটাবে, যাতে স্মরণে ও উৎসবে তারা একত্রিত থাকতে পারেন এবং কখনো দ্বিধাবিভক্ত হয়ে না পড়েন। এ ছাড়াও তিনি ফিয়াজ মুঘলের সঙ্গে ধর্মীয় চরণ থেকে যুগপৎ বলেন, ‘যে একজনকে বাঁচিয়েছে, সে বিশ্বকে বাঁচিয়েছে’।
তবে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছেÑ পাসওভারে পঠিত ৬০০ বছরের পুরনো এবং বিপুল যুদ্ধ-বিগ্রহে অক্ষত ইহুদি ঐতিহ্যের পান্ডুলিপি ‘সারাজেভো হ্যাগাদা’ একজন মুসলিম ইমাম শেষটায় মসজিদের মেঝেতে লুকিয়ে সুরক্ষা করেন। এটিকে বসনিয়ার ‘ন্যাশনাল ট্রেজার’ বা জাতীয় সম্পদ হিসেবে অভিহিত করা হয়। একইভাবে রয়েছে ১৯৪৩ সালে বসনিয়ার তিন সন্তানের জননী ‘হারদাগা’ পরিবারটি ইহুদি ‘ক্যাভিলিও’ পরিবারকে আশ্রয় দিয়ে জীবন বাঁচান, যারা অর্ধ শতাব্দী পর কাকতালীয়ভাবে বসনিয়ার গৃহযুদ্ধকালীন ইসরায়েলের ‘ক্যাভিলিও’ পরিবার কর্তৃক প্রতিদানটি পেয়েছেন। সেক্ষেত্রে সারাজেভোতে অবিরত বোমা বর্ষণে শঙ্কিত ‘হারদাগা’ পরিবার তদানীন্তন বসনিয়ার প্রেসিডেন্টের অনুগ্রহে ইসরায়েলে চলে যেতে সক্ষম হন।
ই-মেইল: নঁশযধৎর.ঃড়ৎড়হঃড়@মসধরষ.পড়স