কামরুল আহসান: ‘মৈত্রিয় বলিলেন, যদি জগতের সকল সম্পদ আমার হয়, তাহলে কি আমি সুখী হইতে পারিব? যাজ্ঞবক্ল্য বলিলেন, না, সম্পদশালীদের জীবন যেরূপ তোমার জীবনও সেইরূপ হইবে। -বৃহদারণ্যক উপনিষদ’
এ কথা প্রমাণিত যে অধিক সম্পদ থাকলেই মানুষ সুখী হয় না। তাহলে কীভাবে মানুষ সুখী হতে পারে? সম্প্রতি এ নিয়ে দুবাইয়ে একটি বিশ্ব সম্মেলন হয়ে গেল। তিনদিনের এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন ১৩৯ দেশের ১৫০ বক্তা এবং প্রায় ৪ হাজার প্রতিনিধি। সম্মেলনটির প্রতিনিধিত্ব করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তারা বলছেন, সম্পদ বা ক্ষমতা নয়, মানুষের সুখী হওয়ার জন্য প্রয়োজন সুসম্পর্ক।
জগত ও জীবনের সমস্ত দুঃখদুর্দশা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র নিবিড় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। নিঃসঙ্গ থাকলে এমন কি স্বাস্থ্যও খারাপ হয়। নিঃসঙ্গ মানুষের কম বয়সে মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে।
দীর্ঘ গবেষণার পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল জানিয়েছেন- বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন এবং সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক মানুষের জীবনে স্বাস্থ্যগত উন্নতি করে।
গবেষক দলের প্রধান প্রফেসর ডক্টর রবার্ট ওয়ালডিগার বলেছেন, ভালবাসার মানুষদের দ্বারা ঘিরে থাকলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক রোগবালাইয়ের সম্ভাবনা কম থাকে। তাদের পরিসংখ্যান জানিয়েছে, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন মানুষ নিঃসঙ্গ বোধ করে এবং তাদের জীবনের সুখের কমতি থাকে। আর তার ফলে তাদের মৃত্যুও দ্রুত ঘনিয়ে আসে। ডক্টর ওয়ালডিগার বলেছেন, এখন মানুষের বেশির ভাগ সম্পর্কই স্বাভাবিক নয়। অবশ্যই মানুষের এমন কাউকে দরকার যাকে সে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারে এবং প্রয়োজনের সময় তার সাথে নিজের সব কিছু ভাগাভাগী করতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব মতে, পৃথিবীর ৩৫০ মিলিয়ন মানুষ এই মুহূর্তে হতাশায় আক্রান্ত। প্রতিদিন প্রায় ১৮ হাজার মানুষ হতাশার কারণে মারা যাচ্ছে, যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৯ এর মধ্যে। ২০৩০ সাল নাগাদ হতাশাই হবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রোগ। আর সমস্ত হতাশা থেকে আপনাকে একমাত্র মুক্তি দিতে পারে পারস্পরিক সৌহার্দবোধ, ভালবাসা, বন্ধুত্ব ও সুসম্পর্ক।
সুখ সম্মেলনের এবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ ছিল, সাধারণ মানুষের সুখী জীবনের জন্য রাষ্ট্রের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একটি দেশকে সুখী হতে হলে রাষ্ট্রের গণপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের মধ্যে বিশ্বাস ও সুসম্পর্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রকে তাই উন্নয়নের চেয়ে বেশি জোর দিতে হবে মানুষের জীবন কীভাবে আরও সুখী হয় সেই দিকে। গাল্ফ নিউজ। সম্পাদনা: পরাগ মাঝি