হাল ছাড়েননি আইনমন্ত্রী
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শ নিয়োগে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যে সত্য নয়, তা প্রমাণ করার জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অনেক বাধা, প্রতিকূলতা ও সমস্যার মুখোমুখি হলেও হাল ছাড়েননি। নিজের সিদ্ধান্তে সব সময় অটল ছিলেন। তিনি শুরু থেকেই বলেছিলেন বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ মিথ্যে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক কোনোভাবেই তার কথা মেনে নিতে পারছিল না।
বারবার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নামে দুদকের উপর চাপ তৈরি করে আসছিল বিশ্বব্যাংক। অনুসন্ধান চলাকালীন তিনি দুদকের আইন উপদেষ্টা ছিলেন। আইন উপদেষ্টা থাকাকালীন তিনি বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ আমলে নেননি। বিশ্বব্যাংকের আইন উপদেষ্টা ওকাম্পো যখন ঢাকায় এসেছিলেন ও সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদত্যাগ করানো তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল। তখন আনিসুল হক বলেছিলেন, বাংলাদেশের কেউ এই ঘটনায় জড়িত নন এবং তাছাড়া এখানে দুর্নীতির কোনো ঘটনাও ঘটেনি। কিন্তু বিশ্বব্যাংক তা মানছিল না। তিনি মামলা না করার পক্ষে ছিলেন। কারণ তিনি জানতেন এই অভিযোগ মিথ্যে। এটা প্রমাণ হবে না। কিন্তু দেশের গণমাধ্যমের কারণে তিনি মামলা করার ব্যাপারে সম্মতি দেন দুদককে।
কিন্তু দুদকের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষ করে ফাইনাল রিপোর্ট দেয়। ওই রিপোর্ট দেওয়ার পর আদালত সকল আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে মামলা নথিভুক্ত করে। বাংলাদেশে এই মামলা শেষ হয়েছে অনেক আগে। অবশেষে কানাডার আদালতেও অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। মামলা খারিজ করে দিয়েছে সেই আদালত। সেই সঙ্গে সকল আসামিকেও অব্যাহতি দিয়েছে।
এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সব সময় বলেছি বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। তারা শুনে শুনে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। দুদকের তদন্তেও ঘটনার সত্যতা মিলেনি। এই কারণে তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করছিলেন না। কোনো দুর্নীতি হয়নি, এটা বললেও ওকাম্পো না মানার কারণে দুদকের উপর চাপ দিচ্ছিলেন। এ নিয়ে ওকাম্পোর সঙ্গে তার অনেক বাতচিৎ হয়েছিল।
আইনমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক ওইদিন যদি আমাদের কথা বিশ্বাস করতো তাহলে ভালো হতো। কারণ বিশ্বব্যাংককে এই প্রকল্প থেকে সরে যেতে হতো না। কারণ যখন বাংলাদেশ থেকে বলা হচ্ছিল অভিযোগ ঠিক না, তখন তারা বার বার বলছিল পূর্ণাঙ্গ তদন্ত না হলে তারা অর্থায়ন করবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর তাদের অপেক্ষা করেননি। বিশ্বব্যাংকের টাকা নিবেন না বলেও সিদ্ধান্ত নেন। এখন বিশ্বব্যাংকের টাকা নয় বাংলাদেশের টাকায় পদ্মা সেতু হচ্ছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, একটি মিথ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের উন্নয়নের এত বড় একটি প্রকল্পে অংশীদার হওয়া থেকে বঞ্চিত হলো।
আইনমন্ত্রী জানান, কানাডার আদালতের মামলার রায়ের কপির জন্য আবেদন করবেন। ওই রায়ের কপি পাওয়ার পর এরপর সরকার সিদ্ধান্ত নিলে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিলে বিশ্বব্যাংকের কাছে চিঠি দিবেন। সেই চিঠিতেও বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।
বিশ্বব্যাংকের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হবে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, এখনই এ ব্যাপারে কিছু বলা যাচ্ছে না। আগে পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি আমরা পাই তারপর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মন্ত্রী হওয়ার আগে দুদকের আইন উপদেষ্টা হিসেবে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে আইনি পরামর্শ দিচ্ছিলেন। এরপর যখন আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান এরপরও কাজ করেন। কানাডায় মামলা হওয়ার পর তিনি কানাডায় যান এবং কানাডা থেকে নথিপত্র আনার জন্য চেষ্টা করেন। কিন্তু কানাডায় মামলা চলাকালীন নথিপত্র দেওয়ার বিধি নিষেধ থাকার কারণে ওই সময়ে তারা নথিপত্র পুরোপুরি আনতে পারেনি। এ ব্যাপারে ওই সময়ের সরকারও তাদেরকে সহায়তা করতে পারেনি। কারণ কানাডার আইনে এই ধরনের নিয়ম নেই যে কোনো মামলা চলছে ওই মামলার ব্যাপারে কোনো তথ্য অন্য কোনো দেশকে দেওয়া যাবে। তবে কানাডার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদেরকে কিছু কিছু তথ্য দিয়েছিল। বাকিটা বলেছিল মামলা শেষে দিবে। কানাডা কেন তথ্য দিতে পারেনি ওই সময়ে তাও বলেছে।
আইনমন্ত্রী জানান, কানাডা তথ্য দিতে না পারার বিষয়টি জানিয়েছে। এই কারণে বাংলাদেশের ব্যাপারে তথ্য পেতে অনেক কষ্ট হয়েছে। ওই দেশের আদালতের পুরো নথি না পেলে হাল ছাড়েননি আইনমন্ত্রী। তিনি চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। এরপর তারা ভেতরের তথ্য জানতে পারে এবং বাংলাদেশের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেয়। তবে কানাডার কাছে বাংলাদেশের তরফ থেকেও ওই ঘটনার সব তথ্য জানানো হয়। সেখানেও কানাডার আদালত দেখেছে বাংলাদেশে এসএনসি লাভালিনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে এর সত্যতা পায়নি।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা এটাও প্রমাণ করতে পেরেছি যে কেবল বাংলাদেশ নয় কানাডার আদালতেও অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে। এতে এও প্রমাণ হয়েছে, আমরা যে সত্য বলছিলাম ও স্বচ্ছ ছিলাম সেটাও বলেছি। বিশ্বব্যাংকের কারণে বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সম্পাদনা: এনামুল হক