আমাকে জড়িয়ে করা অভিযোগ মিথ্যা
বিশেষ প্রতিনিধি: কানাডার আদালতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে কোনো দুর্নীতি হয়নি। এই সময়ে সবাই মনে করেছিল বিশ্বব্যাংক যে অভিযোগ করেছে তা সত্য। কিন্তু সেই অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে। কানাডার আদালতে মিথ্যে প্রমাণ হওয়ায় এখন বিশ্বব্যাংক কি করবে? এত বড় অপমান তারা কি কোনো দিন ভুলতে পারবে। তাদের মতো এত বড় একটি প্রতিষ্ঠানের এই ধরনের মিথ্যাচার কতটা লজ্জাজনক। কানাডার আদালতে পদ্মা সেতুর অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার বিষয়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এই কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি আমি নির্দোষ। তা প্রমাণ হয়েছে। আজ অনেক শান্তি লাগছে। কত অপমান কত খারাপ কথা শুনতে হয়েছে, কত মিথ্যে খবর ছাড়া হয়েছে। সেই সব কথা আর বলতে চাই না। সবাই আমাকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু আমি মামলা করিনি। আজ দিনের শেষে দেখা গেছে যারা আমার বিরুদ্ধে কাজ করেছে এর একজন এখন অসুস্থ হয়ে আমেরিকায় । ওকাম্পোর বিচার হবে। এছাড়া আরও যারা আমার ক্ষতি করেছে তাদেরও শাস্তি হবে। এই বিচার আমি করবো না। এই বিচার করবে আল্লাহ । ইতোমধ্যে বিচার শুরু হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের এখন মুখ লুকানোরও জায়গা নেই। তবে আমি মনে করি আমার যে ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দেশের। আর দেশের ক্ষতি যারা করেছে তাদের শাস্তিও হতে হবে। আল্লাহর কাছে এই বিচার চাইবো। আমার মিডিয়াতে বিশ্বব্যাংকের কথা নিয়ে যারা মিথ্যে তথ্য পরিবেশন করেছে তাদের এখন সত্যিটা প্রকাশ করা দরকার। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংককে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের যে ক্ষতি হয়েছে এই জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তিনি আমাদের অর্থনীতি সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
আবুল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প যাতে বাস্তবায়িত না হয় সেই জন্য কত চেষ্টা করা হয়েছে সেই সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আবুল হোসেন বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন। গতকাল দুপুরে তিনি বিদেশে যান। ফিরবেন এই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে।
সৈয়দ আবুল হোসেন বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ-কানাডার আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এর ফলে এসএনসি-লাভালিনের অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তা মামলা থেকে রেহাই পেলেন। কানাডার আদালতের এই রায় প্রমাণ করে, পদ্মা সেতু নিয়ে আমাকে জড়িয়ে বিশ্বব্যাংকে যে অভিযোগ করা হয়েছে- তা সর্বৈব মিথ্যা। বাংলাদেশস্থ তৎকালীন বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি গোল্ড স্টেইন এবং বাংলাদেশের কতিপয় পত্রিকার অসত্য রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে, বিশ্বব্যাংক যে কাল্পনিক অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে দাঁড় করেছিল- তা ছিল শুধু মিথ্যা নয়, ষড়যন্ত্রমূলক। আমি বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশী কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। এ ষড়যন্ত্র আমার দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম, মর্যাদা, সততা, নিষ্ঠার ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের পথকে বাধাগ্রস্ত করেছে। আমাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের তৎকালিন প্রেসিডেন্টের সাথে আমার চীনের এক আন্তর্জাতিক ফোরামে সাক্ষাৎ হয়। তিনি তখন বলেছিলেন- “আমি বুঝতে পারছি- পদ্মা সেতু ও আপনি ষড়যন্ত্রের শিকার। বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও বিশিষ্ট কতিপয় লোকের কথায় প্রভাবিত হয়েছেন। এ জন্য আমি অনুতপ্ত।” আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সাকো’কে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে জড়ানো হয়েছে, পরামর্শক নিয়োগে ৩৭ মিলিয়ন ডলার দর প্রস্তাবের ৩৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ লেন-দেনের অভিযোগ করা হয়েছে- টক শো’তে এই বিষয় নিয়ে বিশিষ্টজনরা রাতের ঘুম হারাম করে আলোচনায় অংশ নেন- তা ছিল মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যমূলক। বাংলাদেশে এসে বিশ্বব্যাংকের আইন উপদেষ্টা ওকাম্পো যে আইনবিরোধী লম্প-জম্প দেখালেন, সরকার, পদ্মা সেতু এবং আমার বিরুদ্ধে যে মিথ্যাচার করলেন- তা ষড়যন্ত্রের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত থাকবে।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে মিথ্যা অভিযোগে আমাকে, আমার পরিবারকে হেনস্থা হতে হয়েছে। সরকারের সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাকে বিনা দোষে জেল খাটতে হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বার্থে আমাকে মন্ত্রীত্ব ছাড়তে হয়েছে। আমাকে জনগণের কাছে ছোট হতে হয়েছে। কানাডায় আমার জামাতার ব্যাংক হিসাব চেক করা হয়েছে। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনসহ আমার সব ব্যাংক একাউন্ট তদন্ত করা হয়েছে। যে সব মিডিয়ার মিথ্যা রিপোর্ট, অতিশয় বাড়াবাড়ি লেখা, কার্টুন প্রকাশ, সম্পাদকীয় ও উপ-সম্পাদকীয় লেখায় প্রভাবিত হয়ে- বিশ্ব ব্যাংকের দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আমাকে অভিযুক্ত করা হলো, আমার মর্যাদা ক্ষুণœ হলো-তাদের আজকের জবাব কি? পদত্যাগের পরও বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করা প্রমাণ করে বিশ্বব্যাংক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, কতিপয় পত্রিকা শুধু পদ্মা সেতু নিয়ে মিথ্যা রিপোর্ট করেছে তা নয়, পত্রিকাগুলো আমার মন্ত্রিত্বকালীন কাজ নিয়ে, সড়ক দুর্ঘটনার সাথে আমাকে জড়িয়ে মন্ত্রীর পদত্যাগ চাই, আমার ব্যক্তিগত পাসপোর্ট নিয়ে, আমার গ্রামের বাড়ি নির্মাণ নিয়ে, যোগাযোগ মন্ত্রীর গাড়ি ক্রয় নিয়ে, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক নির্মাণের সার-সংক্ষেপ নিয়ে, বিএনপির শ্বেতপত্রের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত বিষয় নিয়ে, আওয়ামী লীগ থেকে আমি পদত্যাগ করেছি- এই মর্মে আমার স্বাক্ষর জাল করে একটি চিঠি পত্রিকায় প্রকাশ করে- যা ছিল উদ্দেশ্যমূলক। আমি জীবনে সৎ থেকে, ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করেছি, জনগণের জন্য ব্যয় করেছি। আমার আপষোস- পদ্মা সেতুতে মিথ্যা অভিযোগে ২০১৩ সালে পদ্মা সেতু চালু করার প্রক্রিয়া দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে বিলম্বিত হলো। আমি তখন বলেছিলাম- পদ্মা সেতুর অভিযোগে আমি অভিযুক্ত নই, আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আজ কানাডার আদালতের মাধ্যমে আমার সততা উচ্চকিত হলো। আমি নির্দোষ প্রমাণিত হলাম। এজন্য আমি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।
আবুল হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাংকের চাপে পদ্মা সেতু ঘুষ লেন- দেনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দুদক ২০১২ সালের ডিসেম্বরে মামলা করে এবং প্রায় দু’বছরে তদন্ত শেষে অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি। কানাডার আদালতে শেষাবধি পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি খুঁজে পায়নি। পদ্মা সেতু নির্মাণে আমি দ্রুততার সাথে কাজ করেছিলাম। অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছিলাম। আমার সময়ে প্রণীত ডিজাইন ও দরদাতা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অনুমোদন দিয়ে বর্তমানে পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে। আমার সময়ে গৃহীত মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলছে- দেশ সেসব প্রকল্প নিয়ে এখন গর্ব করে।
আবুল হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাংক ও স্থানীয় ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করে ইতিহাস গড়লেন। প্রধানমন্ত্রী তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা আবারও প্রমাণ করলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।
আবুল হোসেন বলেন, যারা সত্য ও আলোর পথ অনুসরণ না করে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, যে সব পত্রিকা মিথ্যা রিপোর্ট করেছে, বিশ্বব্যাংকের মিথ্যা অভিযোগে সহায়তা দিয়েছে, আমার ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছে, যারা পদ্মা সেতু নির্মাণকে বিলম্বিত করেছে- তাদের আল্লাহ যেন সত্যের পথ দেখান- এ প্রত্যাশা রইল।