সরকারের কঠোর অবস্থান এরপরও বন্ধ হচ্ছে না মানব পাচার
আনিসুর রহমান তপন: মানব পাচারের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের পরও বন্ধ হচ্ছে না মানব পাচার। উন্নত জীবন ও অধিক অর্থ উপার্জনসহ বিভিন্ন প্রকার লোভ দেখিয়ে পাচারকারী চক্র দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দরিদ্র, অসহায় নারী, পুরুষ, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের বিদেশে পাচার করছে।
এদিকে দালাল চক্রের সঙ্গে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত সরকারের কয়েকটি সংস্থার অসাধু কর্মকর্তারা অবৈধ এ কাজে সহায়তা করছে এমন অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি সরকারের ইমিগ্রেশন পুলিশ, সিভিল অ্যাভিয়েশন, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কসহ বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগসহ মানব পাচার সংক্রান্ত একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন জমা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অবৈধ উপায়ে বিপুল অর্থ উপার্জনের মাধ্যম এই মানব পাচার। প্রতিবছর বাংলাদেশের জল ও স্থল সীমান্ত পথে বিপুলসংখ্যক নারী, পুরুষ ও শিশু পাচারের শিকার হচ্ছে। এসব নারী, পুরুষ ও শিশুদের অবৈধ উপায়ে মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়। পাচার হওয়া এসব অসহায় মানুষ পরবর্তীতে সর্বস্বান্ত হচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাচারকারী চক্র ভিন্ন দেশে তাদের বিক্রিও করে দিচ্ছে। সম্প্রতি পাচারের শিকার ১৫ জন বাংলাদেশী নাগরিককে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। মানব পচারের মতো অবৈধ কর্মকা-ে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি নেয়ার পরও মানব পাচার বন্ধ না হওয়ার কারণ হিসেবে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ কাজে সংশ্লিষ্ট দালাল গ্রেফতার না হওয়া ও গ্রেফতার হলেও আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে সহজে বের হয়ে যাওয়াতে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না মানব পাচার।
২০১৫ সালের মে মাসে থাইল্যা-ের জঙ্গলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নাগরিকদের গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর সরকারের বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জোর তৎপরতায় মানব পাচার কিছু সময়ের জন্য কমলেও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সরকারি বিভিন্ন সংস্থাসহ কয়েকটি এয়ারলাইন্সের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে আবারও মানব পাচারের মতো অবৈধ তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, গত বছর নভেম্বরে পাচারের অপেক্ষায় থাকা ১৫ জন যাত্রীকে অফলোড করা হয়। এরা সবাই জাল টিকিট ও ভিসা ছাড়া সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স যোগে ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। পূর্ব প্রাপ্ত তথ্য ও যাত্রীদের আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় যাচাই-বাছাইকালে জাকার্তা পর্যন্ত বুকিং করা টিকিট থাকলেও ব্রুনাই পর্যন্ত বিমানের টিকিটের হার্ড কপি পাওয়া যায়। যার সবগুলোই জাল বা ভুয়া বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাতে বলা হয়, এভাবে পাচারের শিকার অনেকেই যেমন সর্বস্বান্ত হয়ে দেশে ফিরছে তেমনই বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ হচ্ছে।
এ কারণে মানব পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তি-দালাল-গডফাদারদের আইনের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে। এছাড়াও মানব পাচারের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা, জাতীয় প্রচার মাধ্যমে এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানোসহ অভিবাসন প্রত্যাশীরা যাতে সরকার নির্ধারিত ব্যবস্থা ছাড়া অন্যকোনো প্রলোভনের শিকার না হয় সেজন্য ব্যাপক প্রচার, উঠান বৈঠক এবং র্যালির মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া মানব পাচারের মতো ঘটনায় একাধিক দেশের সংশ্লিষ্টতা থাকায় প্রতিবেশী দেশসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মানব পাচারের সঙ্গে যুক্ত পাচারকারী ও দালাল চক্র, ইমিগ্রেশন পুলিশ, সিভিল অ্যাভিয়েশন, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক ও এয়ারলাইন্সের অসাধু কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সম্পাদনা: এনামুল হক