মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে
বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের ভিত্তিতে কানাডার আদালতে পরিচালিত পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলার যবনিকাপাত ঘটেছে। এতে প্রায় ছয় বছর পর এই মামলায় অভিযুক্ত কানাডার আন্তর্জাতিক প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের তিন বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে অন্টারিও সুপিরিয়র কোর্ট অব জাস্টিসের বিচারক ইয়ান নর্ডেইমার বেকসুর খালাস দিয়েছেন এবং একইসঙ্গে ওই মামলায় ‘ওয়্যারটেপ’ বা ‘আঁড়িপেতে শোনাকথা’র অভিযোগকে পুরোপুরিভাবে ‘গসিপ’ বা ‘চুটকি’ এবং ‘রিউমার’ বা ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
পাশাপাশি বিচারক ইয়ান নর্ডেইমার ওই মামলায় ২০১১ সালে কানাডার রাষ্ট্রীয় পুলিশ ‘আরসিএমপি’র দাখিলকৃত তিনটি ‘ওয়্যারটেপ’-এর বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। সেক্ষেত্রে আরসিএমপি চেয়েছিল ঘুষের বিনিময়ে পদ্মা সেতুর ৫০ মিলিয়ন ডলারের কাজ আদায়ে এসএনসি লাভালিন কর্মকর্তারা বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছে তেমনটি প্রমাণ করা।
তাতে মামলার রায়ে বিচারকের সর্বশেষ অভিমতটি হচ্ছে-‘রিডিউস টু ইটস এসেন্সিয়ালস, দ্য ইনফরমেশন প্রোভাইডেড ইন দ্য [ওয়্যারটেপ অ্যাপ্লিকেশন] ওয়াজ নাথিং মোর দ্যান স্পেকুলেশন, গসিপ অ্যান্ড রিউমার’। একইসঙ্গে অভিমত দেন যে, ‘নাথিং দ্যাট কুড ফেয়ারলি বি রেফার্ড টু এজ ডাইরেক্ট ফেকচুয়াল এভিডেন্স, টু সাপোর্ট দ্য রিউমার অ্যান্ড স্পেকুলেশন, ওয়াজ প্রোভাইডেড আর ইনভেস্টিগেটেড। দ্য ইনফরমেশন প্রোভাইডেড বাই দ্য টিপস্টারস ওয়াজ হেয়ারসে (অর ওর্স) অ্যাডেড টু আদার হেয়ারসে’। অর্থাৎ কোনো কিছুই স্বচ্ছভাবে ও সরাসরি প্রমাণসাপেক্ষ নয়; অনুসন্ধানে যা কিছু হাজির করা হয়েছে তা গুজব ও ধারণার সমর্থক। তথ্যদাতারা যা দিয়েছেন, তার সবটাই শোনা কথা, এমনকি ভিত্তিহীন, যা শোনা কথাকেই প্রলম্বিত করেছে।
বাস্তবে কানাডার রাষ্ট্রীয় পুলিশ ‘আরসিএমপি’ বা রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ পদ্মা সেতুর ওই দুর্নীতি মামলায় মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছিল। তারা হচ্ছেন-এসএনসি লাভালিনের জ্বালানি ও অবকাঠামো বিষয়ক সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ, বাংলাদেশি-কানাডিয়ান ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী ভুইয়া, মোহাম্মদ ইসমাইল ও আবুল হাসান চৌধুরী। এক্ষেত্রে আগেই এই তালিকার শেষের দুজনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তুলে নেওয়া হলে শেষটায় প্রথম তিনজনের বিরুদ্ধেই মামলাটি পরিচালিত হয়।
বস্তুত গত শুক্রবার অর্থাৎ বাংলাদেশে শনিবার যখন ক্রাউন অ্যাটর্নি বা সরকারি উকিল ত্যানিট জিলিয়াম বিচারক কর্তৃক প্রমাণ হিসেবে ‘ওয়্যারটেপ’ বা ‘আঁড়িপেতে শোনাকথা’কে ধর্তব্যে না নিলে এবং সাক্ষী পক্ষে কেউ না থাকার ঘোষণাটি দিলে বিচারক ইয়ান নর্ডেইমার উল্লেখিত অভিমত ব্যক্ত করে মামলাটির পরিসমাপ্তি টানেন। সম্পাদনা: নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী