সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রে ১০ বছরে অর্ধশত প্রাণহানি
রাজু চৌধুরী ,সিলেট : রূপ-রঙে সিলেটকে অনিন্দ্য করে সাজিয়ে রেখেছে প্রকৃতি। সিলেটের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে রূপ-লাবণ্যের অন্য এক আবহ। কিন্তু সৌন্দর্যের এই লীলাভূমির পর্যটন কেন্দ্রগুলো অন্যরকম এক বিষাদ জড়িয়ে আছে। গত ১০ বছরে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে অন্তত অর্ধশত তাজা প্রাণের সমাধি ঘটেছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবে ক্রমাগত প্রাণহানী বাড়ছেই। সিলেটের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে জাফলং, বিছনাকান্দি, লালাখাল ও লোভাছড়া। প্রকৃতিকন্যা হিসেবে পরিচিত জাফলং। কিন্তু শান্ত-স্থির এ প্রকৃতিকন্যা যেন হুট করে হয়ে ওঠে প্রাণহরণকারী। জাফলংয়ের স্বচ্ছ পানির নদী পিয়াইনের চোরাবালিতে প্রতিনিয়ত প্রাণহানী ঘটে চলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে গত এক দশকে পিয়াইনে কতোজন পর্যটকের প্রাণহানী ঘটেছে, সে পরিসংখ্যান নেই। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ১০ বছরে পিয়াইনে অন্তত ৩৫ জন পর্যটকের সলিল সমাধি ঘটেছে।২০০৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পিয়াইনের বুকে লাশ হন সিলেটের গোয়াইনঘাটের মুসা মিয়া। বছরের ১৬ আগস্ট একই উপজেলার ফখরুল ইসলাম, ২০০৮ সালের ৯ নভেম্বর ঢাকার দিলশাদ আহমেদ, ২০০৯ সালের ২৬ জানুয়ারি হবিগঞ্জের ইউনুস মিয়া, ৮ মে ঢাকার ফারুক আহমদ, ২১ জুন নরসিংদীর সজিব মিয়া পিয়াইনে ডুবে মারা যান। ২০১০ সালের ২৩ মার্চ ঢাকার খিলগাঁওয়ের তারেক আহমদ, একই বছরের ২০ মে গোয়াইনঘাটে রফিকুল ইসলাম ও গৌরাঙ্গ কর্মকার, ২২ মে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জের মুস্তাকিন তালুকদার ও ঢাকার শাহরিয়ার আহমদ রাব্বি, ১২ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠির রুহুল আমিন খান রুমি পিয়াইনের বুকে লাশ হন।২০১২ সালের ২২ আগস্ট ঢাকার ফাহাদ উদ্দিন, ৩০ আগস্ট মৌলভীবাজারের হিমেল রাজ, ২০১৩ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকার শুভ আহমদ, ২৫ অক্টোবর ঢাকার ইমরান হোসেন সাঁতার কাটতে গিয়ে পিয়াইনে লাশ হন। ২০১৪ সালের ৩০ মে মাদারিপুর জেলার সদর উপজেলার চলকিপুরের মোহাম্মদ ইব্রাহিম, আগস্টে শ্রীমঙ্গলের শাকিল মিয়া, মামুন হোসেন, সাদেক হোসেন এবং সিলেটের কামরুল ইসলাম পিয়াইনের বুকে লাশ হন। ওই মাসে অজ্ঞাতনামা আরেকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। গত বছরের ২৪ ও ২৫ জুলাই পিয়াইনে মারা যান ঢাকার কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগ ঘোষ ও অন্তর। এর কিছুদিন পর কুমিল্লার ইব্রাহিম আলী পিয়াইনে ডুবে মারা যান।এদিকে, বিছনাকান্দি, লালাখাল ও লোভাছড়ায় গত এক দশকে অন্তত ১৫ জন পর্যটক পানিতে ডুবে মারা গেছেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার লালাখালে গোসল করতে নেমে কিশোরগঞ্জের একটি মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর সলিল সমাধি ঘটে।এত প্রাণহানি পেছনে সংশ্লিষ্টরা নিরাপত্তার পর্যাপ্ত অভাবকে দায়ী করছেন। স্থানীয় প্রশাসন শুধু মাইকিং করে পর্যটকদের সতর্ক করে দায় সারে বলে তাদের অভিযোগ। জাফলং, লালাখাল, লোভাছড়া প্রভৃতি পর্যটন কেন্দ্রে পর্যাপ্তা নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। এসব পর্যটন কেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশ নিয়োগ করা জরুরি । সম্পাদনা : মুরাদ