আজ মন্ত্রিসভায় উঠছে বাংলাদেশ রাইস রিসার্স ইনস্টিটিউট আইন
আনিসুর রহমান তপন: কৃষি ও কারিগরি গবেষণার মাধ্যমে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি, উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন এবং এ সংক্রান্ত আনুষাঙ্গিক বিষয়ে গবেষণা পরিচালনার জন্য ‘বাংলাদেশ রাইস রিসার্স ইনস্টিটিউট আইন ২০১৭’ অনুমোদনের জন্য আজ মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এর আগে প্রণীত ‘বাংলাদেশ রাইস রিসার্স ইনস্টিটিউট আইন, ১৯৭৩’ সংশোধন করে এবার পুনঃপ্রণয়ন করা হচ্ছে। আইনটি সংশোধন ও পুনঃপ্রণয়ন করা হলেও পূর্বের আইনে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এমনভাবে বহাল থাকবে যাতে মনে হবে নতুন আইনের অধীনেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আইনে বলা হয়েছে, ইনস্টিটিউট একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে এবং এর স্থায়ী ধারাবাহিকতা ও একটি সাধারণ সীলমোহর থাকবে এবং এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, এর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন করিবার, অধিকারে রাখিবার ও হস্তান্তর করিবার ক্ষমতা থাকবে এবং ইনস্টিটিউট ইহার নিজ নামে মামলা দায়ের করতে পারবে এবং উক্ত নামে ইহার বিরুদ্ধেও মামলা করা যাবে।
গাজীপুরে এর প্রধান কার্যালয় হবে উল্লেখ করে আইনে বলা হয়েছে, তবে সরকারের অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশের যে কোনো স্থানে আঞ্চলিক কেন্দ্র ও উপকেন্দ্র স্থাপন করতে পারবে।
উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে ইনস্টিটিউটের কার্যাবলী সম্পর্কে বলা হয়েছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠনসমূহের সহযোগিতায় ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গবেষণা কর্মসূচি গ্রহণ করা যাবে এজন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক গবেষণাগার ও লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা যাবে। ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত ধানের নতুন জাত ও প্রযুক্তিসমূহের প্রদর্শনী এবং উক্ত বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণের জন্য এলাকা নির্ধারণ ও স্কিম গ্রহণ করতে পারবে। ধান উৎপাদনে উন্নত প্রযুক্তির উপর সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী, কৃষক ও দেশি-বিদেশি গবেষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারবে। স্নাতকোত্তর গবেষণার সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করাসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞের দ্বারা চিহ্নিত সমস্যাবলী সম্পর্কে মতবিনিময়, সাম্প্রতিক উদ্ভাবনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ওয়ার্কশপের আয়োজন করতে পারবে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবিলায় ধান গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করা, ধান গবেষণায় জীব প্রযুক্তি (বায়োটেকনোলজি) প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ ও পোকা-মাকড় প্রতিরোধ এবং খরা, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা, ঠা-া ও তাপসহ বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ সহিষ্ণু ধানের জাত ও ধান উৎপাদন বিষয়ক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা, ধানের জার্ম প্লাজম সংগ্রহ, সংরক্ষণ, মূল্যায়ন এবং উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা ও মেধাস্বত্ব¡ নিশ্চিত করা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, পুষ্টি, সাপ্লাই ও ভ্যালুচেইন এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়নের উপর গবেষণা পরিচালনা করা, উদ্ভাবিত ধানের জাতসমূহের দ্রুত বিস্তারের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্রিডার বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ করা, গবেষণা, শিক্ষা ও সম্প্রসারণে আইসিটি এর প্রয়োগ করা, স্থানীয়ভাবে কৃষক কর্তৃক ব্যবহৃত বিভিন্ন ধানের জাত ও প্রযুক্তি যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন সাধন করা, গবেষণা সংক্রান্ত মনোগ্র্রাফ, বুলেটিন, শস্য-পঞ্জিকাসহ অন্যান্য তথ্য প্রকাশ করা, সরকার কর্তৃক সময় সময় প্রদত্ত নির্দেশনা সাপেক্ষে, উহার উপর অর্পিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করাসহ প্রয়োজনীয় অন্য যে কোনো কার্য সম্পাদন করবে।
একজন মহাপরিচালক (যিনি বোর্ডের চেয়ারম্যানও হবেন) কে প্রধান করে ১২ সদস্যবিশিষ্ট ইনস্টিটিউটের জন্য একটি বোর্ড গঠনের কথা বলা হয়েছে আইনে। বোর্ড গঠনের বিষয়ে আরও বলা হয়েছে, ইনস্টিটিউটের পরিচালকগণের মধ্য থেকে একজনকে বোর্ডের সদস্য সচিব করা হবে। এছাড়াও বোর্ডে অর্থ বিভাগ ও কৃষি বিভাগ, মনোনীত দু’জন উপ-সচিব পদমর্যাদার প্রতিনিধি, কাউন্সিলের মনোনীত উহার অন্যূন পরিচালক মর্যাদার একজন প্রতিনিধি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অন্যূন পরিচালক পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের মনোনীত ধান গবেষণার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট ইনস্টিটিউটের দুইজন জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী, সরকার কর্তৃক মনোনীত ইনস্টিটিউটের বাইরের দুইজন প্রথিতযশা বিজ্ঞানী (একজন সমাজ বিজ্ঞানী ও একজন ইনস্টিটিউটের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী), কৃষি সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত দু’জন প্রতিনিধি (একজন কৃষক ও একজন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি) কে বোর্ডের সদস্য করা হবে। ২ উপধারা (১) এর দফা (চ হইতে জ)’র অধীন মনোনীত সদস্যরা তিন বছরের জন্য বোর্ডের সদস্য পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। তবে এতে শর্ত আছে যে, মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে সরকার বা ক্ষেত্রমত ইনস্টিটিউট যে কোনো সময় কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে বোর্ডের সদস্যকে সদস্যপদ হতে অব্যাহতি দিতে পারবে এবং মনোনীত কোনো সদস্য চাইলে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রের মাধ্যমে পদত্যাগ করতে পারবেন।
বোর্ডের কার্যাবলী সম্পর্কে বলা হয়েছে, গবেষণার বিষয়বস্তু নির্ধারণ, ইনস্টিটিউটের কার্যাবলীর তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনা দেয়া, নীতিগত বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান, প্রস্তাবিত নীতিমালা ও কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন, সরকার বা অন্য কোনো উৎস হতে অনুদান গ্রহণের প্রস্তাব অনুমোদন করা, ঋণ গ্রহণের প্রস্তাব অনুমোদন, সরকারের অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের অনুমোদনসহ ফেলোশিপ প্রদানের প্রস্তাব অনুমোদন করতে পারবে। সম্পাদনা: আজাদ হোসেন সুমন