নরসিংদীতে বাসের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১৩ যাত্রী ও সারাদেশে নিহত ২০
মফস্বল ডেস্ক: নরসিংদীর বেলাবোতে বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই পরিবারের ৭ জনসহ ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাণ গেছে আরও ৭ জনের। এ নিয়ে গতকাল রোববার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মোট ২০ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
নরসিংদী: নরসিংদীর বেলাবোতে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের ১৩ যাত্রী নিহতসহ আহত হয়েছে ৩৩ যাত্রী। রোববার সকাল পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের দড়িকান্দী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হবিগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী অগ্রদুত পরিবহনের একটি যাত্রীবাসের সঙ্গে বিপরীত দিকে আসা একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের ১২ যাত্রী নিহত হন। নিহতরা হলেন কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার ছাতিরচর গ্রামের মানিক মিয়া, তার স্ত্রী হালিমা বেগম, শ্যালিকা জুম্মা বেগম, ইসান, আরেক পরিবারের মানিক মিয়া (৪৫), তার স্ত্রী মাফিয়া (৩৫), ছেলে অন্তর (১০), যাত্রী হিরা মিয়া (৩৫), আমেনা বেগম (৩২), জান্নাত (৩৫), ও নাজমুল (১০)। পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শারমিন (১০) নামে এক শিশু। এ ঘটনায় আরও অন্তত ৩৩ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে মাজেদ (২০) আসিফ (১০) লিপি (৩৫), সিরাজুল ইসলাম (৫৫) ও কাউছার মিয়াকে (৩০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও পঙ্গু হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যদেরকে নরসিংদী ও ভৈরবের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা সকলেই রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে নিজ বাড়ি কিশোরগঞ্জের নিকলি যাচ্ছিলেন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানা গেছে।
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের ঘাটাইল ও মির্জাপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্রসহ দুজন নিহত হয়েছেন। গতকাল সকালে ঘাটাইল উপজেলার পেঁচারআটা মোড় ও মির্জাপুর উপজেলার নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন মির্জাপুর উপজেলার জামুকী ইউনিয়নের বানিয়ারা গ্রামের কুদরত ই খুদার ছেলে মীর আহমেদ সুজন (২৮) ও ঘাটাইল উপজেলার রাপুরা গ্রামের বুলবুলের ছেলে শহীদ বক্স (১২)। শহীদ বক্স ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সকালে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় ট্রাকচাপায় মারা যায় শহীদ। এদিকে মির্জাপুরের নতুন বাইপাস এলাকায় ট্রাকচাপায় নিহত হন মোটরসাইকেল আরোহী সুজন। গতকাল সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
গাজীপুর: গাজীপুরে রোববার ট্রাকচাপায় ১ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছে। নিহত আসিফ মাহমুদ স্বাপন (২৮) ঢাকার শেওড়াপাড়ার আক্তার হামিদের ছেলে। রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মোটরসাইকেল আরোহী আসিফ মাহমুদ কালিয়াকৈর থেকে চন্দ্রা যাওয়ার পথে ট্রাকচাপায় ঘটনাস্থলেই মারা যান।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ট্রাকচাপায় কবির হোসেন (১৪) নামের এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। রোববার সকালে শৈলকুপা উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নের চরবাখরবা গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত কবির হোসেন ওই গ্রামের টুটুল হোসেনের ছেলে ও কাতলাগাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র। সকালে একটি বালুবাহী ট্রাক তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই সেই নিহত হয়।
সাভার :সাভারে গার্মেন্টস শ্রমিকবাহী মিনি বাস উল্টে হেলপার নুরু মিয়া (৩০) নিহত হয়েছে। এ সময় ১৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। রোববার সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সাভারের গেন্ডা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে সাভারের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কমল মুন্সিরহাট এলাকায় বাসের ধাক্কায় পমি আক্তার (১৭) নামে এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকাল ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত পমি আক্তার উপজেলার কমল মুন্সিরহাট ফকিরপাড়া এলাকার মোহাম্মদ আবদুল গফুরের মেয়ে। সকালে কোচিংয়ে যাওয়ার সময় বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয় কলেজছাত্রী পমি আক্তার। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় অটো রিকশার সঙ্গে ধাক্কা লেগে মো. রিফাত নামে এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকালে উপজেলার কুটি ইউনিয়নের লেশিয়ারা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত রিফাত উপজেলার মেহারী ইউনিয়নের যমুনা গ্রামের মো. ফারুক মিয়ার ছেলে।
শোকে স্তব্ধ হাতিরচর: কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি নাজমুল শাফায়েত জানান, নরসিংদীতে নিহত ১১ জনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ছাতিরচরে। নিহতদের মধ্যে এক পরিবারের চারজন ও অন্য পরিবারের তিন সদস্য রয়েছেন। নিহতদের বাড়িতে এখন শুধুই কান্নার রোল চলছে। তাদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা। নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত ছাতিরচরের কয়েকশ পরিবার জীবিকার সন্ধানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। প্রতি বছর বিভিন্ন উৎসবে তারা গ্রামে ফিরে আসেন। ঢাকার কামরাঙির চর এলাকায় আশ্রয় নেওয়া এমনি কয়েকটি পরিবার গ্রামে ফিরছিলেন ছাতিরচরের মেলায়। মাইক্রোবাসযোগে ফেরার পথে নরসিংদীতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১৩ জন। এরমধ্যে ১১ জনের বাড়িই নিকলী উপজেলার ছাতিরচরে। দুর্ঘটনার খবর বিভিন্ন মাধ্যমে এলাকায় পৌঁছে যায় কিছুক্ষণের মধ্যেই। মর্মান্তিক এ খবরে কান্নার রোল পড়ে যায় এলাকায়। শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। মরদেহগুলো গতকাল বিকালে এলাকায় পৌঁছলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। হাজারো মানুষ ছাতিরচর ঘোড়াউত্রা নদীর তীরে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন মরদেহের জন্য। নৌকা থেকে মরদেহ নামানোর সঙ্গে সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েন সকলেই। নিহতরা দিনমজুর ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ। কোনো কোনো পরিবার তাদের উপার্জনক্ষম একমাত্র সদস্যকে হারিয়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসী অসহায় পরিবারগুলোকে সহায়তা করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। সম্পাদনা: মুরাদ/শাহীন