রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলের আলোচনা নির্বাচন ও কমিশন নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সরকার নিয়ে হয়নি
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠন ও এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ৩১টি রাজনৈতিক দল সংলাপ করেছে। সেই সংলাপে বিভিন্ন দল বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। তবে সেই সব সংলাপে নির্বাচন, নির্বাচন পদ্ধতি, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ এবং ওই সময়ের সরকারের কাজ নিয়েই কথা হয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়নি। এই বিষয়টি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি সব দলকে ডেকেছিলেন নির্বাচন কমিশন কেমন তারা চান, কিভাবে হবে এই সব বিষয়ে কথা বলতে। বিভিন্ন দল তাদের কথা বলেছে। আর অনেকে লিখিতভাবে প্রস্তাব দিয়েছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দিয়েছেন বলে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, তারা কি রূপরেখা দিয়েছেন এই ব্যাপারে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব বলেন, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে কোনো আলোচনা করেননি। কারণ সেটা ওই সময়ের প্রসঙ্গও ছিল না।
সে সময় নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে আওয়ামী লীগ কোনো আলোচনা করেনি আর রাষ্ট্রপতিও তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা করেননি। এটা আলোচনার বিষয়ও ছিল না। আওয়ামী লীগ কী রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিত একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। সেখানে নির্বাচনকালীন সরকারের কোনো কথা আছে বলে আমার জানা নেই।
বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ যদি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দিবেনই তাহলে বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে সেটা বললেন না কেন? আর মিডিয়াতে তা প্রকাশ হলো না কেন? এতদিন পরে এটা বলছেন কেন? এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব বলেন, এটা আমরা বলতে পারবো না। এটা আওয়ামী লীগের তরফ থেকে বলতে পারবে। তারা রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি নিয়ে কি কথা বলেছেন সেটা তারাই ভালো জানেন।
এদিকে সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতির কাছে গণতন্ত্র ও নির্বাচন: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শিরোনামে আওয়ামী লীগ প্রস্তাব দেয়। সেখানে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যা যা প্রয়োজন সেই প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া হয়। নির্বাচনকালীন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত এবং নির্বাচনকালীন সরকারের কর্মপরিধি কেবল আবশ্যকীয় দৈনন্দিন কার্যাবলির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কথাও বলা হয়।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতির কাছে আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত ও কমিশনারদের নিয়োগের বিষয়ে ও নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে প্রস্তাব দেয়। সেখানে নির্বাচনকালীন সরকারের কোনো রূপরেখা ছিল না। তবে সেখানে নির্বাচনকালীন সরকার যে রুটিন ওয়ার্ক করবে এবং কিভাবে কমিশনকে সহায়তা করবে তা বলা ছিল। সেখানে সরকারের রূপরেখা বলতে যা বোঝায় সেটা নেই।
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আওয়ামী লীগ যে প্রস্তাব দেয়, সেখানে ই-ভোটিংয়ের প্রস্তাব দেয় দলটি। জনমানুষের ভোটাধিকার অধিকতর সুনিশ্চিত করার স্বার্থে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিং প্রবর্তন করার প্রতি জোর দেয় আ্ওয়ামী লীগ। আইন করা প্রসঙ্গে আরও বলেন, আমাদের প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেছি। সেই প্রস্তাব কতখানি যুক্তিযুক্ত, বাস্তবসম্মত, তা রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। তিনি তা ঠিক করবেন। সেটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অধিকার আমাদের নেই। বিএনপির ব্যাপারে বলেছিলেন, বিএনপি কী বলল, কী করল, এটা বিবেচনার বিষয় নয়।
বঙ্গভবনের সূত্র জানায়, ঘটনা যা ঘটেছে এটা আপনারা সবাই জানেন। এর বাইরে আমার আর কিছু জানা নেই।
বৈঠক শেষ হওয়ার পর আলাদা করে প্রধানমন্ত্রী ও ওবায়দুল কাদের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলেছিলেন কিনা ও ওই সময়ে আলোচনা হয়েছিল কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, এমন কোনো বৈঠক হয়নি। তারা সবাই এক সঙ্গেই বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষ করে চলে গেছেন। সম্পাদনা: এনামুল হক