আবুল হোসেনের পরিবারের ব্যাংক হিসাব নিয়েছিল বিশ্বব্যাংক
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী: সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী এই দুজনের ব্যাপারে অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য বিশ্বব্যাংক সব ধরনের চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি। অভিযোগ প্রমাণের জন্য দুজনের ব্যাংক হিসাব, নামে-বেনামের ব্যাংক হিসাব ছাড়াও কি কি সম্পদ আছে এর খোঁজ খবর করে। তাদের পরিবারের সদস্যদের নামেও ব্যাংক হিসাবের তথ্য সংগ্রহ করে। এছাড়া সৈয়দ আবুল হোসেনের পরিবারের সদস্য ছাড়াও তার অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব ও তার পরিবারের বাইরেও তার ঘনিষ্ঠজনদের ব্যাংক হিসাব নেওয়া হয়েছিল। মালয়েশিয়ায় একটি মার্কেটে তার মালিকানা আছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে সেখানেও তারা অনুসন্ধান চালায়। কিন্তু কোনো প্রমাণ পায়নি। এখানেই শেষ নয় মেয়ের জামাইয়ের পরিবারেরও ব্যাংক হিসাব নেওয়া হয়েছিল। আর এটা সৈয়দ আবুল হোসেনকে পারিবারিকভাবে বিব্রত করেছিল।
এ ব্যাপারে সৈয়দ আবুল হোসেন জানান, সব অভিযোগ মিথ্যে ছিল এটা এখন দেশে-বিদেশে সব জায়গায় প্রমাণিত। কিন্তু এমন একটা সময় গেছে যখন আমাকে, আমার পরিবারের লোকজনকে, আমার বন্ধুকে, তার পরিবারকে অনেক খারাপ সময় পার করতে হয়েছে। বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে। আমার, আমার স্ত্রী, কন্যাদের পাশাপাশি আমার মেয়ের জামাইয়ের ব্যাংক হিসাব নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আমার আরও ঘনিষ্ঠজনদের ব্যাংক হিসাবের নথি নেওয়া হয়েছে। এটা একটা মানুষের জন্য কত বিব্রতকর। তাদের ধারণা ছিল টাকা নিয়ে আমার মেয়ের জামাইয়ের ব্যাংক হিসাবে রেখেছি। এটা আমি ভাবতে পারি না যে তারা কত খারাপ চিন্তা করেছে যে, শ্বশুর দুর্নীতি করে মেয়ের জামাইয়ের হিসাবে টাকা রেখেছে? এটা কি কোনোদিন সম্ভব? তারপরও এভাবে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আরও অনেকভাবে আমাকে টেনশন, অস্থিরতার মধ্যে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন গণমাধ্যমগুলোতে আমার বিরুদ্ধে লেখা হয়েছে। এতে করে আমার সুনাম যেমন ক্ষুন্ন করা হয়েছে তেমনি পরিবারের সুনাম ক্ষুন্ন করা হয়েছে। অন্য কোনো মানুষ হলে এসব চাপ সহ্য করতে পারতো না। হৃদযন্ত্রের ক্রিযা বন্ধ হয়ে মারা যেত। আমি জানতাম সত্যিটা। এ কারণে আমি মারা যাইনি। কারণ আমি কোনো দুর্নীতি-ষড়যন্ত্র করিনি। কোনো পরিকল্পনাও করিনি। সহায়তাও করিনি। কোনো টাকা লেনদেনও হয়নি। সত্যিটা প্রমাণের জন্য কেবল অপেক্ষায় ছিলাম সময়ের। কারণ জানতাম একদিন সত্য বের হয়ে আসবে। এখন তো সত্যিটা বের হলো।
আমাকে অনেকেই বলছে যারা আমার বিরুদ্ধে কাজ করেছে, লিখেছে, সত্য মিথ্যা বিচার করেনি তাদের বিরুদ্ধে মানহানীর মামলা করি। কিন্তু মানহানীর মামলা আমি করতে চাই না। মামলা করে কি আর বিচার হবে? কারণ ওদের বিচার আল্লাহ ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছে। যারা জীবিত আছে তারা মৃত্যুর আগে ইহজগতেই মিথ্যে বলার যন্ত্রণা ভোগ করে যাবে। আমি সেটা দেখে যেতে চাই। তাছাড়া আমার পীর সাহেবও বলেছিলেন, আবুল হোসেন আর আবুল হাসানের কিছুই হবে না। কিন্তু যারা তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে প্রচারণা চালাচ্ছে তাদের বিচার হবে এবং সেই দিন বেশি দূরে না। আমি দেখছি একে একে বিচার শুরু হয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলার পর অভিযোগ প্রমাণের জন্য মরিয়া ছিল। কোনোভাবেই যাতে অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণ না হয় সেই চেষ্টাও করে। এই জন্য বাংলাদেশের সরকারের উপর, প্রধানমন্ত্রীর উপর, দুদকের চেয়ারম্যান, কমিশনার ও তদন্ত কর্মকর্তাদের উপর চাপ ছিল। তারা যত বারই বলেছে দুর্নীতি হয়নি কিন্তু বিশ্বব্যাংক বিশ্বাস করেনি। সেই সঙ্গে বিশ্ব্যাংকের প্রতিনিধি ওকাম্পো বাংলাদেশ সফর করে দুদকের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন এই ঘটনায় বিশ্বব্যাংক পুরো তদন্ত চায়। আর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট দেখেই তারা এ ব্যাপারে অর্থ ছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে। সম্পাদনা: এনামুল হক