গ্রামীণ ব্যাংকের ‘ভিক্ষুক’ সদস্য সাড়ে ৭৭ হাজার ১৮ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ
হাসান আরিফ: ভিক্ষুকদের ঋণ নেওয়ার জন্য কোনো জামানতের প্রয়োজন হয় না। এমনকি ঋণের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগও করা হয় না। কেউ যদি প্রথম পর্যায়ে সামর্থ্য অর্জন করতে না পারে তাকে পরবর্তীতেও ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়। সবচেয়ে বড় সুবিধা, এই প্রকল্পের আওতায় ভিক্ষুকদের ঋণ ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও নেই।
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ভিক্ষুকদের ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নিয়োজিত করতে গ্রামীণ ব্যাংক চালাচ্ছে ভিক্ষুকদের জন্য সহজে ফেরতযোগ্য ঋণ কার্যক্রম। ইতোমধ্যে প্রায় ৭৭ হাজার ৫৬৭ ভিক্ষুককে এই প্রকল্পের আওতায় ১৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে। আদায় হয়েছে ১৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
গ্রামীণ ব্যাংকের সংগ্রামী (ভিক্ষুক) সদস্য কর্মসূচি নামে পরিচালিত এই প্রকল্পে ভিক্ষুকরাও খুব আগ্রহ নিয়ে এই প্রকল্প থেকে ঋণ নিচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ভিক্ষুকদের বলা হয় বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করতে এবং একই সঙ্গে ভিক্ষাবৃত্তিও চালিয়ে যেতে। এভাবে ভিক্ষুকদের বলা হলেও তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে আর ভিক্ষা করে না। বরং হাতের পণ্য বিক্রি করার চেষ্টা করে। এই প্রকল্পের আওতায় এখন হাজার হাজার ভিক্ষুক স্বাবলম্বী হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক তাদের বিশেষ টাস্কফোর্স-৪ এর অধীনে ২০০২ সালের ১২ জুলাই নীলফামারী জোনের আলোকঝাড়ি খানসামা শাখার সংগ্রামী (ভিক্ষুক) মুক্তকরণ কর্মসূচি শুরু করে।
সংগ্রামী সদস্যদের ঋণ ছাড়াও তাদের আরো অনেক সহায়তা দেওয়া হয়। যেমন শীতের সময় লেপ, চাদর, মশারি এবং রোদ-বৃষ্টিতে কাজ করার জন্য ছাতা দেওয়া হয়। প্রথমে গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি দোকানে ভিক্ষুকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। দোকানদারকে বলা হয় দুই হাজার টাকা পর্যন্ত যে কোনো জিনিস নিতে চাইলে যেন দেওয়া হয় তাকে। টাকার গ্যারান্টি নেয় গ্রামীণ ব্যাংক। এভাবে দোকানদারের কাছ থেকে ভিক্ষুক সদস্যরা পছন্দ অনুযায়ী জিনিস কিনে নেয় এবং তা বিক্রি করে। এছাড়া ভিক্ষুকদের ঘরের আসবাবপত্রের জন্যও অর্থসহায়তা দেওয়া হয়। গ্রামীণ ব্যাংকের অন্যান্য নিয়ম এই প্রকল্পের জন্য প্রযোজ্য নয়। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে তাদের মুখে হাসি ফোটাতেই এই কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এটি অন্য যে কোনো ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির চেয়ে ভিন্নতর। এতে যেমন কোনো জামানত নেই, তেমনি ঋণ ফেরতের বাধ্যবাধকতাও নেই। এই প্রকল্পের আওতায় ভিক্ষুকরা সাধারণ সবজি, ডিম, কলা, চকলেট, নিকন্যাক প্রভৃতি বিক্রি করে থাকে।
জানা গেছে, এই প্রকল্পের সামান্য ঋণের টাকা তাদের মনের জোর ও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। মানুষ হিসেবে আত্মসম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন তারা। তারা নিজের সব অসহায়ত্ব মেলে ধরে অন্যের করুণা লাভের জন্য হাত পাততে ক্রমেই সঙ্কোচ বোধ করছে। এর এই সঙ্কোচ যতোই বাড়ছে ততো দ্রুত ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে কেউ নিজের রোজগারে চলছে, কেউ বা আবার গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়মিত সদস্যে পরিণত হয়ে সম্মানজনক জীবনযাপন করতে শুরু করেছেন।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ভিক্ষাবৃত্তিকে আইন দিয়ে বিবেচনা করা যায় না। বেঁচে থাকার তাগিদেই কেউ কেউ ভিক্ষা করে। রাষ্ট্র প্রত্যেক নাগরিককে কাজ দিতে পারলে দেশে ভিক্ষুক থাকতো না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রত্যেক মানুষের কাজের নিশ্চয়তা প্রদান করা। সম্পাদনা: এনামুল হক