উম্মুল ওয়ারা সুইটি : আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তোলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিশ্বব্যাংককে মাফ চাইতে হবে। তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে ঋণদাতা বৈশ্বিক সংস্থাটির কাছে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
গতকাল রোববার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংককে বাংলাদেশের কাছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে এবং এই মামলার আসামিদের কাছে মাফ চাইতে হবে। যদি মাফ না চান, অর্থমন্ত্রীকে বলব, তিনি যেন প্রটেস্ট নোট পাঠান।
মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন স্থগিতের পর তাদের ফেরাতে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে, ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমানকে, গ্রেফতার করা হয়েছিল সেতু বিভাগের তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে।
মন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা নিজেরাই তদন্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিষয়টি বিবেচনা করে সরকার তা নাকচ করে দিয়েছিল। তিনি বলেন, ওইদিন রাতেই বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টরের বাসায় কার কার সঙ্গে ডিনার করেছিলেন, তার বিস্তারিত আমার কাছে আছে। এটা তিনি বলবেন বলেও জানান। তিনি বলেন, ওই সময় দুদকের এফআইআরে আবুল হোসেনের নাম নেই কেন জানতে চেয়েছিল বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদল। ঝগড়াই প্রায় হয়ে গেল। আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তদন্তে যা বেরোয়, তা-ই হবে। হঠাৎ শুনলাম কানাডায় মামলা হয়েছে।
আনিসুল হক বলেন, ওই ঘটনায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তারা মামলা করতে পারবেন। আইনজীবীর কাছে গেলে তারা বলে দেবেন কোথায় অধিক্ষেত্র হয়। এখানে না ওখানে। আনিসুল হক বলেন, এই ঘটনায় বাংলাদেশের জন্য নতুন পথ তৈরি হয়েছে। ঋণ ছাড়াই পদ্মা সেতু করতে পেরেছি।
উল্লেখ্য,২০১৩ সালের জানুয়ারিতে এই প্রকল্পে বাংলাদেশের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বিশ্বব্যাংক বাতিল করার পর দুর্নীতির ওই ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন সেই সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন। অভিযোগ ছিল সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। তবে তাদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে দুদকের পক্ষ থেকে সে সময় জানানো হয়। এরপর বিশ্বব্যাংক ফিরলেও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত নিয়ে সরকারের সঙ্গে আবার মনকষাকষি তৈরি হয়। ২০১১ সাল থেকে একের পর এক জটিলতার পর ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাংককে বাদ দিয়ে প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এদিকে সংসদে এ আলোচনার সূত্রপাত করেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে ক্যানভাসে নেমে গেল, বলল দুর্নীতি হয়েছে। তিনি এসময় আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিবৃতি চান।